নির্বাসিত নক্ষত্র ( দ্বিতীয় পর্ব )!!
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
ছবিটি Pixabay নিয়ে নেওয়া এবং Canva দিয়ে এডিট করা
নাস্তার টেবিলে বসে ম্রিয়মান এবং তৃপা। দুজন নাস্তা করছে। হঠাৎ তৃপা বলে উঠল। আপনাকে একটা কথা বলব যদি কিছু মনে না করেন। হ্যা অবশ্যই বলেন
বলছি আমি অনেকদিন পর বাংলাদেশে এসেছি। কক্সবাজার যদিও দ্বিতীয় বার আসছি। আপনিও তো একা এসেছেন। তো চলুন না একসঙ্গে ঘোরা যাক। আপনার একটা সাথী হবে। সঙ্গে আমারও কথা বলার একজন মানুষ হবে। কী বলেন।
ঠিক আছে আমার কোন সমস্যা নেই। এই জীবনে তাহলে দ্বিতীয় মেয়ে বন্ধুটা জুটে গেল ম্রিয়মানের। যদিও তার জীবনের প্রথম বন্ধু বলেন অথবা প্রেমিকা অদিতি কে নিয়ে তার মূহূর্তগুলো মোটেই সুখকর ছিল নাহ। তারপর একপ্রকার প্রতিজ্ঞা করেছিল আর কখনও মেয়েদের দিকে ফিরে তাকাবে না। অসংখ্য বার চেষ্টা করেও ম্রিয়মানকে বিয়ের জন্য রাজী করাতে পারেনি তার মা। কিন্তু তৃপার এমন প্রস্তাবে ম্রিয়মান সেটা ঠাওর করতে পারল না। পুরুষ মানুষ যতই বলুক সে মেয়েদের থেকে দূরে থাকবে কিন্তু মেয়ে মানুষ যখন সামনে থেকে আসে কথা বলতে তখন তারা চাইলেও তাদের ইগনোর করতে পারে না। এটা এদের একটা স্বভাব। । সকালের নাস্তা শেষ করে দুজন পরিকল্পনা করল আজ কী কী করবে।
এরমধ্যে দুজনই খুব আগ্রহী ছিল রাতে সমুদ্রের পাড়ে বসে নক্ষত্র দেখার জন্য । যদিও প্রথমে কথাটা তৃপা বলে ম্রিয়মানও কোন আপওি করেনি। রাজি হয়ে যায় ওর কথায়।
ম্রিয়মান অদিতি কে প্রায়ই বলত নিরিবিলি রাতে দুজন একসঙ্গে বসে আকাশের নক্ষত্র দেখবে। একসঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে আসবে। সারা রাত দুজন সমুদ্রের গর্জন শুনে কাটিয়ে দেবে। রাতের সমুদ্রের ঢেউয়ের পানি এসে ওদের শরীর স্পর্শ করে চলে যাবে সেই মূহূর্তের স্বাক্ষী দুজন একসঙ্গে হবে। কিন্তু সেসব এখন শুধুই অতীত স্মৃতি।
সারা টা দিন ম্রিয়মান এবং তৃপা একসঙ্গে ছিল। কখনও সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে বেড়ানো, কখনও আবার সমুদ্রের পাড়ের চেয়ারে বসে থেকে। তবে কেউই সমুদ্রে নামেনি। বিকেল চারটার দিকে দুজন হোটেলে ফিরে যায়। তখন বলে উঠে তৃপা আপনার সঙ্গে আবার কখন দেখা হবে। রাতে কী আসবেন সমুদ্রের পাড়ে। তৃপার এমন কথায় ম্রিয়মান হেসে সম্মতি জানিয়ে দেয়। দুজন আবার সমুদ্রের পাড়ে একসঙ্গে হবে রাতে। বাকিটা সময় যেন বেশ দ্রুতই কেটে গেল।
ম্রিয়মান নিজের হোটেল রুমে বসে ল্যাপটপে কোন একটা আর্টিকেল পড়ছিল। এমন সময় ফোন বেজে উঠে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে।
হ্যালো কে বলছেন।
আমি তৃপা। ও হ্যা বলেন। কোথায় আপনি কখন আসবেন। আমি এখন বের হচ্ছি হোটেল থেকে। সকালে যেখানে দেখা হয়েছিল ঐখানে আসেন। ঠিক আছে,বলে ফোনটা রেখে দিল ম্রিয়মান।
ম্রিয়মানের বের হতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল। তৃপার বলে দেওয়া জায়গাই ম্রিয়মান গিয়ে দেখে তৃপা বসে সিগারেট খাচ্ছে। প্রথমে একটু দৃষ্টিকটু লাগলেও মূহূর্তের মধ্যে ম্রিয়মান সেটা মানিয়ে নেয়।
ম্রিয়মানকে দেখে তৃপা বলল চলে এসেছেন। একা বসে থাকতে ভালো লাগছিল না,আসুন বসুন।
আপনি সিগারেট খান। জিজ্ঞেস করে ম্রিয়মান। হ্যা অনেকদিনের অভ্যাস। ডাক্তার অনেক নিষেধ করেছে কিন্তু ছাড়তে পারি না। আর ছাড়ার প্রয়োজনও হবে না। প্রথমে কথাটা বুঝলেও পরের টা আর বুঝতে পারেনি ম্রিয়মান।আপনার বাড়িতে কে কে আছে? জিজ্ঞেস করল তৃপা।
মা এবং আমি। খুব ছোট উওর দিল ম্রিয়মান। আর কেউ নেই। বিয়ে করেননি এখনও জিজ্ঞেস করে তৃপা।
না। একেবারে ছোট উওর ম্রিয়মানের।
ভালোবাসার মানুষ টা নিশ্চয়ই ফাঁকি দিয়েছে বলে হা হা করে হেঁসে উঠল তৃপা। আমাকে দেখলে দেখলে মনে হয় আমাকে কেউ ভালোবাসতে পারে। বলল ম্রিয়মান।
