হতাশার পদ্ম বিল
আজ--০৭ আশ্বিন | ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |রবিবার | শরৎকাল|
আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
- প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
- হতাশার পদ্ম বিল ।
- আজ--০৭ইআশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
- রবিবার
তো চলুন শুরু করা যাক...!
শুভ দুপুর সবাইকে......!!
দীর্ঘ অনেকদিন পরে বাসায় গিয়েছিলাম এটা হয়তোবা আপনারা অনেকেই জানেন কারণ আমি বাসায় যাওয়ার গল্পটা আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছিলাম। আপনারা অনেকেই হয়তো বা সেটা দেখে বুঝতে পেরেছিলেন কিছুদিন আগে বাসায় গিয়েছিলাম যেহেতু অনেকদিন পর বাসায় গিয়েছি তার মানে বুঝতেই পারছেন যে ঘুরাঘুরিটা অনেক বেশি হয়েছে। বিশেষ করে বড় ভাইদের সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো এখন আমি অনেক বেশি মিস করছি। বাসায় গেলেই সব সময় ঘুরাঘুরির উপরেই থাকি পাঁচ থেকে ছয় জন মানুষ আর তিন থেকে চারটা মোটরবাইক নিয়ে এদিকে ওদিকে ঘুরাঘুরি করি সব সময়। সত্যি বলতে নিজের এলাকায় ঘোরাঘুরি করার মাঝে এতটা বেশি মজা এবং আনন্দ রয়েছে যে এটা কাউকে বলে হয়তো বা বোঝানো সম্ভব নয়। কারণ ছোটবেলা থেকেই যেখানে বেড়ে ওঠা সেখানে সময় কাটাতে কে না পছন্দ করে আপনারাই বলুন। যেহেতু এখন বর্ষা মৌসুম আর এই বর্ষা মৌসুমে আপনারা অনেকেই জানেন যে ছোটখাটো নদী গুলো সেই সাথে ছোট ছোট যে সকল বিল রয়েছে সেই বিলে অনেক পানি হয়ে যায়। আমাদের বাসার পাশে ছোট্ট একটা নদী রয়েছে যদিও নদীতে এবার খুব একটা বেশি পানি হয়নি তবে দূরদূরান্তের বিল গুলোতে পানি একদম ভরপুর ছিল। ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে অনলাইনে দেখেছিলাম আমাদের জেলার পাশের জেলায় অনেক বড় কয়েকটা পদ্মবিল রয়েছে। অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবার বাসায় গেলে সেই পদ্মবিল দেখতে যাব।
যেহেতু সঠিক সময়ে বাসায় গিয়েছিলাম তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে নির্দিষ্ট একটা দিনে আমরা পদ্মবিল দেখতে বের হব। মূলত অনলাইন থেকে পদ্মবিল দেখেই অনেক বেশি ভালো লাগছিল, অনলাইনে দেখেছিলাম অনেক বড় একটা বিল আর সেই বিলের মাঝে ফুটে আছে পদ্ম অনেকেই সেখানে গিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর ভিডিও ফটোশুট করে আপলোড করছে। বিশেষ করে বিকেল বেলার দৃশ্যটা অনেক বেশি রোমাঞ্চকর এরকম দৃশ্য দেখেই পদ্মবিল দেখতে যাওয়ায় অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। বাসায় যাওয়ার পরের দিন সকলে মিলে বিকেল বেলা পাঁচটা মোটরসাইকেল নিয়ে আট থেকে নয় জন লোক রওনা দিয়েছিলাম পদ্মবিলের উদ্দেশ্যে। পদ্মবিলটা ছিল আমাদের কুষ্টিয়া জেলার পাশের জেলা রাজবাড়ীতে। যদিও আমাদের বাসা থেকে পদ্ম বিল অনেকটাই দূরে তারপরেও আমরা কোনরকম ক্লান্তি বোধ না করেই রওনা দিয়েছিলাম বিকেল বেলা। পদ্মবিলে যখন যাওয়ার জন্য আমরা রওনা করলাম তখন থেকে শুরু করে প্রতিটা মুহূর্ত ছিল আমার কাছে অনেক বেশি সুন্দর এবং আনন্দদায়ক। যদিও বড় ভাইদের জন্য কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিল বের হতে। আমরা সকলে মিলে বাজারে গিয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু তাদের কোন খোঁজই ছিল না।
