ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা||পর্ব-৫

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছো আশাকরি প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের সাথে সবাই ভালো আছো, কারণ আমার বাংলা ব্লগ সব সময় ভালোর পক্ষে। সবাইকে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আজ আমি আপনাদের সামনে আমার নতুন লেখা ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার পঞ্চম পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি। আমার জীবনে দেখা প্রতিটি বিশ্বকাপের মুহূর্তগুলো সম্পর্কে এবং ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে আমার আবেগ এবং অনুভূতি গুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা পড়ে আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
football-345715_960_720.jpg
Source
বন্ধুরা তোমাদের সাথে এ পর্বে কথা বলব আমার দেখা ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ আমার জন্য অন্যরকম এক আবেগময় বিশ্বকাপ আসর, এই আসরে আমি প্রায় প্রতিটা ম্যাচ উপভোগ করেছি। আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা যেভাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তাতে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো দেখার প্রতি আগ্রহটা প্রবল আকার ধারণ করেছে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনার সেবারের একটি অ্যাওয়ে জার্সি কিনেছিলাম, প্রিয় দলের প্রতিটা ম্যাচ দেখার সময় ওই জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলা দেখতাম। যদিও ওই জার্সিটা ফাইনাল খেলা শেষে গায়ে থেকে খুলে ফেলেছিলাম এবং পরবর্তীতে আর কখনো গায়ে জড়ানো হয়নি মনের কষ্টে। সেবারের ফাইনাল খেলা দেখার পর আর্জেন্টিনা দলের অ্যাওয়ে জার্সি দেখলে নিজের কাছে বিরক্ত লাগত, কারণ ওই জার্সি গায়ে আমার প্রিয় দল ফাইনালে হেরেছে। বন্ধুরা এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করব ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ নিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল খেলা অব্দি আমার বিশ্লেষণ।

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিলে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফিফা আয়োজিত বিশ্বকাপের ২০তম আসর। ফুটবল যাদের আবেগ, ফুটবল যাদের ধ্যান-জ্ঞান, ফুটবল যাদের জীবনের বহিঃপ্রকাশ সেই ব্রাজিলেই অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের আসর। বলা হয় ব্রাজিলিয়ানদের জীবনের দুইটি খোরাক, একটা হচ্ছে ফুটবল আরেকটি হচ্ছে উৎসব। ২০১৪ সালে ব্রাজিলে ফুটবল এবং উৎসব এই দুটি খোরাক মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ১৯৫০ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করে ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী এই দেশ। এ বিশ্বকাপের খেলা গুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৩ই জুন থেকে ১৩ই জুলাই পর্যন্ত।
people-2608316_960_720.jpg
Source
বরাবরের মতই এ আসরটিতে বাছাইপর্ব থেকে উত্তীর্ণ হওয়া মোট ৩২টি দলের অংশগ্রহণে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। আসরের গ্রুপ পর্বের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয় ৩২টি দল আটটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে। গ্রুপে এ তে অংশগ্রহণ করে ব্রাজিল এবং গ্রুপ এফ এ অংশগ্রহণ করে আমার প্রিয় আর্জেন্টিনা দল। গ্রুপ পর্বের খেলায় পয়েন্টের ভিত্তিতে আটটি দল অর্থাৎ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স আপ দল সুযোগ পায় ১৬ দলের নকআউট পর্ব খেলার।

