আবির ও ফয়সালের খেজুরের রস খাওয়ার গল্প।
গল্প
একটি শীতের সকালের গল্প। একজন গাছি, বেশ অনেকগুলো খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস সংরক্ষণ করেন। কিছু কিছু খেজুর গাছ ছিল গাছির বাড়ি থেকে অনেক দূরে। ব্যক্তিটা অন্ধকার থাকতেই গাছে গাছে খেজুরের রস সংরক্ষণ করে বেড়ান। দূরের গাছগুলোতে সংরক্ষণ করতে গেলে বেশ সকাল হয়ে যায়। সেই গ্রামের আবির আর ফয়সাল দুই বন্ধু। তারা দুইজন যুক্তি করল, আমরা চেষ্টা করলে প্রায় প্রত্যেকদিন ইচ্ছে মতো খেজুরের রস খেতে পারব। তারা পরিকল্পনা করল সকাল ভোরে ঘুম থেকে উঠবে এবং দূরের খেজুর গাছগুলো থেকে খেজুরের রস চুরি করে পেড়ে খাবে। শীতের সকাল, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা বেশ কঠিন। তবুও তারা দুইজন রস খাওয়ার লোভে সকাল ভোরে উঠেছে। দূরের খেজুর গাছগুলোর পাশে অবস্থান করল। আশেপাশে কোন লোকজন নেই। একদিকে কুয়াশা, আরেকদিকে বন জঙ্গল। মানুষের কোন উপস্থিতি সেখানে নাই। ফয়সাল গাছে উঠে পড়ে।
একদিকে শীতের কাঁপুনিতে হাত পা ঠান্ডা হয়ে একটু একটু কাঁপছে। আরেক দিকে গাছ থেকে খেজুরের রস পেড়ে আনার অভিজ্ঞতা তাদের নেই। খেজুর গাছ থেকে মাটির পাতিল টা নামিয়ে আনতে আনতে হাত ফসকে পড়ে যায় মাটিতে। মাটিতে পড়া মাত্রই পাতিল ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে যাচ্ছে। গাছের গোড়ায় খেজুরের রস পড়ে একাকার। এরপর ফয়সাল আস্তে আস্তে গাছ থেকে নেমে আসে। আশেপাশে মানুষ আসার ভয় তারা করেনি। কারো কানে মাটির পাতিল ভাঙ্গার শব্দ যাবে এমনটাও তাদের কাছে মনে হয়নি। ফয়সাল গাছ থেকে নেমে আসলো। আবির বলল এবার আরেকটি গাছে চল। সেই গাছটাতে আবির উঠে পড়ল। আবিরের গায়ে বেশ শক্তি রয়েছে। সে খুব সহজে গাছে উঠে পড়ে এবং গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে নিয়ে চলে আসে। কিন্তু যতক্ষণ সে পাত্র গাছ থেকে নামাচ্ছিল পাত্রের মধ্যে রসের দিকে সে সেভাবে নজর দিয়ে তাকায়নি।
গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে ভাবছে কিভাবে খাবে। তখন তারা সিদ্ধান্ত নিল মাটির পাত্রে মুখ বাদিয়ে খাবে। মাটির পাত্র বাড়িতে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। পথের মধ্যে অনেকে দেখে ফেলবে। একটা পাত্র নষ্ট হয়েছে। আর একটি পাত্র হারিয়ে গেলে পরবর্তীতে কোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে গাছি। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল মাটির পাত্রেই মুখ বাদিয়ে দুজনে রস খাবে এরপরে সেখানে পাত্র রেখে চলে আসবে। পাত্রের মধ্যে তারা লক্ষ্য করে দেখলো গাছ থেকে ফোঁটা ফোটা রস পড়েছে তাই উপরে একটু সাদা সাদা ফেনা হয়ে রয়েছে। আবির ফয়সালের উপর ভালোবাসা দেখিয়ে প্রথমে ফয়সালকে খেতে দিল। ফয়সাল কিছুটা খাওয়ার পর পাত্রটা আবিরের হাতে দেয়।
