অপরাধী জীবন||পর্ব-৫||@shy-fox 10% beneficiary
- ২৮ আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
- ১৩ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
- ১৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৪ হিজরি
- বৃহস্পতিবার
- শরৎকাল
কেমন আছো বন্ধুরা, আশা করছি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছো আমাদের প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের সাথে। আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমার মনের কথাগুলো আমার বাংলা ব্লগেরমাধ্যমে তোমাদের সাথে শেয়ার করতে পারছি। আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আমার লেখা অপরাধী জীবন গল্পের পঞ্চম পর্ব নিয়ে। মনের অজান্তে আমাদের সামাজিক জীবনে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে যায়, যার সাথে জড়িত না থাকা স্বত্বেও সেটা যার জীবনে ঘটে তার ব্যক্তি, সামাজিক এবং পারিবারিক জীবন যে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে অতিবাহিত হয় তারই অবলম্বনে বাস্তবতার আলোকে গল্পটি আপনাদের জন্য লেখা। আশা করছি অপরাধী জীবন গল্পটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।
Source
এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করার কিছুদিন পর সাথী ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়ে কলেজে পড়াশোনা শুরু করে,আকাশ তখন জেলে বসে বসে দুশ্চিন্তা করছে পরবর্তী জীবন তার কোন দিকে যাবে সেটা ভেবে। সাথী স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে অন্যদিকে আকাশের মামলা চলমান। মাঝে মাঝে আকাশের মা এবং ভাই তাকে দেখে যায়, তার সকাল শুরু হয় জেলখানাতে এবং সূর্যাস্ত যায় জেলখানায়। বন্দী জীবনের সাথে সে নিজেকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করছে। যাইহোক মামলা তার নিজস্ব গতিতে চলছে, মাঝে মাঝে মামলার জন্য গিয়ে হাজিরা দিতে হয়। এভাবে প্রায় ছয় মাস কেটে গেল,কিন্তু মামলা থেকে জামিন পাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।
হঠাৎ একদিন আকাশের ভাই এসে বলল তোমার জামিনের জন্য সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে ইনশাল্লাহ আগামী সপ্তাহে জামিন হতে পারে উকিল আমাকে বলেছে। এ সংবাদ আকাশের কানে আসার সাথে সাথে সে কিছুটা আনন্দিত হয় আবার কিছুটা শঙ্কিত হয়। আনন্দ হয় এই ভেবে যে, সে কোন অন্যায় করেনি এবং ঘটনার সাথে সে কোনোভাবেই জড়িত নয় সুতরাং তার জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে যেহেতু অন্যায় না করে, ঘটনার সাথে জড়িত না থেকেও ভাগ্য দোষে প্রায় ছয় মাস জেলে আছি, তার সাথে আর কোন অন্যায় হবে না সেটাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। পরবর্তী সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আকাশ আদালতে উপস্থিত হয়ে এক বছরের জন্য জামিন পেল, বৃহস্পতিবার হওয়ার কারণে ঐদিন আর সে জামিনে বের হতে পারল না, পরবর্তী সপ্তাহের রবিবার সে বের হয়ে আসলো। আকাশের মন খুশিতে আত্মহারা, জামিন পেয়ে আকাশের মা ও ভাই খুশির কান্না কেঁদেছিল ঐদিন। জামিনে পেয়ে আকাশ বাড়িতে আসার পর সাথী তাকে দেখতে আসে, আকাশকে দেখে সে অঝোরে কাঁদতে থাকে।
Source
বাড়িতে এসে আকাশ কিছুদিন স্বাভাবিক ভাবে জীবন-যাপন করার চেষ্টা করলো। মাঝে মাঝে সাথীদের বাড়িতে গিয়ে সাথীকে দেখে আসতো, সাথিও আকাশদের বাড়িতে এসে দেখা করতো। আবেগটা এমন হয়েছিল কেউ কাউকে না দেখে একদিনের জন্য থাকতে পারত না। মাঝে মাঝে সাথী আকাশ কে বলতো তুমি আমাকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাও আমরা দুজনে বিয়ে করে সংসার করি। আকাশ সাথীকে খুব বেশি ভালোবাসে কিন্তু তার মনে একটা ভয় কাজ করে, একদিকে তার মার্ডার কেসের মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি, তার মধ্যে যদি সে সাথীকে নিয়ে পালিয়ে যায় তাহলে আরও একটা মামলা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। একটা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সে দ্বিতীয় ভুল আর করতে চাইছিল না।
