ট্রেন জার্নি ( ঢাকা টু ফেনী)
03-12-2024
১৮ই অগ্রহায়ণ , ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই। তবে অনেক টায়ার্ড গতদুদিন দৌড়ের উপরে যাচ্ছে সময়। আপনারা হয়তো জানেন আপনি ডুয়েটে ( ঢাকা ইউনিভার্সিটি ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি) । তো ডুয়েটে ভর্তির তারিখ দিয়েছে দশ তারিখে। ভর্তির জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন। আবার সকল সনদপত্রের মূলকপি সত্যয়িত করতে হবে। তার মধ্যে আমার কাছে চারিত্রিক সনদপত্রটা ছিল না। যেটা নিতে হবে ফেনী পলিটেকনিক থেকে। এবার ফেনী পলিটেকনিক থেকে তিনজন ডুয়েটে চান্স পেয়েছি আমরা। একজনের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সে ফেনী কলেজে আসবে আমার মতো চারিত্রিক সনদপত্র তোলার জন্য। ভর্তির তারিখ যেহেতু দশ তারিখে দিয়েছে তাই আগেই তুল ফেলতে হবে। তার উপর কোচিং থেকে পাচঁ তারিখ রাতে ট্যুরে যাবে। সবমিলিয়ে একটা ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা।
আমার সাথে এবার নাছিম নামের একটা ছেলের চান্স হয়েছে। ফেনীতেি পড়েছি দুজন। নাছিমকে ফোন দিয়ে বললাম কখন আসা যায়। তার আগে অবশ্য মোবারক স্যারের সাথে কথা বলেছিলাম। স্যার বলেছিল রবিবার অথবা সোমবারে আসার জন্য। পলিটেকনিক এ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। তো সে হিসেবে কাজটা দ্রুতই করতে হবে। তো আমি এক তারিখের টিকেট কেটে নিলাম ঢাকা থেকে। রাত ১১:১৫ মিনিটে আন্তনগর তুর্না এক্সপ্রেস চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। তবে আমাকে এগারোটার আগেই স্টেশনে হাজির থাকতে হবে। ঢাকার জ্যামের কথা তো সবাই জানেন। তাই রিস্ক না নিয়ে ১ তারিখের একটা টিকেট জয়দেবপুর টু ঢাকা কিনে নিয়েছিলাম । পদ্মা এক্সপ্রেস জয়দেবপুর হয়ে ঢাকা যাবে। জয়দেবপুরে থাকার কথা ছিল ৮:২৫ মিনিটে। কিন্তু স্টেশনে গিয়ে জানতে পারলাম ট্রেন আসবে আরও এক ঘন্টা পরে।
তবে ভালো লাগার বিষয় হলো তার আগেই লালমনিরহাট এক্সপ্রেস স্টেশনে এসে হাজির। সেটাও ঢাকা যাবে। তাই সে ট্রেনেয় উঠে চলে গেলাম ঢাকায়। যেতে যেতে রাত সাড়ে দশটা বেজে যায়। তারপর গিয়ে দেখি তিন নাম্বার প্লাটফর্মে তুর্না এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে আছে। আমার সিট ছল ন বগীতে। একদম পিছনে ৬০ নাম্বার। বগীর সামনে কিছুক্ষণ বসে থাকি। কারণ ট্রেন ছাড়তে অনেক দেরি। তাই ফোন কিছুক্ষণ ইউজ করলাম। তারপর আমার যথাযথ আসনে বসে গেলাম। একে একে সব যাত্রী উঠে গেল। যাত্রী উঠার পরেও ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল ১১:২৫ মিনিটে কিন্তু তখনও ট্রেন ছাড়েনি। ট্রেনের ভিতরে প্রায় এক ঘন্টা বসেছিলাম। এক ঘন্টা বসে থাকার পর রাত সাড়ে বারোটার দিকে ট্রেন ছাড়ে! তার মানে এক ঘন্টায় ডিলে হয়ে গেল ঢাকাতেই। আমার জন্য অবশ্য ভালোই হয়েছিল। কারণ ট্রেন ফেনী যাবার কথা ছিল ভোর ৩:৪০ মিনিটের দিকে। যেহেতু এক ঘন্টা ডিলে করেছে তারমানে যেতে যেতে পাচঁটার বেশি বেজে যেতে পারে।
