প্রতিযোগিতা-১৫||আমার তৈরি "কাঁচাআম পোড়া দিয়ে মজাদার আম পান্না শরবত"রেসিপি
নমস্কার
প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন?
আশা করি, ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলেই ভালো ও সুস্থ আছেন।
আজ আমি আবারো "মজাদার ফলের জুস বা শরবত"প্রতিযোগিতা-১৫ এ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।এত সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য @shuvo35 ভাইয়াকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।এছাড়া "আমার বাংলা ব্লগের"সকল শ্রদ্ধেয় ভাইয়াদেরকে ,আপুদেরকে ও কমিউনিটির সকলকে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।আমার খুবই ভালো লাগে যখন আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।আমি সব সময় চেষ্টা করি ভিন্ন কিছু করার।তাইতো আজ আবার চলে আসলাম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে-"কাঁচাআম পোড়া দিয়ে মজাদার আম পান্না শরবত রেসিপি"নিয়ে।
■আমার শরবত তৈরির অনুভূতি:
শান্তিতে প্রাণ জুড়ান"
এটি আমার স্লোগান😀,আম পান্না শরবত হলো বাঙালিদের খুবই পুরোনো একটি ঐতিহ্য।এটি কলকাতার নিজস্ব একটা পানীয় বলা যায় গরমের দিনে।এই আম পান্না শরবত খেলে মানুষের শরীর ও মন দুই-ই ঠান্ডা হয়ে যায়।কলকাতার যতগুলো পুরনো শরবত আছে আম পান্না তাদের মধ্যে অন্যতম।কলকাতায় গরমের দিনে এটি খুবই চলে।তাই এই পুরোনো ঐতিহ্যকে আমি আমার তৈরি শরবতের মধ্যে তুলে ধরলাম একটু ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি করে।যদিও বাজারে বড়ো আমের দাম আগুন তবুও আমার একটু বড়ো আমের প্রয়োজন ছিল।যাতে আমি ভালোভাবে পুড়াতে পারি, তাই 30 টাকা দিয়ে একটি কাঁচাআম কিনলাম।এই শরবত ভাত খাওয়ার মধ্যেও পান করা যায়।এই শরবতটি তৈরি করতে গিয়ে আমাকে কাঁচা মরিচ পুড়াতে হয়েছে, কাঁচাআম পুড়াতে হয়েছে, গোটাজিরা ভেঁজে গুঁড়ো করতে হয়েছে।আর সবশেষে এটি যখন আমি প্রস্তুত করছিলাম কাঁচা মরিচ পুড়ানোর সুন্দর একটা স্মেল বের হয়ে সারা বাড়িময় সুভাষ ছড়াচ্ছিল।সেটি এভাবে না খেলে অনুভব করা যাবে না।তাছাড়া যখন এটি পান করা হয় মনে একটা প্রশান্তি কাজ করে প্রাণটা জুড়িয়ে যায় আর সঙ্গে কাঁচা মরিচের সুন্দর স্মেলটা তো আছেই।আমি তো একবারে দুই গ্লাস খেয়ে নিয়েছি।😋😋
আসলে এবারের প্রতিযোগিতার বিষয়টি ছিল সময়োপযোগী ও খুবই সুন্দর একটা বিষয়।সকাল দশটার পর থেকে যখন তীব্র রোদের উত্তাপ বাড়তে থাকে, গরম হাওয়ায় মানুষের শরীরের সকল এনার্জি ফুরিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে মানুষ তখনই বিভিন্ন ধরনের শরবত পান করেন।তবে এই প্রাচীন আম পান্না শরবত খেয়ে প্রাণ জুড়ায় কলকাতার অধিকাংশ মানুষসহ বিভিন্ন জায়গার মানুষেরা।সত্যিই খুবই শান্তিদায়ক শরবত এটি ,একদম মুখে লেগে থাকার মতো স্বাদ।কিন্তু 😢দুঃখের বিষয় হলো-এটি খাওয়ার শেষে গ্রেটার ধুতে গিয়ে আমার একটি আঙ্গুল কেটে গিয়েছে ফলে সেখান থেকে খুবই রক্তক্ষরণ হয়েছে।এখানেই আমার অনুভূতিটা ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে রক্ত ঝরিয়ে।তবুও আমি শান্তি পাচ্ছি 😊😊কারণ শরবত খেয়ে আমার শরীর ও মন পুরো ঠান্ডা ছিল,একটা আলাদা রকমের প্রশান্তি...।তো চলুন শরবত তৈরি শুরু করা যাক--
