গল্প:- ভেলকি মজিদ (◠‿◕) এক ঠান্ডা মাথার চোর || (পর্ব ০৩ - ভেলকি দিয়ে দুষ্টের দমন)
পর্ব ০৩ - ভেলকি দিয়ে দুষ্টের দমন |
---|
মজিদকে ফ্যাক্টোরির মালিক রুস্তম শেখ জিজ্ঞাসা করলেন কতদূর লেখাপড়া করেছো? মজিদ আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো এসএসসি পর্যন্ত কিন্তু আপনার এই ফ্যাক্টোরি চালানোর সক্ষমতা আমার আছে। রুস্তম শেখ ওর আত্মবিশ্বাসী উত্তরে ভীষণ খুশি হলো। যাও তোমাকে আজ থেকে এই ফ্যাক্টোরির ম্যানেজার বানিয়ে দিলাম কিন্তু প্রতিটা জিনিসের পাই পাই হিসেব আমি চাই, বিনিময়ে তুমি ভালো বেতন এবং থাকা খাওয়ার সুযোগ পাবে। মনে মনে মজিদ বললো এই সুযোগটাই আমি চাইছিলাম।
শুরু হলো মজিদের ম্যানেজারের চাকরি। পরিকল্পনা মাফিক এগুতে হবে তার। মজিদ ঠান্ডা মাথায় বেশ কিছু পরিকল্পনা করে নিল। প্রথম পরিকল্পনা হলো মালিক রুস্তম শেখের বিশ্বাস অর্জন করা, দ্বিতীয় পরিকল্পনা ফ্যাক্টোরিতে একটা ভালো আধিপত্য তৈরি করা। মজিদ কাজে নেমে পড়লো। প্রথমেই সকল শ্রমিক তাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারলো না। তখন সে একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করলো। প্রত্যেক শ্রমিক আট ঘণ্টা করে কাজ করবে এবং শিফট ভাগ করে দিল। এরপর কেউ যদি অতিরিক্ত কাজ করে তাহলে তাকে ঘন্টা হিসেবে দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দেয়া হবে। ব্যাস শ্রমিকের আনন্দ দেখে কে।
এদিকে মালিক রুস্তম শেখ ক্ষেপে গিয়ে মজিদকে ডেকে পাঠালেন। তখন মজিদ বললো স্যার আপনার রুটির উৎপাদন দ্বিগুণ যদি না বাড়ে তাহলে তার পরদিন আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো। রুস্তম শেখ আর কিছুই বললো না। মজিদ শ্রমিকদের এসে শুধুমাত্র এতটুকু বলে দিল সে কথা দিয়ে এসেছে এক সপ্তাহের মধ্যে রুটির উৎপাদন দ্বিগুণ করবে না হলে সে চাকরি ছেড়ে দেবে। ব্যাস পুরো ফ্যাক্টরি জুড়ে ধুন্দুমার কাজ শুরু হয়ে গেল। মজিদ জানে এতেই তার কাজ হয়ে যাবে। এবার মজিদ দ্বিতীয় পরিকল্পনার দিকে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। তার একটা শক্ত ধাঁচের বিশ্বস্ত লোক দরকার, যে সৎ এবং সবকিছু সামলাতে পারবে। খুঁজতে খুঁজতে মধ্যম বয়সী একটা লোকের দিকে নজর পড়লো তার। লোকটিকে সবার থেকে আলাদা মনে হলো তার কিন্তু বেশ মনমরা থাকে সবসময়ই। মজিদ তাকে অফিস রুমে ডাক দিয়ে বললো আপনার কি নাম ভাই। লোকটা বললো জলিল আকন্দ। মজিদ বললো তো জলিল ভাই আপনার মন সবসময়ই খারাপ থাকে আমি খেয়াল করলাম।
জলিল তার গল্প বলতে শুরু করলো, তার বাবার অঢেল সম্পদ কিন্তু মা মারা যাওয়ার পর বাবা আবার বিয়ে করে। সৎ মা সবকিছু হাতিয়ে নিয়েছে আর তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এখন তার দুই সৎ ভাই সব ভোগ করছে। তখন মজিদ বললো আপনি কিছু করতে পারলেন না। তখন জলিল কেঁদে বললো ওরা আমার একমাত্র সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে তাই আর বেশি আগাতে পারলাম না মজিদ ভাই। মজিদের চোখ ততক্ষণে লাল হয়ে গেছে আর মেজাজ টগবগ করে ফুটতে শুরু করেছে।
মজিদ বললো জলিল ভাই আমি কথা দিচ্ছি আমি আপনার অধিকার আদায় করে দিব কথা দিলাম। আপনি শুধু মাত্র আমার সাথে থাকেন। জলিলকে তার পছন্দ হলো কারন ও কিছুটা লেখাপড়াও জানে। জলিল মজিদকে বললো ভাই আজ থেকে আমি আপনার সাথে আছি। ব্যাস মজিদের আরো একটা সমস্যা মিটে গেছে।
