ফ্রিজ নিয়ে বিড়ম্বনায় এবং যেভাবে সমাধান করলাম।|| Problem with my fridge and how I solved it.
শুভ রাত্রি আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি আমার আজকের আয়োজন। আমি মাঝে মাঝেই আমার পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে পছন্দ করি। কারন দেখা যায় আমি যে সমস্যায় আমি পরেছি তা যদি দু-চারজন মানুষের সাথে কথা বলি হয়তো তাদের উপকার হতেও পারে। যাইহোক সেই চিন্তা চেতনা থেকে আমার আজকের পোস্ট করা।
ঘটনাটা হলো গত কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই আমার ফ্রিজের নরমাল কাজ করছিলো না। খাবার এবং সবজিগুলো প্রতিনিয়ত নষ্ট হয়ে যেতো। আসলে আমি খাবার অপচয় করা একদমই সহ্য করতে পারিনা কারন পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে সামান্য খাবার খেতে পারে না। যাইহোক আমার ধারনা হলো আমি বাসায় পরিবর্তন করার সময় আমার ফ্রিজ সম্ভবত লোডার লোকজন কোথাও ধাক্কা খাইয়েছে এর কারনে হয়তো সুক্ষ্ম কোন লিকেজ তৈরি হয়েছে এবং ভেতরের গ্যাস হয়তো কমে গিয়েছে।
যথারীতি প্রতিদিন খাবার নষ্ট হচ্ছে আর আমার মন মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কিন্তু অফিসের কাজের চাপ বেশি থাকায় এটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে পারছিলাম না। এরপর চিন্তা করলাম আমার ফ্রিজ যেহেতু রেংকন এবং এসট্রা কোম্পানির তাই তাদের সাথে একটু কথা বলে দেখি কোন সমাধান পাওয়া যায় কিনা। আবার আমার ফ্রিজের বয়স ছয় বছর, মানে ফ্রি সার্ভিস পাবো না। যাইহোক দুপুরে দিকে কথা বললাম কাস্টমার কেয়ারে, তারা সমস্ত ব্যাপারগুলো শুনে এবং তথ্য সংগ্রহ করলো। এরপর সার্ভিস করানোর জন্য একটি কমপ্লেইন রাখলো এবং জানালো খুব দ্রুত সার্ভিস টিম আমার সাথে যোগাযোগ করবে।
যথারীতি পরদিন সকালে সার্ভিস টিম আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি লোকেশন বলে দেই এবং বাসায় নিয়ে আসি তাকে। সে কাজ শুরু করে দিল, আমি তার কাজ দেখে তো রিতিমত অবাক। আসলে বাসায় এধরনের কাজ করানো যায় তা আমি ভাবতেই পারিনি। যে মেকানিক আমার বাসায় এসেছে তার কাছে পাইপ কাটিং, গ্যাস ঝালাই এমনকি গ্যাস লিকেজ পরিমাপ করার সমস্ত যন্ত্রপাতি ছিল। আমি মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বললাম কারন এই ফ্রিজ দোকানে টেনে নিতে আমার বারোটা বেজে যেতো।
লোকটি দ্রুততার সাথে আমার ফ্রিজের লিক সনাক্ত করতে সক্ষম হলো তার যন্ত্রপাতির বদৌলতে। আমি নিজেও একজন ইঞ্জিনিয়ার তাই তার কাজগুলো খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছিলাম। মূলত কনডেনসারে খুব সুক্ষ একটি লিক রয়েছে, যার কারণে গ্যাস ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
মেকানিক লোকটা খুব তাড়াতাড়ি কাটিং এবং গ্যাস ঝালাই এর মাধ্যমে নতুন কনডেন্সার লাগিয়ে দিয়েছে। আমি অবাক হলাম, বাসায় এই ঝালাই সম্ভব এটাই ভাবতে পারিনি।
এরপর গ্যাস লোডের কাজ। গ্যাসটা আর ৬০০ তবে এটা সিএফসি গ্যাস, যার মাধ্যমে ফ্রিজ ঠান্ডা হয়। আমি এই প্রথম গ্যাস লোডের কাজ দেখলাম। লোকটা খুব সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে কাজটি নিখুঁতভাবে করতে লাগলো আর আমি একটা চেয়ার নিয়ে সামনে বসে দেখতে লাগলাম।
এটা এক ধরনের লিকুইড যা গ্যাস কিংবা কনডেনসারের ভেতরে বাতাস থাকলে চুষে নিয়ে সবকিছু ঠিক রাখে। এই জিনিস আমি প্রথম দেখলাম এবং তার কাজ থেকে আমি অনেক কিছু শিখলাম।
এরপর শুধুই অপেক্ষা কাজটি কতটুকু নিখুঁত হয়েছে দেখার জন্য। এই সময়ে মেকানিক ভাইকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম আমাদের ডাইনিং টেবিলে। লোকটার চোখে মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেলাম। এরপর দেখলাম ধীরে ধীরে আমার ফ্রিজ ঠান্ডা হচ্ছে। পরে সে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে, তবে আমি তার বিল পরিশোধ করে দিয়েছি। কনডেন্সার, গ্যাস লোড এবং সার্ভিস চার্জ সবমিলিয়ে তাকে চার হাজার টাকা দিলাম। লোকটি এতটাই ভালো সে রাতে ফোন দিয়ে ফ্রিজের খবর নিয়েছে এবং পরদিন আবারো আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমি তার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট এবং আমার ফ্রিজ আগের মতো সচল হয়েছে।