এবার আবির পাত্র ধরে ইচ্ছেমতো রস খেতে থাকে। খেজুরের রস বলে কথা। বেশ অনেক স্বাদ লাগছিল। তাই আনন্দের সাথেই খাওয়ার চেষ্টা। হঠাৎ একটি মুহূর্তে রস যখন পাত্রের মধ্যে কমে আসে, তখন পাত্রের মধ্যে চোখ যায়। তারা লক্ষ্য করে দেখে পাত্রের মধ্যে ময়লা আবর্জনা কি যেন ভেসে বেড়াচ্ছে। তারা আরও লক্ষ্য করে দেখে। তারা লক্ষ্য করে দেখতে গিয়ে এতটা ঘৃণা অনুভব করে, যেন তখনই তাদের বমি হবে। তারা ফলো করে পাত্রের মধ্যে ইঁদুরের বিষ্ঠা, মরা কিছু পোকামাকড়, এছাড়াও আরো নোংরা। এগুলো দেখে তাদের সেই খারাপ অবস্থা। পাত্র রেখে চলে আসার পূর্বেই গাছি এসে উপস্থিত। গাছি তার একটি পাত্র নষ্ট হয়ে যাওয়া দেখে আফসোস করলো। তিনি ফয়সাল আর আবিরকে ধমক না দিয়ে নরম সুরে বললেন আমাকে বললেই তো তোমাদের ভালো রস খাওয়াতে পারতাম। একদিকে রস নষ্ট হলো আরেক দিকে তার পাত্রটা। গাছির মুখ থেকে জানতে পারলো, যেই খেজুর গাছে পাত্র ফাঁকা রেখে সারারাত রস সংরক্ষণ করা হয়, তার মধ্যে ইঁদুর টিকটিকি পাখি চামচিকা বাদুরের নোংরা থাকে। কারণ তারা রস খেতে আসে আর নোংরা করে যায়। তাই উনি এ রসগুলো মানুষকে না খাওয়াইয়ে, ছাঁকনি দিয়ে সেকে গুড় তৈরি করেন। যে গাছের রসগুলো ভালোভাবে প্রটেকশন দিয়ে সংরক্ষণ করা হয় সেগুলো মানুষের কাছে বিক্রয় করে। আর এভাবে আবির ও ফয়সাল জানতে পারল খেজুরের রসের মধ্যে এমন মলমূত্র থাকে। এরপর তাদের ভুল হয়েছে তাই গাছির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যায় নোংরাযুক্ত রস খাওয়ার কারণে তারা বেশ অসুস্থ হয়েছিল।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | গল্প |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
W3w location | source |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
X--promotion
আজকের কাজ সম্পন্ন
আপু আপনার গল্পের মাধ্যমে অনেকেই অনেক কিছু জানতে পারবে এবং সচেতন হতে পারবে।কাচা খেজুরের রস কোনমতেই খাওয়া উচিত না যেমনটি ফয়সাল এবং আবির দেখেছে অনেক ময়লা আবর্জনা থাকে। এছাড়াও বাদুড় এর মাধ্যমে মানুষের নিপা ভাইরাস হতে পারে।চমৎকার সচেতনতা মূলক গল্প লিখেছেন আপু।
হ্যাঁ,নিপা ভাইরাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফয়সাল ও আবিরের খেজুর রস খাওয়ার গল্প বেশ ভালো লাগলো। তবে লুকিয়ে খেজুর রস খেতে গিয়ে হাড়ি হাত থেকে ফেলে তো এক মহাবিপদ বাঁধিয়ে ফেলতে গেছিল। তবে যাই হোক তেমন কোন বিপদ হয়নি। আসলে এগুলো অভ্যাস না থাকলে করে ওঠা মুশকিল। তাই মজার হলেও বেশ বিপদজনক একটি অভিজ্ঞতা এটা মানতেই হবে।
যার যেই বিষয়ে অভ্যাস নেই তার কাছে সেটা হওয়া একটু অসম্ভব।