অকারণ ট্রলিং করা একটি সামাজিক ব্যাধি
সম্প্রতি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বাংলাদেশের একজন মহিলাকে নিয়ে ব্যাপকভাবে ট্রলিং করা হচ্ছে। আমাদের দেশের এটা এখন একটা নতুন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুঝে হোক না বুঝেই হোক আমরা এমন অনেক মানুষকে ট্রল করা শুরু করি যিনি আসলে এই ধরনের ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য না। আমি বলছিলাম ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের কথা। মহিলাকে নিয়ে ট্রল করার বেশ কিছু কারণ আমার চোখে পড়েছে। প্রথম কারণ হচ্ছে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিক সাহেবের মেয়ে। আতিক সাহেব অত্যন্ত ধনী একজন মানুষ। আমরা ধরেই নেই ধনী মানুষদের সন্তানেরা সব খারাপ হয়। সেই সাথে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলায় কথা বলতে পারেন না। কথা বলার সময় তিনি প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন।
ক্যানভা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
আমি খেয়াল করে দেখেছি দেশের সাধারণ মানুষ যে সমস্ত মানুষের সাথে রিলেট করতে পারেনা তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। অনেকে আবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তিনি মেয়রের মেয়ে হওয়ার কারণে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিশাল অংকের বেতনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে চাকরিপ্রাপ্ত হয়েছেন। যে ধারণাটা আসলে সম্পূর্ণ মিথ্যা। বুশরা আফরিন বিনা বেতনে কাজ করছেন। এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তার কাজের জন্য কোন দপ্তর দেয়া হয়নি বা তার জন্য কোন চেয়ারের ব্যবস্থাও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নেই। আমাদের দেশের মানুষ গুজবে অনেক বেশি বিশ্বাস করে সেই কারণে না জেনেই বুশরা আফরিনকে ট্রল করা শুরু করেছেন। বুশরা আফরিন অনেকগুলো ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যেগুলো বেশিরভাগ মানুষই জানে না। তিনি ঢাকার বেশ কয়েকটা বস্তিতে প্রচুর গাছ রোপন করেছেন। সেই সাথে বস্তিবাসীকে ট্রেনিং দিয়েছেন কিভাবে প্রচন্ড গরমের ভেতরে সুস্থ থাকা যায়। এই বিষয়গুলি আমিও আগে জানতাম না। কিন্তু আজকে পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম। পত্রিকা মারফত জানতে পেরে আমার নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছে।
একটা মানুষ জিনি সত্যি কারের ভালো কাজ করার চেষ্টা করছেন। অকারণে তাকে নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে। তাকে ট্রল করার আরো একটা কারণ হচ্ছে তিনি রাস্তাঘাটে বের হওয়ার সময় ফ্যান নিয়ে বের হতে বলেছেন। কিন্তু আজকাল আপনারা খেয়াল করলে দেখতে পাবেন অনেক মানুষই সাথে ছোট একটা ফ্যান ক্যারি করছেন। যেগুলো ব্যাটারি দ্বারা চালিত। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময় তারা এই ফ্যানের সাহায্যে বাতাস নিচ্ছেন। আবার অনেক গার্জিয়ান তাদের বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগেও এই ধরনের ফ্যান দিয়ে দিচ্ছেন। যাতে গরমের সময় বাচ্চারা এই ফ্যানের বাতাসে ঠান্ডা হতে পারে। আর ব্যাটারী চালিত এই ফ্যানগুলো বেশ অল্প টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। যার ফলে এটা নিয়ে ট্রল করার মত কোন কারণ আমি দেখতে পাই না। তাই সবার প্রতি আমার আহ্বান থাকবে বিনা কারণে একজন মানুষকে আমরা ট্রল না করি। যেই মানুষটা সমাজের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছে তাকে আমরা উৎসাহ প্রদান করি। আর যদি উৎসাহ প্রদান করতে নাও পারি তাহলে অন্তত চুপ থাকি।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
বাংলাদেশের মানুষ সব কিছু নিয়েই ট্রল করা শুরু করে। ট্রল করাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় মারামারিও শুরু হয়। এই গরমের মধ্যে শিশুদের ব্যাগে চার্জার ফ্যান দিলে তাতেও সমস্যা নেই কিন্তু বাংলাদেশে এটা নিয়ে ট্রল করে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ আসলেই গুজবে বিশ্বাস করে। কারো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে কোনো মন্তব্য করা মোটেই উচিত নয়। কিন্তু বাঙ্গালীদের মধ্যে এই স্বভাবটা রয়েছে। অন্ততপক্ষে কাউকে নিয়ে ট্রল করার আগে হাজার বার ভাবা উচিত, যাকে নিয়ে ট্রল করছি,আমি তার যোগ্য কিনা। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।