লাশ বহন করা এক সাহসী ভ্যান চালকের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago




হ্যালো বন্ধুরা!
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে আপনারা অনেক অনেক ভাল রয়েছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটা গল্প শেয়ার করব। গল্পটা ছোটবেলায় লোকের মুখে শোনা। আশা করব গল্পের ঘটনা জেনে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে এবং আপনারা সজাগ থাকবেন।


1000004396.jpg




সাহসী হওয়া অনেক ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত সাহসিকতা দেখানো ভালো নয়। অতিরিক্ত সাহসী দেখাতে গেলে বিপদে পড়তে হয়। তেমনি একটি ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। ঘটনাটা গাংনীর একজন ভ্যান গাড়ি চালকের। আগেকার সময় প্রায় শোনা যেত মানুষ খুন হয়েছে, গলায় দড়ি দিয়েছে, বিষ খেয়ে মারা গেছে ইত্যাদি। এরপর সে লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য বা ময়নাতদন্ত করার জন্য মেহেরপুরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কাজ সেরে নির্দিষ্ট বাড়িতে ফিরে নিয়ে আনতে হলে অনেক সময় লাগে। শুনেছিলাম একজন সাহসী ভ্যানচালক রয়েছেন, নিজের এলাকায় এমন ঘটনার শিকার হওয়া লাশগুলো তিনি সাহস করে বহন করে বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। অন্যান্য ভ্যানচালকেরা অনেক কিছু গাড়িতে বহন করলেও মরা লাশ সহজে বহন করতে চায় না। একদিকে গাড়িতে লাশের রক্ত পানি লাগতে পারে। আবার প্যাসেঞ্জাররা সে গাড়িতে নাও বসতে পারে। ভয়ের কারণ রয়েছে ইত্যাদি।

তবে সেই সাহসী ভ্যানচালক এমন খুন হওয়া লাশগুলো তার গাড়িতে বহন করে বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। এতে বড় অংকের টাকা পাওয়া যায়, এটাই ছিল তার লোভ। নিজের গ্রামের আশপাশের গ্রাম গুলো এভাবে সার্ভিস দিত। এমন একটা লাশ একদিন তার গাড়িতে বহন করে ভিকটিমের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। ময়নাতদন্ত শেষ করে তার গাড়িতে লাশ তুলে দিতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সন্ধ্যা রাতেই সে তার গাড়ি টানতে টানতে নিজ গ্রাম অতিক্রম করে অন্য গ্রামে নিয়ে যাবে। চিন্তার বিষয় সে কখন লাশ পৌঁছে দিবে ভিকটিমের বাড়িতে। এরপর কখন সে নিজের বাসায় ফিরবে ফ্রেশ হবে খাওয়া-দাওয়া করবে। সবকিছুই টাকার লোভ। আর একদিকে নিজের সাহসিকতার পরিচয়। মাঝে মাঝে এমন লাশ টেনে তার অভ্যাস হয়ে গেছে। গাড়িতে একটি লাশ নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম পার হয়ে আসছেন তিনি। বেশ রাত হয়ে গেছে। লাশের আত্মীয়-স্বজন সে মরা লাশের সাথে কেউ ছিলনা। কারণ বাইরে থেকে মরা লাশের পাশে বসে রাত করে আসার সাহস করে নাই কেউ। আত্মীয়-স্বজন সবাই আগে থেকে বাসায় চলে গেছে। ভ্যান চালকের গাড়ি টানা সহজ হবে তাই ভেবে বাড়তি লোক সাথে নেন নাই। যাই হোক লাশ বহন করে চলছেন গাড়িচালক, কিছু পথ অতিক্রম করলে ভ্যানচালকের নিজের গ্রাম। এরপরে ভিকটিমের গ্রাম।