◆উপকরণসমূহ◆
ক্রমিক নং | উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|---|
1 | কাঁচা আম | 1 টি |
2 | কাঁচা মরিচ | 3 টি |
3 | পাতিলেবু | 1 টি |
4 | লবণ | 1/2 টেবিল চামচ |
5 | চিনি | 2.5 টেবিল চামচ |
6 | জিরার গুঁড়ো | 1.5 টেবিল চামচ |
7 | ঠান্ডা বরফ জল | পরিমাণ মতো |
◆প্রস্তুত প্রণালি◆
ধাপঃ 1
●প্রথমে আমি বড়ো সাইজের কাঁচা আমটি নিয়ে নিলুম।এক্ষেত্রে একটু বড়ো সাইজের আম নিতে হবে নাহলে ভিতরটা শক্ত থেকে যাবে।এটিকে এরপর জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে মুছে নিলুম।
ধাপঃ 2
●এবারে একটি ছোট/পাতিলেবু ও সঙ্গে কয়েকটি কাঁচা মরিচ নিয়ে নিলুম।
ধাপঃ 3
●এরপর আমি রান্নার পর উনানের যে আগুন থাকে, তার মধ্যে আমটি দিয়ে দিলুম।তবে বেশি আগুনে দেওয়া যাবে না।
ধাপঃ 4
●কিছু সময় পর পর আমটিকে উনানের ভিতরে নেড়েচেড়ে পাশ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিলুম, যাতে ভালোভাবে দুইপাশে পুড়ে যায় এবং ভিতরটা সেদ্ধ হয়ে যায়।
ধাপঃ 5
●তো আমার আমটি ভালোভাবে পুড়ে গিয়েছে এরপর এটিকে হাত দিয়ে তুলে নিলুম একটি পাত্রে।যদিও এটি খুবই গরম তারপর হালকা জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
ধাপঃ 6
●এবারে কাঁচা মরিচ পুড়ানোর পালা।আমি উনানের জ্বলন্ত আগুনে একটি করে মরিচের বোঁটা ধরে ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পুড়িয়ে নেব,সুন্দর একটা স্মেল বের হচ্ছিল পুড়ানোর সময়।
ধাপঃ 7
●তো আমি এখন একটা প্লেটে স্বাদ অনুযায়ী চিনি ও লবণ
নিয়ে নিয়েছি।পুড়িয়ে নেওয়া মরিচগুলি আলতো হাতে জল লাগিয়ে মুছে নিয়ে পাত্রে রেখে দিলুম।
ধাপঃ 8
●এবারে আমি কিছু গোটা জিরা ভেঁজে নেব।উনানে একটি পরিষ্কার শুকনো কড়াই বসিয়ে দেব,তার মধ্যে কিছু গোটা জিরা দিয়ে নেড়েচেড়ে বাদামি রঙের করে ভেঁজে নেব। জিরার সুন্দর গন্ধ বের হতে শুরু করলে তারপর নামিয়ে নেব।
ধাপঃ 9
●জিরা ভেঁজে নেওয়া হয়ে গেলে শীল-পাটায় করে বেঁটে গুঁড়ো করে নেব মিহি করে।একইসঙ্গে পুড়িয়ে নেওয়া কাঁচা মরিচগুলোও হালকা বেঁটে নিয়ে একটি পাত্রে তুলে নেব।
ধাপঃ 10
●আমার মসলা তৈরি করা শেষ।এরপর আমি পুড়িয়ে নেওয়া আমটি নিয়ে নিলুম।
ধাপঃ 11
●আমের খোসা ছাড়িয়ে নিলুম।আমটি খুবই শাসযুক্ত।ভিতরটা খুবই সুন্দর সেদ্ধ হয়েছিল আমটি।
ধাপঃ 12
●এবারে গ্রেটারের মাধ্যমে আমটি গ্রেট করে নেব।যদিও গ্রেটারের প্রয়োজন ছিল না।তারপর ঠান্ডা বরফ জল দিয়ে হাতে কসলিয়ে আমের গা থেকে শাসগুলি বের করে নিলুম।
ধাপঃ 13
●তো আমার আমের রসটি পুরো নেওয়া হয়ে গেছে।এতে আমি ঠান্ডা বরফ জল মিশিয়ে নিলুম পরিমাণ মতো।আমি একটু ঘন করে তৈরি করেছি।তবে চাইলে মিশ্রণটি আরো হালকা ও করা যায়।
