একজন ভালো মানুষের হঠাৎ চলে যাওয়া.. 😥
হ্যালো বন্ধুরা,,
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সকল সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?পরম করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি সুস্থ আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি পোস্টের ভিন্নতা আনার।তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজ নতুন একটি পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।আশাকরি আমার আজকের পোস্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে।
কাজ হলো আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।সঠিক সময়ে নিজের কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলেই জীবন সুন্দর হয়।আগে একটা সময় ছিলো যে কোন কাজ কোন সময়ে করতে হবে তা বুঝতেই পারতাম না।যদি ঘর গোছাতে শুরু করতাম তাহলে সেটা নিয়েই দিনের অর্ধেক সময় পার করে দিতাম,আবার যদি রান্নাঘরে রান্না করতে ঢুকতাম দিনের বেশি সময়ই সেই রান্নাঘরেই কেটে যেতো। কোনো কাজ গুছিয়ে করতে পারতাম না,একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়তাম কোনটা ছেড়ে কোনটা করবো ভেবেই অস্থির হয়ে যেতাম।ছোটবেলা থেকে কাজকর্মে খুব একটা বেশি অভ্যস্ত ছিলাম না।শখের বসে নিজের ঘর গোছানো একটু পরিপাটি হয়ে থাকা এগুলো করতাম।সেখান থেকে গিয়ে সংসার বাচ্চা সামলানো তারপর গুছিয়ে কাজ করা এটা আর হয়ে উঠতো না।কাজ সবই জানতাম কিন্তু একটা কাজ সঠিক সময়ের মধ্যে গুছিয়ে করা সেই সিস্টেম টা বুঝতে পারতাম না।তারপর একদিন উপরের তলার ফ্ল্যাটের বৌদির শাশুড়ি তার বাসায় ঘুরতে আসেন।প্রতিবেশী হিসেবে মাসিমা একদিন আমার বাসায় ঘুরতে আসেন,প্রথম দিনই তার সাথে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।আর এই সূত্র ধরে প্রায় প্রতিদিনই মাসিমা আমার বাসায় আসতেন!
ডিভাইজ নেম-Vivo Y30
একদিন দুপুরবেলা রান্নার সময় এসেছিলেন তখন উনি দাঁড়িয়ে থেকে আমার কাজকর্মগুলো দেখছিলেন,পুরোটা সময় খুব ভালোভাবে আমার কাজগুলো উনি দেখেছেন।পরে আমাকে বললেন তুমি যেভাবে কাজ করো তাতে করে তো তোমার সারাদিন এই রান্নাঘরেই কেটে যায়!তখন আমি মাসিমাকে বললাম হ্যাঁ মাসিমা আমার তাই হয়।তখন উনি আমাকে বেশ কয়েকটি উপদেশ দিলেন,যে যেকোনো কাজের আগে তোমাকে ঠিক করে নিতে হবে তুমি কোন কাজটি আগে করবা প্রস্তুতি নিতে হবে এবং সেই প্রস্তুতি অনুযায়ী তোমাকে সেই কাজটি শুরু করতে হবে।তাহলে তুমি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেই কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছো!উনার কথাগুলো আমার বেশ ভালো লাগলো মাসিমাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি কিভাবে কি করবো আমাকে একটু বুঝিয়ে বলেন তো।
মাসিমা আমাকে বললেন রান্না করার আগে তুমি রান্না সমস্ত জিনিসপত্র সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি করে নিবে,তারপর রান্না শুরু করবে।তাহলে দেখবে তোমার রান্না করতে খুব একটা সময় লাগবে না।আর সব সময় চেষ্টা করবে সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের খাবার খেয়ে দুপুরের রান্নাটা শেষ করার।তাহলে দেখবে তোমার দিনের বাকি কাজ গুলো খুব সুন্দর ভাবে সঠিক সময়ে হয়ে যাবে।সেদিন থেকে আমি মাসিমার কথা অনুযায়ী সমস্ত কাজ আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করতাম,আর সবগুলো কাজ আমার খুব সুন্দর ভাবে অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে যেতো।সেদিনের পর থেকে কাজ নিয়ে আমার আর কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি, হয়তো বা একটু এদিক-সেদিক হয়ে যায় তবে আগের মতো আর অস্থিরতা অগোছালো কিছু হয় না যতোোটুকু কাজ করি তা সঠিকভাবেই করতে পারি।
