উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর গল্প || ১০% লাজুক খ্যাঁক এর জন্য||

আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। দেখতে দেখতে অলরেডি ১৫ টা রোযা শেষ হয়ে গেলো। তবে এবারের রমজান আমার কাছে একেবারেই ভিন্ন 😇। শারীরিক, মানসিক সব ধরনের অনুভুতিগুলো সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক সময় কষ্ট হলেও এর চেয়ে ভালো লাগার পরিমাণ অনেক বেশি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়। সকলের কাছেই দোয়া প্রার্থী 💖।

ব্যবসা করার চিন্তা ভাবনা শুরুতে আমার মায়ের কাছে থেকেই। মা ঘরোয়া ভাবে কিছু কাপড় এনে পরিচিত মানুষের কাছে বিক্রি করতো। খুবই সীমিত লাভ করতো দেখতাম। তখন আমি অনেক ছোট মাত্র স্কুলে পড়ি। এভাবে বেশ কয়েক বছর ব্যবসা করে মোটামুটি একটা পুজি যোগাড় করেছিলো। পরে আস্তে আস্তে ব্যবসা বড় করতে লাগলো। তবে সেটা স্থায়ী আর করা হয়নি পরে। যখন আমি কলেজে পড়ি তখনও ব্যাবসা টা ছিলো মায়ের। তো সেই সময় যেহেতু আমি অনেকটা ম্যাচিউর আর হাতে স্মার্ট ফোনও ছিল ভাবলাম কেন না অনলাইনে বিজনেস শুরু করি! তারপর আমার বড় ভাই এর থেকে একটা পেজ খুলে নেই এবং কিভাবে কি করতে হবে টুকটাক শিখে নিতে থাকি যদিও তখন অনলাইন বিজনেস নিয়ে এতোকিছু বুঝতাম না।

ছবিটা আমার ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া। প্রথম ব্যবসায়িক পেজ এর নাম আমার নামেই ছিলো। আমার মা-বাবা সব সময় এটা মনে করতো আমি তাদের ঘরের লক্ষি😊। তাই এই পর্যন্ত যত ব্যাবসা করেছে তারা সব আমার নামেই ছিলো। আসলেই এটা কতটা যুক্তিযুক্ত আমার জানা নেই। তো সেই সুবাদেই মা আমার নাম দিয়েই পেজ খোলার সিদ্ধান্ত দেয়। এর পর ধীরে ধীরে টুকটাক থ্রি পিছের ছবি আপলোড করতাম পেজে। তখন খুবই কম রীচ করতো৷ নিয়ম কানুন বুঝতাম না। এরপর আমার ভাই বলে পেজে বুস্ট দিতে। বুস্ট দেওয়ার পর বেশ ভালোই রীচ করছিলো। জীবনের প্রথম লাইভ করেছিলাম তখন। কিন্তু সেল করতে পারিনি একটাও হাহাহা। এরপর পড়াশোনার চাপে আর কন্টিনিউ করতে পারিনি।

করোনার মধ্যে আমার কলেজের ম্যাডাম আমাকে একটি ই-কমার্স গ্রুপে এড দেয়। তখন বিষয় টা এতোটা গুরুত্ব দেইনি। সবাই শুধু দেখতাম বিজনেস পোস্ট করে, নিজেদের প্রোডাক্ট এর প্রমোট করে। এক কথায় ব্র‍্যান্ডিং করতো সবাই। সেটা ছিলো একটি নারী উদ্যোক্তাদের গ্রুপ মূলত। ইতোমধ্যে অনেকেই জানেন আমি এবং আমার স্বামী সেখান থেকেই অনলাইন বিজনেস এর অনুপ্রেরণা পেয়ে আজ এই অবদি আসতে পেরেছি। কিভাবে আসলাম সেই গল্পটাই শেয়ার করছি। তখনও কিন্ত আমি বিবাহিত ছিলাম তবে আমার বাবা মায়ের কাছেই ছিলাম। এরপর করোনা পরিস্থিতির মাঝামাঝি এসে আমার বিদায় হয় মানে আমি শশুরালয়ে আসি। তখন আমার পেজটা প্রায় অচল বলা চলে কারণ কাজ করা হতো না সেখানে। আর ই-কমার্স গ্রুপ যেটায় যুক্ত ছিলাম সেখানেও তেমন গুরুত্ব দিতাম না। একদিন আমার বর আমাকে বলে কিছু শাড়ির মডেলিং করতে হবে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম কারণ তখন টাকার খুব দরকার ছিলো। প্রায় দশটা শাড়ির মডেলিং করতে হয়েছে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত 😓। সেখান থেকেই একটা ছবি এখানে দিলাম।

সেই মডেলিং করার পর থেকে আমার বর আমাকে মনে করিয়ে দেয় এই গ্রুপের কথা। এখানে নারীদের সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি। তাই আমি তখন থেকেই সেই গ্রুপ টা ফলো করতে থাকি আর আস্তে আস্তে এক্টিভ হতে থাকি। এখান থেকেই মূলত আমাদের দুজনের বিজনেস জার্নি টা শুরু। আর সবচেয়ে বড় বেনিফিট যেটা পেয়েছিলাম। আমার বরের বন্ধুর শাড়ির মডেলিং করার পর সেজ ভাই আমাদের অফার করে আমরা চাইলে অর্ডার নিয়ে তার থেকে কাপড় সাপ্লাই করে বিজনেস করতে পারি চাইলে। তাই সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে কাজ করতে থাকি। আর এখন আলহামদুলিল্লাহ ই-কমার্স গ্রুপে খুব ভালো পরিচিতি হয়েছে। আর সেই যে আমার অচল পেজটা সেটাকে খুবই যত্ন সহকারে আমার বর আসতে আসতে বুস্ট আর পরিশ্রম দিয়ে উপরে নিয়ে যাচ্ছে। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণাও মূলত সেই দিয়েছে। অনেকটা সাপোর্ট করে গেছে। সত্যি এমন জীবন সাথী পেয়ে আমি খুবই খুশি। এই ছিলো আমার উদ্যোক্তা জীবনের জার্নি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন এভাবেই যেন এগিয়ে যেতে পারি দুজন একসাথে।