এদিকে প্রতিদিন উৎপাদন আগের দিনকে ছাড়াতে থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক দ্বিগুন পৌছে গেছে। কারন শ্রমিকরা আনন্দের সাথে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে গেছে। সাত দিন পর রুস্তম শেখ ফ্যাক্টোরিতে এসে অবাক হয়ে গেছে, সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর সত্যিই উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সে মজিদকে বুকে জড়িয়ে নিল। মজিদ মনে মনে বললো তোমার দিন ফুরিয়ে আসছে রুস্তম শেখ, কিন্তু মুখে হাসি বহাল রাখলো। এদিকে মজিদ শ্রমিকদের জন্য একবেলা ভালো খাবারের ব্যাবস্থা করলো। রুস্তম শেখ প্রথমেই মানা করলেও পরে মেনে নিয়েছে। এদিকে মজিদের জয় জয়কার ছড়িয়ে পড়েছে শ্রমিকদের মাঝে।
যেখানে শ্রমিক পাওয়া যেতো না, সেখানে প্রতিদিন দরজার বাহিরে লোক চাকরির জন্য লাইন ধরতে থাকে সকাল থেকেই। মজিদ শ্রমিকদের কাছে অনেক বিশাল কিছু। সে প্রত্যেকের বেতন দশ শতাংশ হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু বয়স্ক শ্রমিক তাকে ছেলের মতো বুকে জড়িয়ে নিয়ে দোয়া করলেন আর বললেন তুমি আমাদের আগের মালিকের মতো বাবা। আজ মালিক নেই কিন্তু তুমি আছো বাবা।
গত তিন মাসে মজিদ তার লক্ষ্য ভুলে যায়নি এক মুহুর্তের জন্য। এখন সময় রুস্তম শেখকে আঘাত করার কারন আগের মালিক নিজের জীবন দিয়েছেন এই অসভ্য লোকটার জন্য। এদিকে তিন মাসে রুস্তম শেখ বিশাল টাকার মালিক হয়ে বেপরোয়াভাবে নেশায় মত্ত হয়ে গেছে। মজিদ সন্ধ্যায় তার বাসায় হাজির হয়েছে তার সমস্ত কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে। মূলত এগুলো ছিল তার সমস্ত সম্পদ মজিদের নামে করে নেয়ার দলিল। মজিদ কিছু হিসেবের কাগজের সাথে এগুলো রেখে নেশায় মত্ত রুস্তম শেখকে দিয়ে সব সই করিয়ে নিলো। সেখানে স্পষ্ট লিখা সে মজিদকে সজ্ঞানে তার সমস্ত সম্পদ দান করছে।
সই করে নেয়ার পর পর এবার চূড়ান্ত মার দেয়ার পালা। মজিদ জানে রুস্তমের হাই প্রেসার রয়েছে আর আরো দুবার স্ট্রোক করেছে। তাই ওকে একটা ঝটকা দিলেই কাজ হবে।
এবার মজিদ প্রথমেই তার নেশা কাটানোর জন্য কিছু খাইয়ে দিল। এবার মজিদ বলা শুরু করলো আজ থেকে আপনার সমস্ত সম্পদ আমার হলো, এই দেখুন আপনার সাক্ষর। আর আপনি আগের মালিকের সাথে যা করেছেন তার শাস্তি স্বরুপ সব করলাম। রুস্তম ক্ষেপে গিয়ে মজিদকে ধরতে যাবে তখনই অতিরিক্ত উত্তেজনায় তৃতীয় বারের মতো স্ট্রোক করল। চোখ বড় করে বুকে হাত দিয়ে ধরাম করে মাটিতে লুটিয়ে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো রুস্তম। অত্যাচারী রুস্তমের অবসান হলো।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1578656668032053248?t=9HjLVBb2cA4rou4zLU3yXQ&s=19
মজিদ ম্যানেজার হবার পরেই বোঝা গেলো তার প্রতি শ্রমিকরা ভীষণ খুশি। অবশেষে ভেলকি মজিদ অত্যাচারী রুস্তমের অবসান ঘটালো। বিষটি জেনে আমার কাছেও ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে এমন মানুষ গুলোর পতন দেখলে নিজের কাছে ভালোই লাগে। আপনি ঠিকই বলেছেন মজিদ যেনো ভেলকি দিয়ে দুষ্টের দমন করলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো 🤲
ধন্যবাদ লিমন।
পরের পর্বে কিন্তু চমৎকার আকর্ষণ আছে।