কিছুটা দেরি করে আমরা বের হলাম পদ্মবিল দেখার উদ্দেশ্যে কারণ সকলে মিলে একত্রে না গেলে আসলে ভালো লাগে না। তাই সবাই মিলে একসাথে রওনা করলাম পদ্মবিলে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় সময় লেগেছিল দেড় ঘন্টার একটু বেশি। আর সেদিন সকাল বেলা কিছুটা বৃষ্টি হয়েছিল যার কারণে রাস্তায় পানি জমেছিল আমরা মেইন রাস্তা না ধরে রাস্তার বিপরীতে অন্য আরেকটা রাস্তা ধরে পদ্মবিল এর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম কিন্তু ওই রাস্তাটা এতটাই বেশি ভাঙ্গা এবং পানি জমে ছিল যে আমাদের যেতে অনেকটাই কষ্ট হচ্ছিল। সে যাই হোক দীর্ঘ দেড় ঘন্টার পরে অবশেষে আমরা সেই বিলের সামনে গিয়ে পৌছালাম কিন্তু বিলের সামনে গিয়ে আমরা এতটাই বেশি হতাশ হয়েছিলাম যে আপনাদেরকে বলে বোঝাতে পারবো না।
আমরা যখন পদ্মবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন সূর্যটা কিছুটা পশ্চিম আকাশে হেরে গিয়েছিল সূর্যটা ডুবে যাবে ভাব। বলতে গেলে আমরা প্রায় সন্দেহ হবার কিছুটা আগে সেখানে গিয়ে পৌঁছেছিলাম। সেখানে গিয়ে আমরা রাস্তার দুই ধারে অনেক বড় দুটো বিল দেখতে পাই কিন্তু বিলের মধ্যে শুধুমাত্র রয়েছে কচুরিপানা সেখানে নেই কোন পদ্মফুল। দেখে আমরা রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম সেইসাথে আমি আসলেই অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম কারণ আমার খুব ইচ্ছে ছিল যে পদ্ম বিলে গিয়ে নৌকায় করে বিলটা ঘুরবো। এই ইচ্ছে যে শুধুমাত্র আমার একার ছিল তা কিন্তু নয় আমরা যে কয়জন সেখানে গিয়েছিলাম প্রায় সকলেরই ইচ্ছে ছিল যে নৌকায় করে পদ্মবিল ঘুরবো কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে সেখানে কোন পদ্ধতি ছিল না কচুরি পানা দিয়ে পুরো বিলটা ঢাকা ছিল। কি আর করার সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমরা গল্প করছিলাম হতাশার গল্প কি দেখতে আসলাম আর কি দেখলাম। ব্যাপারটা একবার আপনি চিন্তা করুন কোন একটা জিনিস দেখার জন্য আপনি অধীর আগ্রহ নিয়ে সেখানে গিয়েছেন কিন্তু সেখানে গিয়ে যদি আপনি সেই জিনিসটা দেখতেই না পারেন তাহলে আপনার কেমন অনুভূতি হবে আপনি বলুন..??
সত্যি বলতে অনুভূতিটা খুব একটা বেশি ভালো ছিল না সেখান থেকে তখনই চলে আসতে মন চাইছিল কিন্তু যেহেতু এত কষ্ট করে এতটা পথ এসেছি ফিরে যাওয়াটা মোটেও উচিত হবে না কিছুতো একটা দেখে যেতেই হবে। কি দেখব সেটাই ভাবছিলাম তবে ফিরে যাওয়ার আগে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুটা সময় কাটানো যাক। যদিও কচুরিপানা দিয়ে বিলটা ভর্তি ছিল তারপরেও মন চাইছিল যে এখানে বসে কিছুটা সময় কাটাই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় গল্প করছিলাম আমরা সকলেই কেউ কেউ সেই বিলে মাছ ধরছিল আবার কেউ কেউ পাট ধোয়ার কাজ করছিল। এগুলো সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম খুব একটা বেশি খারাপ লাগছিল না তবে পদ্ম দেখার ইচ্ছেটা তখন অব্দি মনের মধ্যে জাগ্রত ছিল। এরপরে সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করি এখানে কোথায় পদ্মবিল আছে সকলেই তখন বলে পানি কিছুদিন আগে শুকিয়ে গিয়েছিল যার কারণে এখন আর কোথাও তেমন একটা পদ্ম নেই। এই কথাটা শুনে আরো বেশি খারাপ লাগলো কি আর করার মনের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল অনেক।
