সব সেরার, সেরা হয়ে উঠা হয় না!!
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
২০১০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের আগে ১৮ বছরের ছেলেটাকে দলে নেওয়ার জন্য দশ হাজার চিঠি পেয়েছিলেন ব্রাজিল দলের তৎকালীন কোচ কার্লোস দুঙ্গা। ২০১২ সালে ইউরোপের বাইরে খেলে ছেলেটা জায়গা করে নেয় ব্যালন ডিঅর লিস্টের সেরা দশে। যেটা সচরাচর দেখা যায় না। কার কথা বলছি এতোক্ষণে হয়তো বুঝে গিয়েছেন। আমি আজ বলব ফুটবলের এক দুঃখী রাজপুএ নেইমার জুনিয়নর ডি সিলভার কথা। ছেলেটার পেছনে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা পুরো হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। কিন্তু ছেলেটার প্রথম পছন্দ ছিল বার্সেলোনা। তাই ৮৮ মিলিয়ন ইউরোতে ২০১৩ সালে বার্সেলোনা তাকে নিয়ে আসে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোস থেকে। তারপর বার্সেলোনায় প্রাইম সেই নেইমারকে দেখেছে পুরো বিশ্ব। নেইমারকে সাইন করানোই ব্যর্থ হওয়ায় হতাশ ছিলেন মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। সেজন্যই পরবর্তীতে তার নজর পড়ল ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডার কিড গুলোর দিকে। ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রদ্রিগো, মিলাটাও এবং বর্তমানের এন্ড্রিক কে সাইন করানো সেটা আরও ভালোভাবে প্রমাণ করে।
২০১৫ সালে ব্যালন ডিঅর এর সেরা তিনে জায়গা করে নেওয়া ফিফা সেরা একাদশে জায়গা করে নেওয়া। একটা কনফেডারেশন কাপ, একটা চ্যাম্পিয়য়ন লীগ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর বড় কোনো শিরোপা নেই ছেলেটার। কিন্তু ছেলেটা যখন ইউরোপীয় ফুটবলে এসেছিল সবাই বলতো হ্যা মেসি রোনালদোর পর এই হবে ফুটবল বিশ্বের সেরা খেলোয়ার। থাকতে পারতো ছেলেটার কয়েকটা ব্যালন ডিঅর থাকতে পারতো একটা কোপা আমেরিকা ট্রফি এবং আরও কিছু চ্যাম্পিয়ন লীগ। কিন্তু ইনজুরি নামক শএুটা ছেলেটার থেকে এগুলো কেড়ে নিয়েছে। গত দশ বছরে প্রায় ৯০০ দিন ছেলেটার কেটেছে বিছানায় শুয়ে থেকে। উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন না থাকলেও ছেলেটার আছে বেশ বড় একটা ফ্যানবেজ। যারা শৈল্পিক ফুটবল ভালোবাসে নিয়মিত ফুটবল দেখে তারা জানে নেইমার ঠিক কতটা স্কিলফুল কতটা কমপ্লিট ফুটবলার। কিন্তু সবসময় হয়েছে তৃতীয় সেরা হয়ে থাকার ভাগ্য। মেসি রোনালদো ইউরোপ থেকে বিদায় নেওয়ার আগেই ফুটবল বিশ্ব ততদিনে প্রবেশ করে ফেলেছে এমবাপ্পে এবং হল্যান্ড যুগে। অতীত এবং ভবিষ্যতের মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক নক্ষত্র হলো নেইমার জুনিয়র।
