একই রকম রোগ লক্ষণ নিয়ে আসা দুই রুগীর গল্প | ১০০% পাওয়ার আপ
হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভাল আছেন। আমার পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। হাজির হলাম চেম্বার কথনের আরেকটা গল্প নিয়ে। আজকে আমরা শুনবো দুই রুগীর গল্প!
প্রথম রুগীটা আমার চেম্বারে এসেছিলেন মোটামুটি ৪ দিন আগে। ত্রিশের কম উনার বয়স। হঠাত করে ২-৩ ঘন্টা ধরে নাভীর নিচে বাম পাশে প্রচন্ড ব্যথা! আর কোন লক্ষণ ছিল না। না প্রশ্রাবে সমস্যা, না জ্বর, না বমি, না অন্য কোথাও ব্যথা, না পাতলা পায়খানা, না অতীতে একই রকম কোন ব্যথার ইতিহাস!
পরীক্ষা করে সববেশী ব্যথা পাওয়া গেল নাভীর ঠিক বাম পাশ এবং একটু নিচে। ঐ জায়গার প্রশ্রাবের থলির কিছু অংশ থাকে। প্রশ্রাবের থলিতে বা প্রশ্রাবে ইনফেকশান থাকলে বা প্রশ্রাবের রাস্তায় পাথর থাকলে তো প্রশ্রাব করার সময় কিছু না কিছু সমস্যা হবার কথা। উনার কোনই সমস্যা ছিল না। কিন্তু ব্যথার তীব্রতা হিসাবে যে প্রাথমিক ডায়াগনোসিস আমার মাথায় এসেছিল তা হলো পাথর। কিডনী এবং প্রশ্রাবের থলির মধ্যবর্তী কানেক্টিং টিউব (যাকে বলে ইউরেটার-Ureter) এ পাথর আটকে থাকলে এরকম তীব্র ব্যথা হয় (এটাকে বলে ইউরেটেরিক কলিক- Ureteric colic)।
যাহোক উনাকে প্রশ্রাবের একটা পরীক্ষা করার কথা বললাম। রাজী হলেন। ইনজেকশানও দিলাম ব্যথা কমানোর জন্যে। আধা ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট চলে আসলো। অগনিত রক্ত কনিকা (Numerous RBCs)। ইনফেকশান নাই। এধরণের রিপোর্টের অন্যতম কারণ হলো পাথর (রেনাল স্টোন-Renal stones)। উনাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম এবং একটা আল্ট্রাসাউন্ড (Ultrasound) পরীক্ষা করতে লিখে দিলাম পার্শবর্তী একটা হাসপাতাল থেকে। মুখে খাওয়া ওষুদ নিয়ে বিদায় হলেন।
গতকাল আজকের গল্পের দ্বিতীয় রুগী এসে হাজির। বয়স ৪০ এর একটু বেশী। কাকতালীয় ভাবে হুবুহু একই রকম লক্ষণ! যেন একেবার কার্বনকপি!! উপরের দুই নাম্বার প্যারাগ্রাফটা আরেকবার পড়ুন। দ্বিতীয় রুগীর রোগ লক্ষণ জানতে পারবেন। উনাকেও প্রশ্রাব পরীক্ষা করালাম। ইনজেকশান দিলাম ব্যথানাশক। উনার রিপোর্টেও আসলো অগনিত রক্ত কনিকা (Numerous RBCs)। উনাকেও রেনাল স্টোনের চিকিৎসা দিলাম এবং আল্ট্রাসাউন্ড করতে পরামর্শ দিলাম। উনি বিদায় নিলেন।
দ্বিতীয় রুগী যাওয়ার ১-২ ঘন্টার মধ্য প্রথম রুগী আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে হাজির। যা ভেবেছিলাম তাই। আমার প্রাথমিক ডায়াগনোসিস ঠিকই ছিল! উনার বাম কিডনির ভিতরে একটা ছোট পাথর। দ্বিতীয় একটা পাথর উপর থেকে খুলে এসে ইউরেটার এর মধ্যে আটকে আছে। ইউরেটারটা যেখানে প্রশ্রাবের থলিতে মিলিতে হয়েছে তার ঠিক উপরে!! এটা যতক্ষণ খুলে প্রশ্রাবের থলিতে এবং পরবর্তীতে প্রশ্রাবের সাথে বাইরে বের না হবে ততক্ষণ যেকোন সময় আবার তীব্র ব্যথা উঠতে পারে। পুরো বিষয়টা তাকে আবার ব্যখ্যা করলাম এবং পাথর বের করার আরেকটা ওষুধ দিয়ে বিদায় দিলাম উনাকে।
দ্বিতীয় রুগী আল্ট্রাসাউন্ডের রিপোর্ট নিয়ে আসলে উনার ডায়াগনোসিস সম্পর্কেও জানা যাবে!
আজকে এ পর্যন্তই। কেমন লাগলো আজকে লেখাটি তা অবশ্যই জানাবেন কমেন্টের মাধ্যমে। ভাল থাকুন সবাই।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা নিরন্তর
ডা হাফিজ
ওমান
২৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪
আপনার চিকিৎসা বিষয়ক লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করি। নতুন কিছু জানা যায়। যেহেতু ফার্মেসিতে কাজ করি, এসব তথ্য আমার ভীষণ কাজে আসবে। ধন্যবাদ ভাই। এভাবেই লিখতে থাকুন।
Many thanks, brother 😀