জোসনা খালা
"হ্যালো",
অনেকদিন পর হঠাৎ করে জোসনা খালার কথা মনে পড়লো।আমি যখন বাবুকে নিয়ে প্রথম শহরে আসি তখন থেকে খালা আমার বাসায় কাজ করতেন প্রায় দেড় বছরের মতো আমার বাসায় কাজ করেছেন।উনি একদম আমার কাছের একজন হয়ে গিয়েছিলেন।আমার বাবু যখন একটু বড় হতে লাগলো জোসনা খালাকে খুবই চিনতো এবং খালাকে ছাড়া কিছু বুঝতোই না। জোসনা খালা অনেক বয়স্ক কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দরী ছিলেন। সুন্দরী দিয়ে আর কি হবে কপাল তো গরিব। যাইহোক উনি ওনার সংসারের অনেক গল্পই আমার সঙ্গে শেয়ার করতেন।খালার স্বামী বাজারে কাজ করেন।একটা মেয়ে ডিভোর্সি। ছেলে নেশা করে তাই ছেলের বউ দুইটা বাচ্চা রেখে চলে গেছে। সবার দায়িত্ব খালার ঘাড়ে এসে পড়েছে।
যাইহোক একদিন দেখলাম খালার গায়ে অনেক আঘাতের চিহ্ন। খালাকে জিজ্ঞেস করার সাথেই উনি কেঁদে উঠলেন।ওনার ছেলে নেশা করার জন্য টাকা চাচ্ছিলেন উনি যখন টাকা দেননি তখন উনার ওনাকে মারধর করেছেন। এ কথা শুনে আপনাদের ভাইয়া তো রেগে মেগে আগুন। আমারও অনেক রাগ হয়েছিল। তখন আমি এবং আপনাদের ভাইয়া খালাকে বললাম আপনি থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। এমন ছেলে জেলে থাকলে কিছু হবে না। খালা আমাদের কথা শুনে সেটাই করলেন। পুলিশ উনার ছেলেকে থানায় ভরলেন কিন্তু দুদিন পরে ছেড়ে দিয়েছে।
তারপর এভাবেই দিনের পর দিন চলে যাচ্ছিলো।খালা একটা সময় গিয়ে হাল ছেড়ে দেন। কি আর করার আছে।এভাবে হয়তো বাকিটা জীবন চলে যাবে। এরপর হঠাৎ খালা একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অনেকদিন কাজে আসা বন্ধ করে অনেকদিন ওনার অপেক্ষায় ছিলাম এআর পরবর্তীতে আসেননি। পরে তো দিদিকে কাজে নিয়েছি।
মাঝেমধ্যে বাজারে গেলে খালার সঙ্গে দেখা হয়। উনি ওনার স্বামীর সঙ্গে কাজে সাহায্য করেন পাইকারি বাজারে বস্তায় সবজি ভরতে। এতে ওনার কষ্ট কিছুটা কম হয়। কারণ উনার স্বামী সাথে থাকেন।খালার সঙ্গে দেখা হলে আমি ওনার হাতে কিছু টাকা দেই।ওনারও ওষুধপত্রের দরকার হলে উনি আমার বাসায় আসেন।আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করি।
সত্যি কথা বলতে খালাকে এ বয়সে কাজ করতে দেখে খুবই খারাপ লাগে। এই বয়সে তো ওনার বাসায় বসে থাকার কথা। ছেলে রোজগার করে আনবে সেই পয়সাই দুটো ডাল ভাত খেয়ে আরাম আয়েশ করবেন কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে তো করার কিছু নেই। আমার মনে হয় এমন কু সন্তান থাকার চেয়ে নিঃসন্তান থাকা ভালো। খালার বাকিটা জীবন হয়তো এভাবেই কেটে যাবে।
যাই হোক বন্ধুরা আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে পরবর্তীতে সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
জোসনা খালার গল্পটা পড়ে আমার নিজের কাছেও সত্যি খুব খারাপ লেগেছে আপু। বিশেষ করে ওনার ছেলের কথা শুনে তো আমার নিজেরই অনেক বেশি রাগ হচ্ছে সেই ছেলেটার উপরে। কিভাবে ছেলেটা নেশা করে আসতো, আবার টাকার জন্য নিজের মায়ের গায়ে হাত তুলতো। আমি তো সবসময় এটাই মনে করি যে, এই ধরনের ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই অনেক বেশি ভালো। আপনার যখন উনার সাথে দেখা হয়, তখন আপনি ওষুধ পত্র খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দেন, এটা শুনে খুব ভালো লাগলো।
