নির্বাসিত নক্ষত্র ( নবম পর্ব )!!!

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ শনিবার, ৮ ই ফেব্রুয়ারি,২০২৫।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে


1000572210.jpg

ছবিটি Pixabay নিয়ে নেওয়া এবং Canva দিয়ে এডিট করা


অষ্টম পর্বের পর


রাত তিনটার দিকে দুজন রিসোর্টে ফিরে আসে। তৃপা কে ওর রুমে দিয়ে এসে নিজের রুমে সারা রাত একটা চিন্তা ভাবনার মধ্যে কাটাই ম্রিয়মান। তৃপা তখন ঘুমিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ম্রিয়মানের চোখে ঘুম নেই। তৃপার জন্য ম্রিয়মানের মধ্যে একটা মায়ার তৈরি হয়েছে। একটা অনূভুতি তৈরি হয়েছে আর সেটা ঠিক সহানুভূতি না। ম্রিয়মানের সারা রাত কেটেছে জেগে থেকে। ঘুম ওর চোখে আসেনি। রাতে বেশ কয়েকবার তৃপার রুমের সামনে গিয়েছিল ম্রিয়মান কিন্তু ডাকেনি। শেষ রাতের দিকে ম্রিয়মান কিছুটা ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম ভাঙে তৃপার ডাকে

এই যে উঠে পড়ো। আর কত ঘুমাবা তুমি। চলো এখন বের হতে হবে। সেন্ট মার্টিন এসেছ কী ঘুমিয়ে থাকার জন্য। কথাগুলো শুনে তৃপার মুখের দিকে তাকায় ম্রিয়মান। মেয়েটার মুখে একটা স্মিত হাসি। ঐ হাসি দেখে কে বলবে মেয়েটার ক‍্যান্সার। যেকোনো সময় ও চলে যেতে পারে পৃথিবী থেকে। খুবই দ্রুতই ফ্রেশ হয়ে নেয় ম্রিয়মান। রিসোর্ট থেকে দুজন নাস্তা করে খুব দ্রুতই বেরিয়ে যায়।

তুমি বাইক চালাতে পারো, ম্রিয়মানকে উদ্দেশ্য করে বলে তৃপা।

হ‍্যা পারি। তাহলে চলো একটা বাইক নিয়ে নেয়। রেন্টে বাইক নিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়ে সেন্ট মার্টিন সি বীচ ঘুরতে। ম্রিয়মান বাইক চালাচ্ছে পেছনে বসে তৃপা। ওরা দুজন যেন জীবনের সবচাইতে সুন্দর মূহুর্ত অতিবাহিত করছে।

এমন হতে পারত ম্রিয়মানের পেছনে বসে অদিতি অথবা ইনানের পেছনে বসে তৃপা। কিন্তু সেটা হয়নি। সৃষ্টিকর্তার কী আজব নিয়তি। সত্যি হয়তো সৃষ্টিকর্তা ওদের কে একে অপরের জন্য তৈরি করেছিল। অনেক টা সময় ওরা বাইকে ঘুরে কাটালো।

ম্রিয়মান তোমাকে ধন্যবাদ। এটা আমার জীবনের সবচাইতে সুন্দর মূহুর্ত্তের মধ্যে একটা ছিল। আজ আমি অনেক খুশি বলে তৃপা। দুপুরের দিকে রিসোর্টে ফিরে যায় দুজন। খাওয়া শেষ করে ওরা দুজন দুজনের রুমে চলে যায় । কিছুক্ষণ পর ওরা যাবে ছেঁড়াদ্বীপের দিকে। এটা অন‍্যতম সুন্দর একটা জায়গা। ছেঁড়া দ্বীপে দেখা যায় অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য। সারি সারি নারিকেল গাছ আর সমুদ্রের ঢেউ।

বিকেল আড়াইটার দিকে ওরা বেরিয়ে পড়ে ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশ্যে। সেন্টমার্টিন জেটি থেকে একটা ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে উঠে পড়ে। ছেঁড়া দ্বীপে ওরা দারুণ সময় কাটায়। দ্বীপে ওরা একে অপরের সাথে ঘুরে বেড়ায়। ।

সন্ধ‍্যার দিকে আরেকটা ট্রলারে করে ওরা আবার ফিরে আসে সেন্ট মার্টিনে কারণ ছেড়াদ্বিপে থাকার কোন জায়গা নেই। আজ রাত টা সেন্ট মার্টিন থেকে আগামীকাল ওরা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে চলে যাবে। আজ রাত টাও ওরা কাটাবে ঐ জায়গাই যেখানে গতকাল রাত কেটেছে। তবে আজ ভিন্ন ভাবে। আজ আর কোন অতীত কে স্মরণ করে না। এটা ওরা সিদ্ধান্ত নেয়।

রাতে খাওয়া শেষ করে এগারো টার দিকে দুজন চলে যায় ঐ নারিকেল গাছের নিচে ঐ বসার জায়গাই।

আজ সারাদিন টা দুজনের অনেক ভালো কেটেছে। আজ সারাদিনে আরও অনেক কাছাকাছি এসেছে দুজন। তবে এটা কী বন্ধুত্ত্ব না ভালোবাসা সেটা ওরা জানে না। কিছু সম্পর্কের কোন নাম হয় না। এটাও হয়তো সেরকম সম্পর্ক।

আপনি বই পড়েন। ম্রিয়মানকে জিজ্ঞেস করে তৃপা।

হ‍্যা মোটামুটি পড়া হয়। ।

আপনার পছন্দের কবি কে? জিজ্ঞেস করে তৃপা। ।

জীবনানন্দ দাশ। ছোট করে উওর দেয় ম্রিয়মান। তোমার বই পড়া হয়।

না আমি খুব একটা বই পড়ি না। বিশেষ করে বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা একেবারেই কম। বোঝোই তো সারাজীবন কেটেছে বাইরের একটা দেশে। তবে যেহেতু বাংলাদেশে ছিলাম সেই সুবাদে বেশ কিছু লেখক কবি এদের নাম জানি।

আমাকে জীবনানন্দের একটা কবিতা শোনাও তো। ম্রিয়মানের উদ্দেশ্যে বলে তৃপা।

ম্রিয়মানের কাঁধের উপর ত‍ৃপার মাথা। ম্রিয়মান জীবনান্দের একটা কবিতা বলতে শুরু করে

হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

এতটুকু বলে চুপ হয়ে যায় ম্রিয়মান। ম্রিয়মানের বনলতা যেন তার পাশেই বসে রয়েছে।

চলবে......



সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG-20231027-WA0008.jpg

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।


আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png


1000561739.png


Sort:  
 4 days ago 

Daily task

1000574015.jpg

1000574013.jpg

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 days ago 

গল্পটা শেষ হয়েও যেনো শেষ হচ্ছে না।আসলে পরে কি হয় এটা জানতে আগ্রহ যেনো বেড়েই চলেছে।আশাকরি খুব শীঘ্রই শেষটা জানতে পারবো।অনেক ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া সুন্দর ভাবে গল্পটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 97673.06
ETH 2685.88
SBD 0.43