অপরাধী জীবন||পর্ব-৬||@shy-fox 10% beneficiary
- ০২ কার্তিক, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
- ১৮ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
- ২১ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৪ হিজরি
- মঙ্গলবার
- হেমন্তকাল
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুদের জানাচ্ছি শুভেচ্ছা, আশাকরি সকলে ভালো আছো আমিও ভালো আছি। কর্ম ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে সময় করে আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আমার নতুন লেখা অপরাধী জীবনের ষষ্ঠ পর্ব নিয়ে। মনের অজান্তে আমাদের সামাজিক জীবনে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে যায়, যার সাথে জড়িত না থাকা স্বত্বেও সেটা যার জীবনে ঘটে তার ব্যক্তি, সামাজিক এবং পারিবারিক জীবন যে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে অতিবাহিত হয় তারই অবলম্বনে বাস্তবতার আলোকে গল্পটি আপনাদের জন্য লেখা। আশা করছি অপরাধী জীবন গল্পটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।
Source
প্রায় মাস খানেক ঢাকায় চিকিৎসা করার পর ডাক্তার আকাশকে ডেকে নিয়ে জানালেন তার মা আর পৃথিবীতে বেশি দিন নেই, ডাক্তার তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করবে চিকিৎসার ব্যাপারে। ডাক্তার আগেই বলেছিল তার গলব্লাডার স্টোন থেকে লিভার ক্যান্সার হয়েছে, এখন আর অপারেশনের অবস্থাতে নাই। আকাশ আগেই কিছুটা বুঝতে পেরেছিল তার মায়ের অবস্থা খুব বেশি ভালো না, ডাক্তার এর কাছ থেকে আরও নিশ্চিত হল এখন। সে নিজের মনকে শক্ত করার চেষ্টা করল। ডাক্তারের কাছ থেকে খবর শোনার পর মায়ের বেডের কাছে যায়নি কারণ মায়ের সামনে তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করল, আল্লাহর কাছে মায়ের সুস্থতার জন্য দোয়া চাইল। সে তখন নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না, ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মায়ের কোলে পিঠে মানুষ হওয়া, তার উৎসাহে পড়াশোনা শিখে বড় হওয়ার চেষ্টা করা। আর সেই মানুষটাই যদি পৃথিবীতে না থাকে কার জন্য আকাশ স্বপ্ন দেখবে, কাকে নিয়ে সে বাঁচবে। অন্যদিকে বিনা অপরাধে খুনের মামলার আসামি সে, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে বারবার বলছিল, আমি কি অন্যায় করেছি খোদা তোমার কাছ, আমাকে তুমি এত বড় শাস্তি কেন দিচ্ছ।
Source
যাই হোক নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করে মায়ের কাছে গেল, মাকে বুঝতে দিল না তার ভিতরকার কষ্টের কথা। এক মাসের মত ঢাকায় চিকিৎসা শেষ করে মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেল। আকাশের মাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর মহল্লার সবাই দেখতে এসেছে, কেউ কান্নাকাটি করছে, কেউ আকাশের পরিবারের অন্যদের কে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে। সাথী এসেছিল আকাশের মাকে দেখতে, এই পরিস্থিতিতে আকাশকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করল। ঢাকায় মায়ের চিকিৎসার সময় সাথীর বিয়ের তারিখ ধার্য হয়ে যায়, বাড়িতে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর শুক্রবার বিয়ের দিন ঠিক হয়। সাথীর মা আকাশ দের বাড়ি এসে বিশেষভাবে তাকে অনবরোধ করে গেছে, তার মেয়ের বিয়েতে সে যেন নিজের ছেলের মতো দায়িত্ব নিয়ে ঘর সাজানোর কাজ করে। আকাশ কিছুটা অভিমানের বসে সাথীর মায়ের কথায় সায় দিয়ে রাজি হয়ে গেল। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে, জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল বিনা অপরাধে খুনের মামলায়, তারমধ্যে মায়ের এই খারাপ সংবাদ,ভালোবাসার মানুষের বিয়ে। সব কষ্ট গুলো একাকার হয়ে তার মন এক রকমের পাথর হয়ে গেছে।
Source
সাথীর বিয়ের জন্য সকল ধরনের কেনাকাটা, বাড়ি সাজানোর জন্য ফুল থেকে শুরু করে সকল কিছু নিজ হাতে সামলেছে আকাশ। এদিকে সাথী খুব বিমর্ষ অবস্থায় ছিল, এমন পরিস্থিতিতে আকাশকে সে বিয়ের জন্য চাপ দিতে পারছে না আকাশের মামলা এবং মায়ের অসুস্থতার কারণে, অন্যদিকে সে আকাশকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে অন্য কারো হাত ধরতে চাইছে না। বিয়ের আগের দিন সাথীর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল, ওই অনুষ্ঠানে সবাই নাচ-গান করে আনন্দ করছিল কিন্তু আকাশ বিমর্ষ অবস্থায় নিজ গৃহে অবস্থান করছিল। হঠাৎ সাথী তাকে সন্ধ্যার পর খবর পাঠায়, বাড়ির পাশে রাতের বেলা দেখা করার জন্য। খবর পেয়ে রাতে আকাশ সাথীর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে ওদের বাড়ির পাশে গেল। সময় মত সাথী সেখানে উপস্থিত হল, সাথী আকাশকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করল। সে বারবার বলতে চাইল তাকে আজকে রাতে নিয়ে বিয়ে করার জন্য। আকাশ এই পরিস্থিতিতে কোনভাবেই সেটা সম্ভব না বলে সাফ জানিয়ে দিল, সাথীকে বুঝিয়ে অনেক কথা বলেছিল। একপর্যায়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে দুজন দুদিক চলে যায়।