হ্যাঁ আপু এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। হয়তো শেষ বয়সটা কষ্ট করে হলেও ভালো থাকতে পারত জোসনা খালা। ধন্যবাদ আপু।
Nice
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
আপনার পোস্ট পড়ে খালার জন্য খারাপ লাগলো। আসলে আপু বর্তমান বাচ্চারা ভালো না হলে যা হয় আরকি। আসলে আপু কতোটা অসহায় হলে এই বয়সে কাজ করতে হয়। যাইহোক আপু খালার মতো মানুষকে সাহায্য করতে পারলে আসলে ভালো লাগে। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু সন্তান ভালো না হলে যা হয়। খালাকে দেখলে আমারও খুবই খারাপ লাগে।
আপনার জোসনা খালার জীবনের গল্পটি পড়ে আমার কাছে বেশ খারাপ লাগলো। ঠিকই বলেছেন আসলে এই বয়সে ছেলেমেয়েরা ইনকাম করলে আরাম-আয়েশে থাকার কথা। কিন্তু তা না হয়ে উনাকে পরিশ্রম করে সংসার চালানো লাগছে। আপনার এখনো তার কথা মনে আছে এবং তাকে দেখলে কিছু ওষুধের জন্য টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। বিষয়টি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আসলে কাউকে মন থেকে সাহায্য করতে পারলে নিজের কাছে বেশ ভালো লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে আপু ওনাকে দেখলে নিজের ইমোশনটা ধরে রাখতে পারি না। হয়তো ওনাকে পুরোপুরি সাহায্য করতে পারবো না। তবে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
জোস্না খালার কথা গুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো।আসলে কুসন্তান থাকার চেয়ে নিঃসন্তান থাকা ভালো। জেনে ভালো লাগলো যে আপনি এখনো জোস্না খালাকে মনে রেখেছেন এবং সাধ্যমতো টাকা পয়সা দিয়ে থাকেন ঔষধ কেনার জন্য। এটাই তো মানবিক গুণাবলি।ধন্যবাদ সুন্দর একটি সত্যি ঘটনা আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
কিছু কিছু মানুষকে আমরা মনের অজান্তে নিজের আপনজন করে নেই। জোসনা খালাও তেমনি একজন যাকে মনে রেখে দিয়েছি। তাইতো দেখা হলেই খালার সঙ্গে কুশল বিনিময় করি। খুব সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এরকম অনেক মানুষ রয়েছে যারা সন্তানের এরকম অত্যাচারের কারণে একেবারেই খারাপ পর্যায়ে এসে দাঁড়াতে হয় তাদের। বৃদ্ধ বয়সে জোসনা খালার ছেলে উনার সাথে এরকম খারাপ ব্যবহার আর ছেলের নির্যাতনের কারণে উনার জীবনটা একেবারে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এরকম সন্তান যদি না থাকতো তাহলে অনেক ভালো। বাবা মা কতইনা কষ্ট করে সন্তানকে বড় করে, আর তারা যদি তাদের বৃদ্ধ বয়সে এরকম করে তাহলে একটা মানুষ কি করবে। ছেলেটাকে পুলিশে নিয়ে যাওয়ার দুই দিন পরে আবার ছেড়ে দিয়েছিল। এর পরবর্তীতে আবার ঐরকম হচ্ছিল। উনার জন্য সত্যি খুব খারাপ লেগেছে।
হ্যাঁ ভাইয়া খালার জন্য আমরা খুবই খারাপ লাগে হয়তো এভাবেই বাকিটা জীবন অত্যাচারের মধ্যেই কেটে যাবে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
সত্যিই তাই,কথায় আছে-দুস্টু গোয়ালের থেকে শুন্য গোয়াল থাকা অনেক ভালো।তেমনই এমন সন্তান থাকার থেকে না থাকা ভালো।যে অমানুষ হয়ে নিজের পিতা মাতাকে শুধুই কষ্ট দেয় আর গায়ে হাত তোলে।খুবই খারাপ লাগলো জোসনা খালার জন্য।ঈশ্বর সুদিন দিক তাদের,ধন্যবাদ আপু।
ঠিক বলেছেন আপু দুষ্টু গোয়ালের থেকে শুন্য গোয়াল অনেক ভালো। যে সন্তান বাবা মাকে কষ্ট দেয় তেমন সন্তান না থাকাই ভালো।ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।