ধাপঃ 14
●এরপর একে একে সকল উপকরণ দিয়ে দিলুম আমের মিশ্রনের মধ্যে।যেমন-চিনি,পোড়া কাঁচামরিচ,লবণ ও ভাজাজিরা গুঁড়া।
ধাপঃ 15
●এবারে এটি আমি একটা চামচের সাহায্যে মসলাগুলি মিশিয়ে নিয়েছি।
ধাপঃ 16
●এরপর পাতিলেবুটি কেটে নিয়েছি ছোট ছোট করে।
ধাপঃ 17
●সবশেষে আমের মিশ্রনের মধ্যে লেবুর রস দিয়ে দিলুম।তারপর আবার নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিলুম।
ধাপঃ 18
●তো তৈরি হয়ে গেল আমার "মজার আম পান্না শরবত" রেসিপি। এটিকে এবারে কাচের গ্লাসে ঢেলে নিলুম এখন পরিবেশন করতে হবে।
সর্বশেষ ধাপ
●এটিই শরবতের আসল ও সর্বশেষ ধাপ।এটি খেতে খুবই মজার গরমের সময়।না খেলে অনুভব করা সম্ভব নয়।যাইহোক তো আমার এটিই ছিল "কাঁচাআম পোড়া দিয়ে মজাদার আম পান্না শরবত রেসিপি" তৈরি।
আশা করি আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের শরবত রেসিপিটা ভালো লাগবে।সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ও সাবধানে থাকবেন।
আসলে আপু আপনি একদম সকলের থেকে আলাদা দারুন কিছু নিয়ে হাজির হয়েছেন। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। আপনি কোন ইউনিক কোন শরবত রেসিপি নিয়ে হাজির হবেন। আম পান্না শরবত আমার কাছে একদম নতুন লাগলো। দারুণ দক্ষতায় এটি তৈরি করেছেন। প্রতিটি ধাপ সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপু এবং আপনি খুব ভালো পজিশনে থাকবেন দোয়া রইল।
সত্যিই আপনার মন্তব্যগুলিও আলাদা হয় যা আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করে ভাইয়া।ভালো লাগলো আপনার সুন্দর অনুভূতি জেনে,অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে😊।
কাঁচা আমের পোড়া শরবত আমার কখনোই খাওয়া হয়নি। শরবতটি দেখতে খুবই লোভনীয় লাগছে। আমাটকে চুলায় পোড়ার কারণে একদম পাকা আমের মতো লাল রসালো হয়ে গেছে। সত্যি শরবতটি দেখে আমার খুবই খেতে ইচ্ছে করছে।
হ্যাঁ ভাইয়া, একদম পাকা আমের মতোই হয়ে গিয়েছিল পোড়ানোর পর আর খেতে বেশ মজার হয়েছিল।এভাবে বানিয়ে খেয়ে দেখবেন, খুব ভালো লাগবে।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
টুইটার লিংক
কাঁচা আম পুড়িয়ে একেবারে পাকিযে ফেলেছে আপু দেখেই তো মনে হচ্ছে পাকা। আম এভাবে করে পুড়িয়ে কখনো কাঁচা আমের শরবত তৈরি করে খায়নি। পুরানোর কারণে শরবত এর রংটা অন্যরকম দেখাচ্ছে ।আমারতো দেখেই খেতে ইচ্ছা করছে। কাঁচা আমের শরবত এমনিতেই অনেক ভালো লাগে তারপর আবার আপনি কত সুন্দর করে পুড়িয়ে তৈরি করেছেন ভালোই লাগবে মনে হয় খেতে।
ঠিক বলেছেন আপু, একদম পাকা আমের মতোই হয়ে গিয়েছিল পোড়ানোর পর আর খেতে বেশ মজার হয়েছিল।এভাবে বানিয়ে খেয়ে দেখবেন, খুব ভালো লাগবে।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