এদিকে বেশ অনেক রাত হয়ে গেছে। চলতে চলতে চোখ তুলা নামক এক মাঠে রাস্তার অতিক্রম করছেন তিনি। জায়গাটা বেশ ভয়ানক কোন ঘরবাড়ি নেই। দীর্ঘ রাস্তা। আশেপাশে তেঁতুল গাছ তালগাছ বটগাছ ইত্যাদি। গাছের ছায়াযুক্ত অন্ধকার এর কারণে রাস্তা চলা বেশ কঠিন। কালো আঁধার রাত, গাছের নিচ দিয়ে পার হতে গিয়ে আরো অন্ধকার। আগেকার ভ্যান গুলো তো পায়ে বল দিয়ে চালাতে হতো, লাইটের ব্যবস্থা ছিল না। সে সময়ে টস লাইটও ছিলনা তেমন। অনেকের অন্ধকারে গাড়ি চালানোর অভ্যাস। ঠিক তেমনি এই মানুষটার। কিন্তু এমন একটি পথ দিয়ে চলতে গিয়ে সে বেশ ভীতস্ত বোধ করছিল। ভ্যান গাড়ির প্যাডেল জোরে জোরে চালানোর চেষ্টা করলেও তার কাছে যেন মনে হচ্ছিল গাড়ি স্লো হয়ে যাচ্ছে। ভয়ংকর এই পথ পাড়ি দেওয়া তার কাছেও বেশ কঠিন মনে হচ্ছিল। অতীতে অনেক ঘটনা রয়েছে এই রাস্তার। দিনের বেলায় গাড়ি চালাতে যেমন সহজ হতো দ্রুত পার হয়ে যেত কিন্তু রাতে যেন তেমনটা হয়ে উঠছে না। সে একটি পর্যায়ে আরো দ্রুত চালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে অনুভব করছে গাড়ির দ্রুত চলছে না গাড়ি আস্তে আস্তে স্লো হয়ে যাচ্ছে এমনকি থেমে যাওয়ার পথে। মনে হচ্ছে পিছন থেকে কেউ যেন গাড়িটা টেনে ধরছে।

1000004395.jpg


ততক্ষণে ভ্যানচালকের গা ঘেমে গেছে। মনের মধ্যে অনেক ভয় জেগে গেছে। উনি চিন্তা করছেন কোন জীনে তার সমস্যা শুরু করলো নাকি। তিনি পিছনে সরাসরি না তাকিয়ে একটু চোখ বাঁকা করে দেখার চেষ্টা করছেন। তিনি অনুভব করছেন লাস যেন উঠে বসার চেষ্টা করছে। তিনি মন থেকে এতটা ভয় পেয়ে গেলেন, সে আর পিছনে ফিরে তাকাতে পারছে না। চেষ্টা করছে দ্রুত ভ্যান গাড়ি পেডেল মারতে, আর জোরে চলবে। কিন্তু আস্তে আস্তে গাড়ি যেন গোড়ছেই না। ভয়েতে তার সারা শরীর ঘেমে গেছে। একা রাতে কি করবে বুঝতে পারছে না। না পারছে পিছনে তাকাতে, না পারছে গাড়ি চালাতে। এদিকে হাত পা শিউরিয়ে বল কমে যাচ্ছে। একটি পর্যায়ে লক্ষ্য করল লাশটা সাদা কাপোনে মোড়ানো কিন্তু সেটা লাফ দিয়ে উঠলো। আর পিছন থেকে শব্দ হল খড়মড় করা। সে ভাবল হয়তো জ্বীনের পাল তার ভ্যান গাড়িতে চেপে বসেছে আর লাশটাকে খাচ্ছে। এমন ভেবে ভ্যান গাড়ি ফেলে সে সামনে রাস্তার দিকে দৌড়ানো শুরু করল। তবে সে লক্ষ্য করে দেখলো ভয়তে ভ্যান গাড়ি না টানতে পারলেও, সে দৌড়াতে পারছে। সে ভ্যানের চিন্তা করলো না, এখন নিজের জীবন বাঁচানোটাই তার ফরজ। সে রাস্তায় দৌড়াতে দৌড়াতে কয়েকবার পড়ে গেছেন। কিন্তু পেছন দেখে সে তাকায় নাই। আবার উঠে সামনের দিকে তাকাতে থেকেছেন আর দৌড়াতে থেকেছেন। এমন করে একটি পর্যায়ে নিজের গ্রামে প্রবেশ করেছেন, এরপর স্বস্তি ফিরেছে। এরপর নিজের বাড়িতে পৌঁছে গেছেন।

বাড়িতে পৌঁছে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যায় যায়। বাড়ির মানুষ তার মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা। এরপর বিস্তারিত জানতে চাই। সেই ঘটনা খুলে বলে। পাড়ার মানুষজন জুটে গেছে তার বাড়িতে। চোখ তুলা রাস্তা নামটা শুনলে মানুষ ভয় পায়। রাত করে কেউ সেখানে যাওয়ার সুযোগ কর। তবে গ্রামে কয়েকজন হুজুর শ্রেণীর মানুষ গুলো লাশটাতো উদ্ধার করা দরকার। ততক্ষণে পাশের গ্রাম থেকে লাশের আত্মীয়-স্বজন ভ্যান চালকের বাড়িতে উপস্থিত হয়। ঘটনা জানতে পারে। বেশ কয়েকজন মানুষ লাশ উদ্ধার করার জন্য সাহস করে ঘটনাস্থলের দিকে যাওয়া শুরু করে। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে লাশের গায়ে মাড়ানো সাদা কাফনের সাথে আরও এক্সট্রা কাপড় ছিল। সেই কাপড় ভ্যান গাড়ির চাকার সাথে জড়িয়ে গেছে কোন ভাবে। আর এভাবেই গাড়ি চলতে চলতে এমন একটা পর্যায়ে জড়িয়ে গেছে যে গাড়ি চলার আর কোন কৌশল ছিল না। এইজন্য গাড়িটা আটকে গেছে। কিন্তু ব্যক্তিটা অনুভব করেছে জিন ভুতের তাই পিছনের দিকে তারা তাকানো সম্ভব হয়নি। এরপর তারা সবাই মিলে লাশটাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়।