সাথী আকাশের কাছে পালিয়ে বিয়ে করার যে দাবি করেছিল সেটা আরও জোরালো হয়ে উঠলো যখন সাথীকে বিয়ের জন্য একটার পর একটা ছেলে দেখতে আসছে। আকাশের মনেও অনেক চিন্তা হচ্ছে ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার, আবার এটাও চিন্তা করছে, সে একজন বেকার এবং তার মামলা চলমান। সে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চাইছে না কারণ সাথীদের ফ্যামিলি কখনো আকাশের কাছে এই অবস্থাতে বিয়ে দেবে না। একদিন দুপুর বেলা সাথী আকাশকে খবর পাঠিয়েছে তার সাথে জরুরী ভিত্তিতে দেখা করার জন্য, আকাশ খবর পেয়ে সাথীদের বাড়ি উপস্থিত হল, এসে দেখল মানুষের আনাগোনা আর বুঝতে বাকি রইল না সাথীর বিয়ের জন্য ছেলে পক্ষ এসেছে। এই পাত্রপক্ষ আগেও একবার এসেছে সাথীকে দেখার জন্য এখন বিয়ের জন্য চূড়ান্ত ভাবে দিনক্ষণ ঠিক করতে এসেছে। সাথীদের ফ্যামিলি থেকেও ছেলেদের সাথে সম্বন্ধ করতে আপত্তি নেই একথা শুনে সাথী আমার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছিল। সে বারবার বোঝাতে চাচ্ছে এই বিয়েতে তার কোন মত নেই সে শুধু আমাকে বিয়ে করতে চায়, দুই পক্ষ বসে ওইদিনই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে।
Source
একই দিন সন্ধ্যার পর আকাশ তার ঘরে শুয়ে ছিল আকাশের মা ছিল অন্য ঘরে আর বড় ভাই বাড়ির বাইরে ছিল, সরাসরি আকাশের রুমের সাথীর উপস্থিতি, সে আকাশকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছে। আকাশ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে ভাগ্যে যা আছে তাই মেনে নিতে কিন্তু সাথী কোনভাবেই বিয়ে করবে না, সে প্রয়োজনে আত্মহত্যা করবে এবং আরও বলে আকাশকে ছাড়া অন্য কোন ছেলেকে তার জীবনে সঙ্গী হিসাবে মেনে নিতে পারবে না। কিন্তু আকাশ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে এই সময় তারা যদি নতুন কোন ভুল করে তাহলে তাদের দুই পরিবার এর ফলাফল ভোগ করবে। একটা পর্যায় আকাশ সাথীর হাত ধরে তাদের বাড়িতে বুঝিয়ে-শুনিয়ে রেখে আসলো।
এরিমধ্য আকাশের মা ভীষণ অসুস্থ, গলা দিয়ে কাশির সাথে রক্ত পড়ছে আকাশ ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ল মাকে নিয়ে। স্থানীয় ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী মাকে ঢাকা নিয়ে আসলো চিকিৎসার উদ্দেশ্যে, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর তার মায়ের যক্ষ্মা হয়েছে বলে ডাক্তার নিশ্চিত করলো। কিছু ওষুধ দিয়েছিল কিন্তু ওষুধ নিয়মিত খাওয়ার পরেও তার সমস্যার সমাধান হল না। আকাশ আবার তার মাকে নিয়ে ঢাকায় আসলো চিকিৎসার উদ্দেশ্যে, এইবার পরীক্ষা করার পর ডাক্তার তাকে যা শোনালো তা কখনো সে কল্পনাও করতে পারেনি। ডাক্তার জানালেন তার মায়ের লিভার ক্যান্সার হয়েছে তাকে খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন করাতে হবে তা না হলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। আকাশ খুব তড়িঘড়ি টাকা পয়সার ব্যবস্থা করে তার মায়ের অপারেশনের ব্যবস্থা করল,কিন্তু আকাশের মায়ের অবস্থা ততদিনে অপারেশন করানোর পর্যায় নেই।
Source
বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, দেখা হবে আমার লেখা অপরাধী জীবন গল্পের পরবর্তী পর্বে। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
সত্যি অপরাধ না করেও মানুষ সাজা পেয়ে থাকে। যেমন আকাশের বেলায় হয়েছে। জেল থেকে বের হয়ে ভালোবাসার সাথে সাথে দেখা করলে এবং সাথী তাকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। আকাশ কি করবে একদিকে মার্ডার কেসের আসামী অন্যদিকে ভালোবাসার কথা। এরপর তার মায়ের অসুস্থ চিকিৎসক বললো ক্যান্সার। অন্যদিকে সাথীর বিয়ে দেওয়ার খুব চেষ্টা চালাচ্ছে তার ফ্যামিলি। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে উপস্থাপনা করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
আমার অপরাধী জীবন গল্পের উপস্থাপনা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। অনেক ধন্যবাদ আপু ধৈর্য-সহকারে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য।