মাসিমা যখনই আমার ঘরে আসতেন তখনই আমাকে কোনো না কোনো উপদেশ দিতেন আর আমি ওনার উপদেশগুলো খুবই সম্মানের সহিত পালন করার চেষ্টা করেছি।উনি আমার সংসারে এবং আমার ব্যক্তিগত জীবনে বেশ উপকার করেছেন।একটা সময় ছিলো আমার স্বামী আমার ছোটখাটো বিষয়গুলো খুবই ভুল ধরতো।তখন মাসিম আমার স্বামীকে পাশে বসিয়ে বুঝিয়েছেন সবকিছুতে এরকম ভুল ধরো কেনো?ভুল হতেই পারে কখনো অশান্তি করবা না! উনার কথা অনুযায়ী আমার স্বামীর মধ্যেও বেশ পরিবর্তন আসে।তখন থেকে সে আমার আর কাজকর্মের কোনো ভুল ধরতো না পারলে আমাকে আরো হেল্প করার চেষ্টা করে।প্রায় মাস ছয়েকের মতো উনি ওনার ছেলের বাসায় ছিলেন এবং প্রতিটি দিন আমাকে কোনো না কোনো নতুন কিছু শিখিয়েছেন যা ছোটবেলা থেকে আমার মা এবং বিয়ের পর আমার শাশুড়ির কাছ থেকেও কখনো শেখা হয়নি।সেই মানুষটির অবদান আমার জীবনে অনেক কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেই মানুষটিকে আমি আর দ্বিতীয় বার দেখতে পাইনি।
মাসিমা প্রায় ছয় মাস ছেলের বাসায় থেকে বরিশালে ওনার নিজের বাড়িতে চলে যান।এখান থেকে যাওয়ার কিছুদিন পরেই উনি একদিন হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন!ডায়রিয়া জনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সেই রাতেই উনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।জানিনা কি এমন হয়েছিলো সেদিন তার যে একদিনের মধ্যেই তার মৃত্যু হবে!প্রথম যখন মাসিমার মৃত্যুর খবর পাই তখন আমি পুরাই হতভম্ব হয়ে যাই! কিছুতেই তার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছিলাম না।আর খুব বেশি আফসোস হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো একবার যদি শেষ দেখা দেখতে পেতাম!আজও আমি সেই মানুষটিকে ভুলতে পারিনি আর হয়তো কোনোদিন ভুলতেও পারবো না।এই মানুষটি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন যা আমার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে আছে এবং থাকবে।মাসিমার জন্য খুবই মন খারাপ লাগে এখনো কিন্তু কিছু করার নেই শুধু ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করি তাঁকে যেনো স্বর্গবাসী করেন।🙏
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে আপনার মাসিমার হঠাৎ মৃত্যু এটা শুনে অনেক খারাপ লাগলো । আসলে প্রিয় ও ভালো মানুষেরা যেন খুব তাড়াতাড়িই বিদায় নিয়ে নেন। আসলে এটা কারোই কাম্য নয়।যাইহোক ওনার পরিবার যাতে এই দুঃখ-কষ্ট হজম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে সেই কামনা করি।
প্রোমোশন
আপনার মাসিমার অকাল মৃত্যুর খবর শুনে সত্যিই খুব দুঃখ পেলাম। প্রিয় মানুষদের এভাবে বিদায় নিতে দেখাটা অত্যন্ত কষ্টকর। সত্যি বলতে, ভালো মানুষেরা অনেক সময় খুব দ্রুত চলে যায়, যা সহ্য করা সত্যিই কঠিন। প্রার্থনা করি ধীরে ধীরে এই দুঃখ সহ্য করে সামনে এগিয়ে যান।শান্তি ও সহানুভূতির সঙ্গে যেন এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন, শুভকামনা রইল।