এরকম শরবত আমি আগেও খেয়েছি। খেতে অসাধারণ লাগে। আপনি খুবই সুন্দর একটি শরবত এর রেসিপি তৈরি করেছে এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছেন। আপনি ধাপ গুলো খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া,আপনার সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য।
কাঁচা আমের শরবত বা জুস যেটাই বলি না কেন আমার কাছে খেতে দুর্দান্ত লাগে। তবে কখনো আম পুড়িয়ে এভাবে জুস বানানো হয়নি। ফুড ব্লগারদের কল্যাণে এই আম পান্নার নাম শুনেছি ইউটিউবে দেখেছি ও। আপনার রেসিপিটা দেখে এখন চিন্তা করছি সুন্দরভাবে বাসায় বানানো যাবে। তবে জুস বানানোর পেছনে আপনার রক্তক্ষরণের গল্প শুনে কিছুটা খারাপ লাগলো। গ্রেটার গুলো খুবই ধারালো হয়ে থাকে। তাই খুব সাবধানে এটা পরিষ্কার করা উচিত। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাইয়া, গ্রীষ্মকালে ফলের মধ্যে আম তো রাজা।এটি সত্যিই খুব স্বাদের খেতে ,খেয়ে দেখবেন এভাবে করে।আশা করি ভালো লাগবে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া, এই নিয়ে 3 বার আঙুল কাটলো গ্রেটার দিয়ে।😢😢অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সুন্দর ভাবে পরামর্শ দেওয়ার জন্য।
কাঁচাআম পোড়া দিয়ে যে জুস তৈরি করেছেন এটা খেতেও দারুন লাগবে আর ভীষণ পুষ্টিকর বটে। দারুন একটি শরবতের আইডিয়া দেখলাম।
সত্যিই অনবদ্য।
ভালো থাকবেন দিদি।
খুব ভালো খেতে ভাইয়া, খেয়ে দেখবেন এভাবে বানিয়ে পরিবারের সঙ্গে।বেশ মজার, অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
কাঁচা আম পড়া দিয়ে মজাদার আম পান্না শরবত আমার কাছে একদমই নতুন লেগেছে। নতুন এই শরবতের রেসিপিটি দেখে মনে হচ্ছে খেতেও অনেক সুস্বাদু হবে। তাছাড়া আপনি অনেক চমৎকার করে আম পান্না শরবত তৈরি রেসিপি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। এখন আমরা খুব সহজেই কাঁচা আম পোড়া দিয়ে আম পান্না শরবত তৈরি করতে পারব। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ ভাইয়া, খুব সহজেই কম উপকরণ দিয়ে এটি আপনি বানিয়ে ফেলতে পারবেন।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
কাচা আম দিয়ে আম পানা শরবত দেখেই মনে হচ্ছে অনেক লোভনীয় একটা রেসিপি হবে।খুব নিখুত ছিল। আর অনেক লোভ লাগছে আপু।খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে ধাপ গুলো উপস্থাপনা করেছেন ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ভাইয়া।
কাঁচা আমের শরবত বা জুস অনেক খেয়েছি কিন্তু আম পোড়া দিয়ে পান্না শরবত কখনো খাওয়া হয়নি। একদম নতুন একটি রেসিপির সাথে পরিচিত হলাম। খুবই ভালো লাগলো আপনার তৈরি পান্না শরবতের তৈরীর পদ্ধতি টা দেখে। ভিন্ন স্বাদের রেসিপি ভিন্ন ধরনের কোনো আইটেম দেখতে পেলে আমার কাছে তা খুবই ভালো লাগে। আর এই ভালো লাগা রেসিপিটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
দারুণ বলেছেন ভাইয়া, আমিও চেষ্টা করি সবসময় ভিন্ন কিছু উপহার দেওয়ার আপনাদেরকে।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।