তৃপা কোন উওর দিল না চুপ করে রইল। হয়তো কথাটার পেছনে ম্রিয়মানের আক্ষেপ টা বুঝতে পেরেছিল ও। এমনিই করা হয়ে উঠেনি। আপনার কে কে আছে। জিজ্ঞেস করল ম্রিয়মান। ।
আমার কেউ নেই। আমি এখন একা। কেউ নেই বলতে? জিজ্ঞেস করল ম্রিয়মান।
একা বলতে কেউ নেই। অনেক বড় কাহিনী।
সমস্যা নেই আমার সময় আছে বলুন সারারাত তো আছি দুজন বলল ম্রিয়মান।
বাবা কানাডায় থাকতেন। আমার জন্ম বাংলাদেশে। তব আমার বয়স যখন পনেরো আমাকে এবং মাকেও নিয়ে যায় বাবা। তারপর অবশ্য কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছি ঘুরতে। তিন বছর আগে ছয় মাসের বিরতিতে বাবা মা দুজনই মারা যায়। তারপর থেকে আমি একা।
বিয়ে করেননি আপনি। জিজ্ঞেস করল ম্রিয়মান।
হ্যা করেছিলাম। ইনানের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে ২ বছর আগে। ইনানের সাথে পরিচয় হয়েছিল কানাডায়। ও বাংলাদেশী ছিল। ওখানে বাংলাদেশী কমিউনিটির একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে পরিচয় হয় ওর সাথে আমার। প্রথমে কথা বলে বেশ ভালো লেগেছিল।তিন বছরের প্রেমের পরে বিয়ে করি আমরা। আমাদের পরিবার কোন বাঁধা দেয়নি। ওরা মেনে নিয়েছিল। কথাটা বলে চুপ হয়ে যায় তৃপা।
বিয়ের পরের বছর। বাংলাদেশে এসেছিল ইনান এবং তৃপা। দুজন কক্সবাজার ঘুরতেও এসেছিল। ঐসময় ইনান ওকে কতই না ভালোবাসত। এই সমুদ্রের সামনে বসে ঐ নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে ইনান তৃপা কে বলেছিল কখনোই ছেড়ে যাবে না। কিন্তু সময়ের সাথে ইনানের বদলে যাওয়া....
একের পর এক সিগারেট শেষ করে চলেছে তৃপা। আপনার সিগারেটের গন্ধে আমার উঠে যেতে ইচ্ছা করছে। বলল ম্রিয়মান।
আচ্ছা দুঃখিত আর খাচ্ছি না। ম্রিয়মান আপনার বয়স কত? জিজ্ঞেস করল তৃপা। এই তো ২৭, উওর দিল ম্রিয়মান। আপনার??
আমার ৩২। আপনি কিন্তু আমার থেকে ছোট ম্রিয়মান। তবে আপনাকে দেখলে মনে হয় বয়স আরও কম হবে আপনার। কথাটা শুনে হেসে উঠল ম্রিয়মান।
আচ্ছা আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী। আর কোথায় যাবেন? জিজ্ঞেস করল তৃপা। এখনও কিছু চিন্তা করিনি। কাল সেন্টমার্টিন যাবেন। হ্যা যাওয়া যায় বলল ম্রিয়মান।
তাহলে চলেন কাল যায় দুজন। কয়েকদিন থাকব ওখানে। রাজি আছেন।
ঠিক আছে চলুন। তাহলে কাল সকালের দিকেই রওনা দেব। আচ্ছা ঠিক আছে বলল ম্রিয়মান।
অনেক রাত হলো প্রায় আড়াই টা বাজে। এতো রাতে সমুদ্রের পাড়ে হয়তো কোন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ থাকে না। হয় থাকে মাতাল না হয় চোরা-কারবারি। এটা ভেবে ম্রিয়মান বলল চলুন এখন উঠি।
আপনি যান আর কিছুক্ষণ থাকি আমি। আর কিছুক্ষণ থেকে কী করবেন। জিজ্ঞেস করল ম্রিয়মান।
একটা সিগারেট খেয়ে যায়। হোটেল টা পুরো নো স্মোকিং এরিয়া। এইজন্য এখান থেকেই শেষ করি আরেকটা। আপনাকে নিয়ে আর পারি না। ঠিক আছে সিগারেট টা শেষ করেন। একসঙ্গে যায়। বলল ম্রিয়মান।
চলবে......
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Daily task
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
গল্প তো ভালোই আগাচ্ছে। তৃপার কি বড় কোনো অসুখ যে হাতে একেবারেই সময় নেই ? পড়ে তো তেমন ই মনে হচ্ছে! আশা করি পরবর্তী পর্ব খুব দ্রুতই পাবো।
নিয়মিত বই পাঠকদের এই একটা সমস্যা। তারা ছোট একটা হিন্টস থেকেই অনেক কিছু জেনে যায়। সেরকম কিছুই ঠিকই ধরেছেন আপনি।
😎😎
যাইহোক দুজন দুজনের সঙ্গী তাহলে হয়েই গেলো 😅
তবে তৃপার মনে হচ্ছে শারীরিক কোন জটিলতা রয়েছে, কারন সে সময় নেই বলেছে। যাইহোক ম্রিয়মান হয়তো আবারও একটা কষ্ট পাবে, মনে হচ্ছে। এই একটা সমস্যা, যার কপালে দুঃখ থাকে মরার সময়ও দুঃখ নিয়ে মরে।