বাস্তবতা কতটা ভয়াবহ! | ১০% বেনিফিশিয়ারি লাজুক খ্যাঁক এর জন্য |

💖সবাইকে স্বাগতম💖

Source

Source

সময়ের সাথে সাথে প্রথমে স্কুল, এরপর কলেজ এভাবেই দিন যেতে লাগলো। আমাকে কখনোই মা বাবা কেউই পড়াশোনার জন্য চাপ দিতেন না। আমি নিজে থেকে যতটুকু করতাম তাতেই তারা খুশি ছিলেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি একটু গোলমেলে হয়ে ওঠে! বাবার ব্যাবসায় তুমুল পরিমাণে লস হওয়ায় আমাদের পুরো পরিবার টা নিমিষেই দুমরে মুচরে যায়। কিন্তু মা তখনও হাল ছাড়েনি। শক্ত হাতে সংসারটাকে আকড়ে ধরে ছিলো বলেই আজকে আল্লাহর রহমতে যে আর অবস্থান থেকে খুব একটা খারাপ নেই আলহামদুলিল্লাহ। আমার লেখাপড়া অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।এসএসসি দেওয়ার পর কেউই কলেজে ভর্তির জন্য খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। বড় ভাই তো বলেছে পড়াশুনা বন্ধ করে দাও! কিন্তু শুধুমাত্র আমার তীব্র আগ্রহ আর আমার মায়ের অনুপ্রেরণায় আজকে এতোদূর আসতে পেরেছি। পরিবার থেকে যখন কোনরকম সাপোর্ট পাচ্ছিলাম না আমার মা তখন যেভাবেই হোক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে আমাকে পড়িয়েছেন।

Source

মা সবসময় একটা কথা বলতো- পড়াশোনার মধ্যে যেনো অন্যকিছু না ঢুকে যায়! মানে বাড়ন্ত বয়স ছিলো প্রেম পিরিতির জ্বালে যেন জড়িয়ে না পরি। কিন্তু কলেজে ভর্তির কয়েক মাস না যেতেই সেই ভুলেই পা বাড়াই। কথায় আছে না, "যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই নাকি রাত হয়।" কিছুটা সেরকম। যাইহোক এভাবেই প্রণয়ের শুরু হয় আসতে আসতে। কিভাবে সম্পর্কে জড়ালাম সেগুলো নিয়ে আরেকদিন বলবো ইনশাআল্লাহ। এরপরও লেখাপড়া বেশ ভালোই চালিয়ে যাচ্ছিলাম। তারপর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ে হলেও আমি ছিলাম আমার বাবা মায়ের কাছেই। আর আমার যাবতীয় খরচ কিংবা দায়ভার তখনও আমার বাবা মারই ছিলো। আমার বর তখন পড়াশোনা করছিলো আর নিজেকে গুছিয়ে নিতে বেশ সময় লেগেছে তখনও। তাই আমার বাবা কখনো আমাকে বুঝতেই দেয়নি আমার বিয়ে হয়েছে বা অন্যের দায়িত্বে আছি। সবসময় একটা কথাই বলতো তোমার স্বামী যতদিন না তোমার দায়িত্ব নিজে থেকে নিচ্ছে তাকে কোনরকম প্রেসার দিবে না। যখন যা প্রয়োজন আমার কাছেই বলবে ঠিক যেমন আগে ছিলে! এভাবেই চলতে থাকে ৩ টি বছর।

সংসার জীবনে ঢুকতে না ঢুকতেই নানান ঝড় ঝাপটা শুরু হতে লাগলো। আসলে বিপদ যখন আসে চারিদিক থেকেই আসে। ইতোমধ্যে পরিবারের ঝামেলা আর টাকার প্রেসার এর কারণে আমার বরের লেখাপড়া বন্ধ দিতে হয়েছে। সংসারের বোঝ আর চারিদিকের ঝামেলায় সেও প্রায় অসহায়। সব মিলিয়ে হিমশিম অবস্থা তার! এবার আমার লেখাপড়ার উপরেও ঝড় আসলো বলে! তবে সংসার জীবনে ঢোকার পরও বাবা আমার লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছিলো। কিন্ত একটা পর্যায়ে তারাও নিরুপায় হয়ে পড়ে। আর আমার বরের অবস্থা তো তখন খুবই মর্মান্তিক। তার এই বয়সে এতো ঝামেলা সহ্য করে ওঠা দেখে সত্যি খুব অবাক হয়ে যাই। আমার মা সবসময় তার মেয়ে জামাইকে নিয়ে গর্ব করে আর বলে- "আমার ছেলেটা যদি আমার জামাই এর মতো একটু বুঝতো। " যাইহোক এভাবেই অভাবের সাথে লড়াই করতে করতেই আমার ফাইনাল পরীক্ষা এসে পরলো। অনেকগুলো টাকা প্রায় বাকি পরে গেছে। এই অবস্থায় কাউকেই কিছু বলতে পারছি না। বাবার এমন এক অবস্থা ব্যাকাপ দিতে পারছে না। আর আমার বর সংসার এর চাপ, ঋণ, মায়ের অসুস্থতা, সব দিক থেকেই অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই তার মুখে একটা কথাই "পড়াশোনা টা এই বছরের জন্য বাদ দাও স্বর্ণা! সামনের বছর পরীক্ষা দিও।" কথাগুলো খুবই শক্ত ছিলো। এই লেখাপড়ার জন্য আমি অনেক লড়াই করে এসেছি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে হাল ছেড়ে দিতে হলো। আজকে ফাইনাল ভাইবা ছিলো, যেতে পারলাম না। সারাদিন খুবই খারাপ লাগছিলো। পরে বিকেলে স্যার ফোন দিয়ে বলল- বৈশাখী পরীক্ষা দিতে আসলে না যে! আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলো না। কারণ স্যার কে আলরেডি টাকা দেওয়ার দুইটা ডেট দিয়েছিলাম দিতে পারিনি। তখন স্যার নিজেই বলল- "কাল ক্যাম্পাসে এসে অন্তত উপস্থিতি খাতায় সাইন করে যাও। বাকিটা পরে দেখছি।

আমি বৈশাখী আক্তার।

ঢাকা মোহাম্মাদপুর থেকে কাজ করি ।
মুন্সিগঞ্জ এর বউ ।
আমার স্বামী @saifulraju
বাংলাদেশের একটি ফেসবুক গ্রুপ উইমেন ই-কমার্সে কাজ করি।