যাই হোক এসেছিলাম পদ্মবিল দেখতে কিন্তু শুধুমাত্র বিলটাই দেখতে পারলাম পদ্ম আর দেখা হলো না। সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা বাসায় ফিরে যাব যখনই আমরা বাসায় ফিরে যাব ঠিক তখনই একই স্থানীয় লোকের কাছে জানতে পারলাম যে এখান থেকে পাঁচ কিলো দূরেই একটা বিলে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হচ্ছে। নদীতে যখন প্রচুর পানি আসে তখন আমাদের এলাকায় আগে নৌকা বাইচ হত কিন্তু এবছর হয়নি। নৌকা বাইচ দেখতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু আমরা পথ দেখতে এসেছিলাম বিল দেখা হয়েছে কিন্তু পথ দেখা হয়নি তাহলে আমরা নৌকা বাইচ দেখে আসি। সকলেই রাজি হয়ে গেল এক কথাতেই, এরপরে আবার বাইক নিয়ে রওনা হলাম নৌকা বাইচ দেখার জন্য। বড় নদীতে বড় বড় নৌকার বাইচ দেখা হয়েছে কিন্তু বিলে কখনো নৌকা বাইচ দেখা হয়নি এটা দেখার জন্য অনেকটাই এক্সাইটেড ছিলাম।
সেদিন পদ্মবিল দেখতে গিয়ে পদ্মবিল না দেখা হলেও নৌকা বাইচ দেখতে গিয়ে ভালোই সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছিলাম সেই মুহূর্তের পোস্ট নিয়ে হয়তো বা পরবর্তী কোনো পোস্টে আপনাদের মাঝে আবার হাজির হব। বাজার নয় এখানেই শেষ করছি আশা করছি আমার এই হতাশার পদ্মবিলের পোস্ট আপনাদের অনেক বেশি ভালো লেগেছে। সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে...!!!
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা
বিভাগ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
বিষয় | হতাশার পদ্ম বিল |
পোস্ট এর কারিগর | @jibon47 |
অবস্থান | [সংযুক্তি]source |
আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নেম @jibon47। আমি মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আব্বু আম্মু আর ছোট বোনকে নিয়েই আমার পরিবার। এই তিনজন মানুষকে কেন্দ্র করেই আমার পৃথিবী।একসাথে সবাইকে খুশি করা তো সম্ভব নয়, তারপরও আমি চেষ্টা করি পরিবারের সবাইকে খুশি রাখার। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে।আমি বর্তমানে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং লেখাপড়া করছি। আমি গান গাইতে, কবিতা লিখতে, এবং ভাই ব্রাদারের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলতে আমি প্রচন্ড রকমের অভিমানী, হতে পারে এটা আমার একটা বদ অভ্যাস। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব,"আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি।
@jibon47
VOTE @bangla.witness as witness
OR
এরকম পরিস্থিতি হলে হতাশ হওয়ারই কথা। বেশ কয়েকদিন ধরেই অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পদ্মবিল ল এর ভিডিও ফটোগ্রাফি আমিও দেখেছি। তবে আমাদের এদিকে সেরকম কোন পদ্মবিল নেই তাই ঘুরতে যেতে পারিনি। আপনারা সেখানে গিয়ে দেখবেন কোন পদ্মফুল নেই। এই বিষয়টা আসলেই খারাপ লাগে।
পদ্ম বিলে পদ্ম নেই বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। আগে যারা ভিডিও গুলো ধারণ করেছিল এটাও কিন্তু ভালো একটা বিষয়। এখন যেহেতু পদ্ম নেই এখন তো আর কেউ সেভাবে ভিডিও শেয়ার করতে পারবে না। যখন হতাশ হলেন তখন জানতে পারলেন পাঁচ কিলো দূরে নৌকা বাইচ হচ্ছে। পদ্মফুল না দেখতে পারলেও নৌকার এই প্রতিযোগিতা দেখে কিছুটা হলেও মনের প্রশান্তি পেয়েছেন। বিষয়টা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
এত কষ্ট করে সবাই ঘুরতে গেলেন অথচ যেটা দেখার জন্য গেলেন সেটাই পেলেন না। আসলে এরকম পরিস্থিতিতে একদমই ভালো লাগেনা। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই বদলে গেছে। আর প্রকৃতি তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে।
পদ্মবিলে পদ্ম ফুলের পরিবর্তে শুধু কচুরিপানা। এটা খুবই দুঃখজনক একটা ব্যাপার। আপনারা যা দেখতে গিয়েছেন সেটা তো দেখতে পারেননি। বেশ আশাহত হয়ে ফিরতে হয়েছে আপনাদের।