উপরের কথাগুলো বললাম এর কারণ আছে। মনে আছে মোটামুটি ২০-২৫ দিন আগে আমি একটা পোস্ট করেছিলাম যেখানে আমি সৌদি আরবের কাছে ইউরোপীয় ফুটবলের শ্রেষ্টত্ব হারানোর বিষয়ে লিখেছিলাম। আমার সেই পোস্ট টা এবিবি ফিচারড পোস্ট হিসেবে সিলেক্ট হয়। হ্যা সেই সৌদি আরবের ক্লাব আল হেলাল এর টার্গেট এবার ৩১ বছর বয়সী নেইমার। শুধু আমি না এই বয়সে নেইমারের ইউরোপ ছেড়ে যাওয়া অবাক করেছে পুরো ফুটবল বিশ্বকে। এবারও রেকর্ড প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজি থেকে নেইমারকে কিনেছে আল হেলাল। এই দশ বছরে নেইমারকে তিনবার তার ক্লাব বিক্রি করেছে এবং এই তিনটা মিলিয়ে রেকর্ড ৪১০ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি নেইমারের পেছনে খরচ হয়েছে ক্লাবগুলোর। যা ফুটবল ইতিহাসে এর আগে আর কোনো খেলোয়ারের ক্ষেএে হয়নি।
------ | ------ | ----- |
---|---|---|
২০১৩ | সান্তোস টু বার্সেলোনা | ৮৮ মিলিয়ন |
২০১৭ | বার্সেলোনা টু পিএসজি | ২২২ মিলিয়ন |
২০২৩ | পিএসজি টু আল হেলাল | ১০০ মিলিয়ন। |
কাতার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমার অসাধারণ এক গোলের মাধ্যমে কিংবদন্তি পেলের সঙ্গে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ৭৭ গোলের রেকর্ডে ভাগ বসাই। কিন্তু তারপর আর নেইমারের মাঠে নামা হয়নি। ছেলেটা বার বার হেরে গিয়েছে ইনজুরি নামক ঐ ভয়ানক শএুর কাছে। আমি ব্রাজিল সাপোর্ট করলেও নেইমারের ডাই হার্ড ফ্যান না। তবে নেইমারের খেলা অনেক ভালো লাগে। ফুটবলের নান্দনিকতা শৈল্পিকতা ব্রাজিলিয়ান জিঙ্গা স্টাইল সবকিছুই ছিল তার মধ্যে। ছিল অসাধারণ ড্রিবলিং করার দক্ষতা। কিন্তু কিছুই হয়নি এতে। শেষমেশ হয়তো নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করেই ইউরোপ ছাড়ল নেইমার। ব্রাজিলের প্রতিটা জেনারেশনে ছিল একাধিক তারা বা লিজেন্ড। যেমন পেলের পাশে ছিল গারিঞ্চা, ভাভা এরা। রোমারিও এর পাশে ছিল কার্লোস দুঙ্গা, রবার্তো কার্লোস, কাফু। রোনালদো দ্যা ফেনোমেনন এর পাশে ছিল রোনালদিনহো কাকা রিভালদো। কিন্তু এই জেনারেশনে নেইমার পুরোটাই একা হাতে এগিয়ে নিয়েছে ব্রাজিলকে। কখনো কৌতিনহো আবার কখনো অস্কার আবার কখনো ভিনিয়াস কে পাশে পেলেও কেউই নেইমার কে পূর্ণাঙ্গ সঙ্গ বা সাপোর্ট দিতে পারেনি। নেইমার যেখানেই যাক সে যেন ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে এবং ২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে মাঠে নামে এই টাই চাওয়া। আজ বার বার একটা কথায় মনে আসছে "সব সেরার,সেরা হয়ে উঠা হয়না"। নেইমার যেন এই কথাটার একেবারে যোগ্য উদাহরণ!!!
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এটা কিন্তু একেবারে সত্যি সব শেয়ার সেরা হয়ে ওঠা হয় না। আর আপনি নেইমার এর কথা দিয়ে এই বিষয়টার যোগ্য উদাহরণ বুঝিয়েছেন। ফুটবল খেলা আমি এমনিতে আগে প্রচুর পরিমাণে দেখতাম তবে এখন দেখা হয় না, কিন্তু গেছে বছরে ফাইনাল ম্যাচটা দেখেছিলাম। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে আপনার লেখা এই পোস্টটা সম্পূর্ণ পড়তে। নেইমারের খেলা কিন্তু আমারও এমনিতে ভালো লাগে।