জার্নি বাই ট্রেন, ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি-
হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই, আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি ভ্রমণ পোস্ট শেয়ার করবো। আজকে আমি ঢাকা থেকে ট্রেনে চড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এসেছি। আজকে আসার পথে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো।
আমার ফ্যামিলি গত ১২ই সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আসে তার ইনকোর্স পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। ইনকোর্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ অতিক্রম হয়ে গেছে। সেজন্য ফ্যামিলিকে ঢাকাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকদিন যাবত চিন্তা করতেছিলাম। তাছাড়া অনেকদিন ধরে বাড়িতে আসা হয় না। শনি এবং রবি দুইদিন ছুটি নিয়ে বৃহস্পতিবারে বিকালে আসার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করলাম। সন্ধ্যা পাঁচটা ৪৫ মিনিটে তিতাস ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। আমি অফিস থেকে চারটার সময় বের হয়ে সেই ট্রেনে আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু গতকাল বিকাল বেলা এত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে যে রাস্তাঘাট সব ডুবে গেছে। যার ফলে বৃহস্পতিবারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবার চিন্তাভাবনা ছেড়ে দিলাম। শুক্রবার সকাল বেলা ৯ঃ৪৫ মিনিটে তিতাস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার জন্য নিয়ত করলাম।
আজকে সকাল সাড়ে সাতটার সময় ঘুম থেকে উঠে গেলাম। তারপর গোসল করে ফ্রেশ হয়ে কাপড়-চোপড় পরে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। আজকে শুক্রবার হওয়ার কারণে রাস্তা ঘাটে তেমন কোন জ্যাম পড়ে নাই। ৯ঃ২০ মিনিটে আমি কমলাপুর স্টেশন চলে আসলাম। তিতাস ট্রেনের টিকেট ট্রেন ছাড়ার ২ ঘন্টা আগে দেওয়া হয়। কমলাপুর গিয়ে দেখলাম তিতাস ট্রেনের কাউন্টারের সামনে লম্বা একটি লাইন। আমি টিকিটের জন্য লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। পিঁপড়া যেমন হাটে ঠিক তেমনভাবে টুকটুক করে লাইন এগিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু আমার ভাগ্য বরাবরের মতোই খারাপ। আমার সামনে আর তিনজন লোক আছে এমন সময় টিকেট কাউন্টার থেকে বলে দেওয়া হলো তিতাস ট্রেনের সিট শেষ। খবরটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। এতক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে এখন শুনতে হলো সিট শেষ। চিন্তা করলাম দাঁড়িয়েই ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবো। কারণ পরবর্তী ট্রেন আবার বারোটার সময়। কোনভাবেই এতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবোনা। আর জ্যামের কারণে বাসে ও যাওয়া যাবে না। সেজন্য কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
একটি স্ট্যান্ডিং টিকেট নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া তিতাস ট্রেন টি ৭ নাম্বার লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দ্রুত ট্রেনের দিকে এগিয়ে গেলাম। প্রথমে আমি চিন্তা করেছিলাম যেহেতু আমার টিকিটের মধ্যে সিট নাম্বার নেই, সেহেতো আমি পিছনের দিকে বসবো। তখন আবার চিন্তা করলাম পিছনের দিকে মানুষের চাপ পড়ে বেশি, সুতরাং সামনের দিকে যাওয়া যাক। হাটতে হাটতে সামনের দিকে গিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনের পরে দুই নাম্বার বগিতে প্রবেশ করলাম। সেই বগিতে গিয়ে দেখি অনেকগুলো সিট ফাঁকা। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে ৫৬ নাম্বার সিটের মধ্যে বসে গেলাম। আর চিন্তা করলাম এই সিটের মালিক আসলে আমি তাকে সিট ছেড়ে দেবো। আজকে যথা সময়ে তিতাস ট্রেনটি ছেড়ে দিল। এক মিনিটও লেট করে নি। যেহেতু ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে আর আমার সিটের মধ্যে মালিকও আসে নাই, সেজন্য শিওর হয়ে গেলাম বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত বসে যেতে পারবো। কারণ এর আগে আর কোন স্টপেজ নাই।