নকআউট পর্বে মূলত কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে খেলা জয় পরাজয় নিশ্চিত না হলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট প্রদান করা হয়, যদি এতেও খেলা শেষ না হয় তাহলে পেনাল্টি শুট আউটের মাধ্যমে খেলার ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। গ্রুপ পর্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা হল গতবারের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ান স্পেনের বিদায়। তারা শোচনীয়ভাবে নেদারল্যান্ডসের কাছে গ্রুপ পর্বে ৫-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে।
football-3471307_960_720.jpg
Source
নকআউট পর্বের শেষ ষোল দলের অংশগ্রহণে জয়ী আট দল সুযোগ পায় কোয়াটার ফাইনাল খেলার। কোয়াটার ফাইনালে সুযোগ পাওয়া দলগুলো হল, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, কোস্টারিকা, আর্জেন্টিনা ও বেলজিয়াম। গত দুই বিশ্বকাপে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় হতে হয়েছিল। এই বিশ্বকাপে সে ধারাকে ভেঙে আর্জেন্টিনা বেলজিয়াম কে পরাজিত করে এবং ব্রাজিল কলম্বিয়া কে পরাজিত করে সেমিফাইনালের টিকিট পায়। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল ছাড়া সেমিফাইনালের অন্য দুটি দল হল জার্মানি এবং নেদারল্যান্ড। জার্মানি ফ্রান্সকে হারিয়ে এবং নেদারল্যান্ড কোস্টারিকা কে হারিয়ে সেমিফাইনালে উন্নীত হয়। আর্জেন্টিনা এবং আর্জেন্টিনার সমর্থকদের জন্য সেমিফাইনাল ছিল দারুণ এক রোমাঞ্চকর পর্ব। যে খেলায় ১৯৯০ সালের পর আবারও তারা নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে, ট্রাই-বেকারে নেদারল্যান্ড ৪-২ গোলে হারিয়ে এ কৃতিত্ব অর্জন করে। সেমিফাইনাল ছিল ব্রাজিল এবং ব্রাজিলের দর্শকদের জন্য বিভীষিকাময় পর্ব। সেমিফাইনালের এই গুরুত্বপূর্ণ খেলায় নেইমার এবং থিয়াগো সিলভা অনুপস্থিত ছিল, তারা জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে গিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়। ব্রাজিল এমনকি বিশ্বের কোন ফুটবল প্রেমী কল্পনাও করতে পারেনি তাদের এমন নিদারুণ পরাজয়ের কথা।
argentina-1644805_960_720.jpg
Source
এবার আসি আর্জেন্টিনা এবং আর্জেন্টিনা সমর্থকদের স্বপ্নভঙ্গের এক ফাইনালের কথা নিয়ে। পুরো বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা দারুণ দাপটের সাথে খেলে ফাইনালে উঠে এসেছে, ম্যারাডোনার পর মেসির হাত ধরে দুই যুগ পর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল তারা। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই বিভীষিকাময় স্মৃতির আবার পুনরাবৃত্তি হয় ২০১৪ সালে, প্রতিপক্ষ সেই জার্মানি। আর্জেন্টিনা ফাইনালে দারুণ কিছু গোলের সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ম্যাচটি জিতে নিতে পারেনি। ফাইনাল ম্যাচে দারুণ দাপটের সাথেই খেলে আসছিল আর্জেন্টিনা কিন্তু তুলনামূলক কম সুযোগ পাওয়া জার্মানি অতিরিক্ত মিনিটে গোল দিয়ে বসে যা আর্জেন্টিনার জন্য আরেকটা বিশ্বকাপ অধরা হয়ে থাকে। ওই খেলা দেখার পর আমার কাছে আর্জেন্টিনার দুইজন খেলোয়াড় চিরদিনের জন্য ঘৃণার পাত্র হয়ে যায় তারা হলো, গঞ্জালো হিগুয়েন ও পলাসিও। দুজন খেলোয়াড়ই দুটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে আমাদের স্বপ্ন জয়ের সম্ভাবনাকে বিলীন করে দেয়। ফাইনালের ওই খেলা দেখে আমি তিন দিন ঘুমাতে পারিনি এবং ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারিনি স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশায়। তারপরও আর্জেন্টিনার একজন খাঁটি সমর্থক হিসাবে প্রত্যাশা করতেই পারি পরবর্তী বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, আবার আপনাদের সামনে হাজির হব আমার নতুন লেখা নিয়ে অন্য একসময়। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিদায় নিচ্ছি, ধন্যবাদ ধৈর্য-সহকারে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।

amarbanglablog.gif

Sort:  
 2 years ago 

সত্যি বলতে একটা সময় আর্জেন্টিনা ব্রাজিল জার্মানি এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতাম। তবে কেন জানি খেলার উপর থেকে অনেকটা মন উঠে গেছে বাস্তবতা ও বাস্তবতার চাপে সম্ভবত। যাই হোক আপনার প্রিয় দলর আর্জেন্টিনা জেনে আনন্দিত হলাম ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আমি আজ পর্যন্ত কোন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখিনি। তবে ফুটবল আমার একটা প্রিয় খেলা।খেলতে তেমন একটা পারি না কিন্তু তাও খেলতে ভালো লাগে। তবে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের নামে অনেক শুনেছি। ব্রাজিল সাত গোল খেয়েছিল এটা অনেকবার শুনেছি কিন্তু কত সালের বিশ্বকাপে চারটি গোল খেয়েছিল এটা জানতাম না। আজকে আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আপনার প্রিয় দল যে আর্জেন্টিনার জন্য ভালো লাগলো শুভকামনা রইল আপনার দলের জন্য।

 2 years ago 

আগে খেলার প্রতি আমার খুবই আকর্ষণ ছিল এখন আস্তে আস্তে বড় হওয়ার সাথে সাথে খেলার উপর থেকে প্রত্যেকটা আকর্ষণ কেমন জানি চলে গেছে। আগে সবাই মিলে অনেক দেখতাম খেলা কিন্তু এখন আর ভালো লাগেনা। আপনার এই পোস্টের মাধ্যমে আজকে আবার মনের ভেতর ফুটবলের প্রতি একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হল খুবই ভালো লাগলো।

 2 years ago 

আমারো প্রিয় দল আর্জেন্টাইন আর প্রিয় দল কে নিয়ে উন্মাদনা থাকবেই এবাবো জার্সি কিনেছি পতাকা কিনেছি । আর মাত্র বাকি কয়েকদিন তার পরেই খেলা হবে ধন্যবাদ শেয়ারর করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58559.96
ETH 3156.41
USDT 1.00
SBD 2.44