আসলে একা একা ট্রেন জার্নি করতে মোটেও ভালো লাগে না। বন্ধুদের সাথে গেলে ভালো লাগে। একা জার্নি করার সময় ফোন সাথে না থাকলে সময় তো যেতোই না। আবার ফোন থাকাও সমস্যা। কারণ চোর-বাটপারে ভরপুর ট্রেনে। এমন ছদ্মবেশে আসে আপনি বুঝবেনও। এজন্য একা জার্নি করলে চোখকান সবসময় খোলা রাখা জরুরি। আমি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, একা যেহেতু যাবো রাতে তেমন ঘুমানো যাবে। ট্রেনের ভিতরেই দেখি এক ব্যক্তির ফোন টান দেয়ার মতো অবস্থা! আমি তখন ফোন ইউজ করা ব্যক্তিটাকে সতর্ক করলাম।আর পকেটমার তো আছেই। আপনি পাঞ্জাবীর পকেট আর প্যান্টের পিছনের পকেটে টাকা রাখা রিস্ক। যেকোন সময় পকেট মার এসে আপনার টাকা নিয়ে নিতে পারে। এজন্য পিছনের পকেটে কিছু না রাখাই ভালো। তো আমি দেখছিলাম শুধু। তারপর আমি আর ফোনই বের করলাম না পকেট থেকে। ট্রেন চলতে লাগল আর বাহিরের লাইটের আলো একটার পর একটা দেখতে লাগলাম।
ট্রেন দেখতে দেখতে বিমান বন্দরে চলে এলো। সেখান থেকেও অনেক প্যাসেঞ্জার উঠবে। একে একে অনেক প্যাসেঞ্জার উঠে গেল। তারপর ট্রেন আবার চলতে শুরু করল। নেক্সট স্টেশন নরসিংদী তারপর ভৈরব। ভৈরব যেতে যেতে দেড় ঘন্টার মতো লাগে। ট্রেনের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট হকার দেখতে পাওয়া যায়। আমার যেহেতু রাতে কম ঘুমাতে হবে তাই একটা কফি নিলাম। নরমাল কফি বিশ টাকা কিন্তু সেটা ট্রেনের ভিতরে ত্রিশ টাকা। ভৈরব আসার পর সেখানে এসেও ঝামেলা! ত্রিশ মিনিটের উপরে সেখানে দাঁড়ালো। তার মানে ফেনী যেতে যেতে সকাল ছয়টা বেজে যেতে পারে এবং আমার জন্যও ভালো হবে। কারণ ফেনী স্টেশনে গিয়ে সকাল নয়টা অবধি বসে থাকতে হবে। তো অনেক প্যাসেঞ্জার নেমে গেল। তারপর ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া গিয়ে আরও অনেক প্যাসেঞ্জার নেমে যায়।
ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া এসে আমাদের বগী অনেকটা খালি হয়ে যায়। তারপর আবার কুমিল্লা থেকে অনেক প্যাসেঞ্জার উঠে যায়। ঘড়িতে তখন সাড়ে তিনটা বেজে যায়। ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখলাম সাড়ে চারটা। চোখে ঘুম আসলো। কখন ঘুমিয়ে গেলাম টের পায়নি। ভাগ্যিস বগীর দায়িত্বে একজন ট্রেন কর্মকর্তা ছিল। ফেনী আসতেই বললো ফেনী স্টেশনে এসে গেছি। তারপর নেমে পড়লাম সেখানে। ঘড়িতে তখন ৫:৫০ এর মতো বাজে। তারপর সেখানে স্টেশনে গিয়ে বসলাম। স্টেশনে কিছুক্ষণ বসার পর দেখি সূর্য উঠছে পূব আকাশে। কিছুক্ষণ স্টেশনে হাটাঁহাটিঁ করলাম। তারপর সকাল সাড়ে আটটার দিকে ফেনী পলিটেকনিক এ চলে গেলাম।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Twitter share
Puss tweet
ট্রেন জার্নি করতে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে।আর ট্রেন জার্নি কিছু টা নিরাপদ। আপনি দেখছি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফেনি ট্রেন ভ্রমণ করেছেন, দেখে বেশ ভালো লাগলো। আপনি একদম ঠিক ঠাক ভাবে আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন, জেনে বেশ ভালো লাগলো।
ট্রেন জার্নি করতে আমার কাছেও ভালো লাগে ভাই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🌼
ট্রেন জার্নি টা স্বল্প সময়ের মধ্যে আরামদায়ক হয় তবে একটু রিক্সের ব্যাপার থাকে। অনেক দিক দিয়ে সচেতন থাকতে হয়। বিশেষ করে স্টেশনে নামার দিক দিয়ে। যাই হোক আপনারা দুজন মিলে ফেনী গিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
দুজন না তো একজন গেলাম। যাইহোক, ট্রেনে ভ্রমণ করার সময় আসলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।