বিশেষ বিশেষ তথ্য


বিষয়গল্প পোস্ট
গল্পের বিষয়লাশ উদ্ধার
ফটোগ্রাফি ডিভাইসinfinix mobile
আমার ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর
ফটোগ্রাফার ও ব্লগার@helal-uddin
ধর্মইসলাম
দেশবাংলাদেশ



7YHZyBadGPMGPpmSAvnvPWhbR1Eo9nKWN6xzUJNzgxziWYVj97UYc69tRU1c57mVzP13faqGYpEjuFHprQCfZqg6aqpXGjX5CvGtK4DeHp...9hpdsiq4Gci8DoxLdGGsuPNV6A9q1ix4kAGE8RYya7ZwRGxyiWRCNL76EtziJLHwwz9gTz9wqhHP85AxA5FDGdEEDbrQhMniBMZNWdC7GFjraWA5sNwAcGshuY.png


পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

ij42VfeLLLL7WCxzYedv2KU7aUqHk3RNyfwHxuumhaYnHGG1dsqAWnhgxDavkADTEGBJEwSdb572op7FjANMqWxnMxgRucn6JYEH18dx32zBsGYg8oAuC5Quz1do2uNbdFiF3z6Lk1Hw8qJ8jcr6SQ85SbvCaLy5VUwHxx3SRmPnXqteex2eVHV2cAzT5iwMRSwwYpQBkt5B8W7bPzGLjyAxm.gif



আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়


আমি মোঃ হেলাল উদ্দিন। আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুরে। আমার বর্তমান ঠিকানা,ঢাকা সাভার বিশ-মাইল। আমি একজন বিবাহিত ব্যক্তি। কর্মজীবনে আমি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। এই চাকরির পাশাপাশি আমার ইচ্ছে রয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে ইনকাম করার। সেই ক্ষেত্রে ব্লগিংটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। এন্ড্রয়েড মোবাইল হাতে পাওয়ার পর থেকে ফটোগ্রাফির প্রতি আসক্ত তা একটু বেশি। আব্বু সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায়, ছোট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছি। তাই ভ্রমণ করতে অনেক ভালো লাগে। সমস্ত দৃষ্টিকোণ থেকে আমি আশাবাদী, প্রতিনিয়ত সুন্দর সুন্দর ব্লগ তৈরি করে প্রকাশ করতে পারবো। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।


IMG-20241121-WA0015.jpg




2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif


Sort:  
 3 days ago 
 3 days ago 

আমার আজকের টাস্ক

1000004398.jpg

1000004400.jpg

1000004402.jpg

 3 days ago 

ভাইয়া আজ আপনার পোস্টটি পড়ে যেমন ভালো লেগেছে তেমন অনেক ভয়ও লেগেছে। সাহসী ভ্যান চালকের গল্প পরে আমিও যেন এই কাহিনীটি কল্পনায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। গায়ের লোমগুলো আমার সব শিউরে উঠেছিল। শুনেছি বেশি রাত হলে নির্জন রাস্তাগুলোতে লাশ নেয়ার জন্য অনেক সময় কিছু না কিছু থাকে। ভ্যান চালকটি ভয় পেয়ে যদিও ভেবেছিল এ কোন জিনের কাজ। পরবর্তীতে লাশ উদ্ধার করতে যেয়ে দেখে অতিরিক্ত কাফনের কাপড় চাকায় বেজে সামনের দিকে চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

 3 days ago 

গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

 3 days ago 

অনেক সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। মানুষের অতিরিক্ত সাহস আর সে সাহসের অহংকার তার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমি মনে করি সাহস থাকা ভালো। সাহসগুলো নিজের প্রয়োজনে নিজের জায়গায় ব্যবহার করা প্রয়োজন। তাই বলে এত অতিরিক্ত সাহস তৈরি করা ভালো না যেটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যেখানে কোন বিষয় ছিল না কিন্তু সেখানে ব্যক্তিটা অনেক ভয় পেয়েছেন বুঝতে পারলাম। এখানেই তার সাহসিকতার আসল রহস্য বের হয়ে গেছে।

 3 days ago 

হ্যাঁ ভাইয়া এটা কিন্তু আপনি ঠিক বলেছেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.25
JST 0.038
BTC 104064.99
ETH 3339.85
SBD 5.29