Source
পরের দিন সাথীর বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায় এবং সাথী প্রচণ্ড পরিমাণ ভেঙে পড়ে বিয়ের দিন, সে বারবার শুধু আকাশের দিকে তাকাচ্ছিল। বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর সাথী তার স্বামীর সাথে শ্বশুরবাড়ি চলে যায় আর আকাশ বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ করে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করে। সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করছে কিন্তু কোনভাবেই পারছেনা, সে বারবার একটা কথা ভাবছে, ছোটবেলা থেকে যাকে এত ভালোবাসে আজ তাকে নিজ হাতে বিয়ে দিলাম অন্যের কাছে। সাথীর চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না, চিন্তা করতে করতে চার থেকে পাঁচটি ঘুমের ওষুধ একসাথে খেয়ে অচেতন হয়ে ঘরের মধ্যে পড়েছিল। দুদিন পর সে নিজেকে আবিষ্কার করল উপজেলা সদর হাসপাতালে, জানতে পারে বাড়ির মানুষ ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে তার ঘরের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চকিৎসা করা হয়।
সাথী দুদিন পর শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে আকাশের এই ঘটনা জানতে পারে এবং জানা মাত্রই সরাসরি আকাশদের বাড়িতে গিয়ে তার ঘরে ঢুকে তাকে জড়িয়ে ধরে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করে। বরাবরের মতই আকাশ তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।এভাবেই আকাশ তার কষ্ট গুলোকে বুকে ধারণ করে দিনযাপন করছে, সাথীও কিছুদিন শ্বশুরবাড়ি কিছুদিন বাপের বাড়ি যাওয়া আসার মধ্যে আছে। মাস পাঁচেক পর হঠাৎ একদিন রাতে আকাশের মায়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়, সে প্রচণ্ড বমি করে আকাশ তাড়াহুড়া করে মাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে তার মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বন্ধুরা আজ এখানেই থামতে হচ্ছে, সময় বুঝে আবার আপনাদের সামনে কোন এক সময় অপরাধী জীবন গল্পের শেষ পর্ব নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে ধৈর্য নিয়ে আমার লেখা পড়ার জন্য।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আপনার পোস্টটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো। একদিকে আকাশের মার অবস্থা খারাপ সে বেশিদিন আর বাঁচবে না। অন্যদিকে তার ভালোবাসার সাথির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারপরও সাথী তাকে খবর দিয়ে দেখা করেন রাত্রে। আকাশ ও তার সাথে দেখা করলে কিন্তু সেই সাথীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন না। সে অনেক কষ্ট করে তাকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে। আকাশ কিন্তু তার মায়ের কথা খুব চিন্তা করলেন। শেষ পর্যন্ত আকাশের মায়ের মৃত্যুটি পরে খুব খারাপ লাগলো আরো। আপনি খুব কষ্টের একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
প্রতিটি কোথায় যথার্থ বলেছেন যেখানে কর্ম জীবন জীবন জীবিকার থেকে কর্ম করতেই হবে৷
তবে সত্যি বলতে আপনার এই ব্লগটি পড়ে আমার নিজেরই চোখের কোনে পানি জমে গেল ৷ আকাশের জীবন কাহিনীর হিস্টরি শুনে সত্যি জীবনের নির্মম এ করুন দুর্দশা আসলে কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয় ৷ তবুও যে এত কিছু বুঝে শুনে নিজেকে সামলে এত বড় ত্যাগ তিতিক্ষার সামলিয়ে নিয়েছেন এটাই সবচেয়ে বড়৷ আকাশ জানে যে তার জীবনের কতটা কষ্টের মধ্যে সে বড় হয়েছে যে বাবা তাকে ছোটবেলায় ছেড়ে চলে গেছে ৷ মায়ের কাছ থেকেই ছোট থেকেই লালিত হয়ে আজ বড় হয় সে মায়ের মৃত্যু এটা আসলে সত্যিই বড় কষ্টদায়৷ একদিকে ভালোবাসা আরেকদিকে তার মায়ের অসুস্থতা সবমিলেই বড় পরীক্ষার মধ্যেই পড়তে হয়েছিল৷ আসলে এখানে কিছু করার নেই জীবনের কিছু কিছু কষ্ট একাই সহ্য করতে হয়। যেমনটা আকাশের মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে৷ খুবই খুবই ভালো লাগলো তবে হ্যাঁ সত্যিই বড় কষ্ট পেয়েছি৷
আর এভাবেই বাস্তব জীবনেও অনেক অনেক ভালোবাসা হারিয়ে যায়