বিমানবন্দরে গিয়ে দেখি প্রচুর মানুষ। তিতাস ট্রেনের যাত্রীর অভাব নেই। দেখতে দেখতে সব যাত্রীর ট্রেনের মধ্যে প্রবেশ করলো। কিন্তু তখনও চেয়ে দেখলাম আমার সিটের মালিক আসে নাই। তখন চিন্তা করলাম হয়তো টঙ্গী স্টেশন থেকে উঠবে। এভাবে এক সময় স্টেশনে ছেড়ে চলে গেল। আমার সিটের মালিক আসে নাই। শহর গ্রাম পেরিয়ে ট্রেন চলতে লাগলো ঝকঝক করে। দেখতে দেখতে নরসিংদী স্টেশন চলে আসলো। ভাবলাম হয়তো নরসিংদী স্টেশন থেকে ওই লোক উঠবে। কিন্তু না, নরসিংদী স্টেশন থেকে অনেক যাত্রী উঠলেও আমার সিটের ভদ্রলোক আসে নাই। আমি ওই লোকের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এভাবে আসতে আসতে আরিখোলা, জিনারদি,মেথিকান্দা স্টেশন পেরিয়ে ভৈরব স্টেশন চলে আসলো। কিন্তু ওই লোকের দেখা পেলাম না। আমি সিটের মধ্যেই বসে রইলাম। ভৈরব স্টেশন ছেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতে ৩০ মিনিট সময় লাগে। বারোটা ৩৫ মিনিটে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে নামলাম। কিন্তু সেই ভদ্রলোকের দেখা আর পেলাম না।
কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পেয়েছি কিন্তু সিট পাই নাই। আর আজকে আমার ভাগ্য অনেক ভালো। টিকিটের মধ্যে সিট নাম্বার না পেলেও সারা রাস্তায় আমি সিটের মধ্যে বসে এসেছি। সৃষ্টিকর্তা কোন সময় কাকে নিয়ে কিভাবে খেলে সেটা বোঝা বড় দায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে নেমে অটো নিয়ে চলে আসলাম কাউতলী বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে যাবতীয় কিছু কেনাকাটা করে একটি সিএনজি নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম। আজকের জার্নি টা অনেক ভালো হয়েছে। ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত কোথাও কোন জ্যামে আটক হতে হয়নি।
অবশেষে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে পোস্ট লিখতে বসলাম। বন্ধুরা এই হলো আমার আজকের ব্লগ। খুব সুন্দর ভাবে ভ্রমণের বর্ণনা দিলাম। আশা করি সবার কাছেই ভালো লাগবে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | realme-53 |
নাম | জার্নি বাই ট্রেন, ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া।। |
স্থান | কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন , ঢাকা, বাংলাদেশ। |
তারিখ | ২৭/০৯/২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
রেল ভ্রমণ করলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি হয়।আর বিশেষ করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সব সময় লোকজনের ভিড় লেগে থাকে। এটা আমার কাছে সত্যি অনেক বেশি ভালো লাগে। আপনি দেখছি খুবই সুন্দর ভাবে, ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রেন ভ্রমণ করেছেন। আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
জী ভাই ট্রেন ভ্রমণ হলো, সব থেকে নিরাপদ এবং আরামদায়ক ভ্রমণ। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমারও পছন্দ ট্রেন জার্নি। বাস জার্নি আমি করতে পারি না। আর রাস্তায় এতো জ্যাম থাকে যে,বাস জার্নি করতে ভালো লাগে না।যাইহোক বেশ মজার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। স্ট্যান্ডিং টিকেট কেটে সম্পূর্ণ পথ বসেই গেলেন। একেই বলে ভাগ্য। ধন্যবাদ অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
সব সময় ট্রেন জার্নি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। আজকের অভিজ্ঞতাটা বেশ মজার ছিল।
আমারও পছন্দ ট্রেন জার্নি। বাস জার্নি আমি করতে পারি না। আর রাস্তায় এতো জ্যাম থাকে যে,বাস জার্নি করতে ভালো লাগে না।যাইহোক বেশ মজার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। স্ট্যান্ডিং টিকেট কেটে সম্পূর্ণ পথ বসেই গেলেন। একেই বলে ভাগ্য। ধন্যবাদ অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
হঠাৎ করে ভাগ্য এত সুপ্রসন্ন হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। ধন্যবাদ।
আজকে আপনি লং জার্নি করেছেন। চ্যাটিংয়ে বলেছিলেন জার্নিতে রয়েছেন। যেখানে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছেন। আর সেই জার্নির সুন্দর অনুভূতি আমাদের মাঝে ব্যক্ত করেছেন তাকে ভালো লাগলো।
আজকের জার্নিটা বেশ মজার ছিল ভাইয়া। ধন্যবাদ।