আপনারা এধরনের সমস্যায় প্রথমে যে কোম্পানিতে প্রোডাক্ট কিনেছেন তাদের সাথেই যোগাযোগ করবেন। একটু দেরি হলেও সেখান থেকেই ঠিক করানোর চেষ্টা করবেন। এতে ভালো সার্ভিস এবং সঠিক পার্টস পাবার নিশ্চয়তা থাকে। আর ফ্রিজের এবং এসির কাজগুলো এখন ঘরে বসেই করানো সম্ভব।
যাইহোক এই ছিল আমার আজকের আয়োজন। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত বিদায় নিলাম।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
পুশ প্রমোশন
https://x.com/emranhasan1989/status/1866157336890667415?t=2myRJ__hQf5C_kCbh0LBpQ&s=19
ফ্রিজ নিয়ে আমিও একদিন এমন ঝামেলার সম্মুখীন হয়েছিলাম ভাইয়া। তবে বিদেশ ফেরত আমাদের এক মেকানিক ভাই এর মাধ্যমে খুব সহজে মেরামত করতে পেরেছিলাম। সে ভাইয়া আসার আগে অনেক হয়রানির শিকার হয়েছিলাম। আজকে আপনার ফ্রিজের বিষয় নিয়ে বুঝতে পারলাম আমার মত ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
না আমি তেমন ভোগান্তির শিকার হইনি। কোম্পানির লোক বাসায় এসে ফ্রিজ ঠিক করে গিয়েছে। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
ভাই আপনি খাবার অপচয় করতে পছন্দ করেন না এ কথাটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমাদের সবার উচিত এই বিষয়ে সতর্ক থাকা। যাইহোক, ফ্রিজ নিয়ে ভালোই বিরম্বনার শিকার হয়েছিলেন। ব্যস্ত মানুষ বাসায় এসে একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার আপনার ফ্রিজের যে গ্যাস লেকার সমস্যা হয়েছিল সেটা সমাধান করে দিয়েছে। দক্ষ না হলে কোন কাজই সঠিকভাবে করা সম্ভব না।
আপনি যে কোম্পানির থেকেই এত সুন্দর সার্ভিস পেয়েছেন, জেনে ভালো লাগলো। বাসা পরিবর্তন করলে আসলে নানা জিনিস ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াটা বেশ সাভাবিক বিষয় যেনো! সেই ভদ্রলোক আসলেই কাজে বেশ দক্ষ, তা বোঝা যাচ্ছে। আবার তার আফটার সার্ভিস খোঁজ খবর নেয়ার বিষয় টি জেনেও বেশ ভালো লাগলো। টাকা দিয়ে সার্ভিস কিনে মানুষ, সেই সার্ভিস যদি মনমতো পাওয়া যায়, তবে উভয়পক্ষ ই খুশী হয়।
দুবাই থেকে আমি একটি ফ্রিজ এনেছিলাম হিটাচির।সেটা ও আমি বাসায় সার্ভিস করিয়েছিলাম।তখন দেখেছি বাসায় ঘরে বসে অনেক সার্ভিসই করানো যায়। আপনার ফ্রিজটি ভালো হয়েছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া।ধন্যবাদ জানাচ্ছি চমৎকার কিছু অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
ও আচ্ছা, দুবাই থেকে ফ্রিজ আনিয়ে বাসায় মেরামত করিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। এখন সবার ঘরে ঘরে ফ্রিজ রয়েছে। এধরনের সমস্যা গুলোর মধ্যে আমাদের পরতে হয়। আপনার পোস্ট টি সবার উপকার আসবে বলে আমি মনে করি। অবশেষে আপনার ফ্রিজ আগের মতো কাজ করছে জেনে ভালো লাগলো। আমিও একবার আমার ফ্রিজ এর কাজ করিয়েছিলাম সার্ভিস লোকদের কে বাসায় এনে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।
কিছুদিন আগে আপনার এই ফ্রিজ সমস্যার কথা জানতে পেরেছিলাম। আপনি কোম্পানি লোকের সাথে কথা বলেছিলেন। যাইহোক অবশেষে আপনার ফ্রিজ নিয়ে বিড়ম্বনা সমাধান হয়েছে জেনে ভালো লাগলো। তবে আপনার পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। একটু দেরি হলেও কোম্পানি লোকদেরকে দিয়ে সমাধান করানো উচিত। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে সুন্দর করে গুছিয়ে পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।