আমার সব টুকরো ইচ্ছে !! @shy-fox 10% beneficiary
রাত একটা বেজে চোদ্দো মিনিট। আমি বারান্দায় বসে বৃষ্টিতে পা ভেজাচ্ছি। অসম্ভব ভালোলাগায় ভেতরটা ভরে যাচ্ছে বারবার। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে খুব। ভয় হচ্ছে না তেমন। মেঘের ডাক কানে আসছে একটু পরপর। আর ভেতরটা মনে হচ্ছে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। হয়তো বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার ভেতরটার। ভীষণ একা লাগছে আজকে। কারণ হঠাৎ করেই আমার ভেতরের রঙিন বাক্সে লুকিয়ে থাকা কষ্ট, চাপা আর্তনাদ, না পাওয়া, অপূর্ণ কথা সব জেগে উঠেছে মনে হচ্ছে। আমি ঠিক প্রকাশ করতে পারছি না আমার কি হয়েছে। মেঘের ওই গম্ভীর ডাকের চাইতেও খুব বেশি ভারী মনে হচ্ছে ভেতরটা। অন্য সময় বৃষ্টির শব্দ ভেতরটা হালকা করে দেয়, আজকে উল্টোটা হচ্ছে। খুব বাজে রকম ভাবে একা বোধ করছি। কোনো মানুষের অভাব বোধ করছি না। অভাব বোধ করছি আমার অপূর্ণ চাওয়াগুলোর।
জীবনটা আরো সুন্দর হতে পারত। ভেতরে জমে থাকা ইচ্ছেগুলো একটা একটা করে দিন তারিখ মিলিয়ে পূরণ হতে পারত, আমার সব কষ্টগুলো হাসি হয়ে আকাশে ভাসতে পারতো, আমার চাপা কান্নাগুলো খুশির জোয়ার হয়ে আমায় নিয়ে হাসতে পারতো। নিজের সাথে আমার অনেক ইচ্ছে পূরণ করা বাকি। আমি আরো অনেকগুলো বছর বাচতে চাই। যতগুলো বছর বাচলে আমার ভেতরকার সমস্ত ইচ্ছেগুলো পূর্ণতা পাবে। আমার সমস্ত না পাওয়া, কষ্ট সবকিছু ওই নীলে মিলিয়ে যাবে। খুব ইচ্ছে হয় নিজের সাথে একদিন বিরাট কোনো খালি মাঠে হেঁটে বেড়াবো। সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠটায় শুধু আমি একা থাকবো নিজেকে নিয়ে। মাতাল করা বাতাস আমার সব ছুঁয়ে আবার আকাশে হারিয়ে যাবে। খুব ইচ্ছে হয় কোনো একটা নদীর পাড়ে বসে রাতের বেলায় চাঁদ দেখতে নিজের সাথে। ইচ্ছে হয় নিজের সাথে সমুদ্রের কিনারায় বসে মাঝরাতে এলোমেলো হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে ফর্সা সুন্দর জোছনা দেখতে। ইচ্ছে হয় ছোট্ট একটা বাগানে আমার প্রিয় সব ফুলের চারা আর আমি থাকবো। যত্ন করে ওদের পানি দেবো, আগলে রাখবো, খুব করে ভালোবাসবো।
কাঠগোলাপ, বেলী, জবা....দুনিয়ায় আসলে ফুলের অভাব নেই। মাঝে মাঝেই মনে আসে জীবনের সব ওলোট পালট গুলো ফুল হয়ে যাক। ফুলের চেয়ে নিষ্পাপ, সুন্দর আর কিচ্ছু হয় না। দেখলেই মনটা কেমন ভালো হয়ে যায় হুট করেই। ছুঁয়ে দেখলেই মনে হয় যেনো আমার ভেতর একটা ভালো লাগার দমকা হাওয়া বয়ে গেলো আচমকা। খুব ইচ্ছে হয় একদিন পাহাড়ে বেড়াতে যাবো। পাহাড়ের উচু নিচু জায়গাগুলোতে সুখ খুজবো নিজের মতন। পাহাড়ের খুব উচু কোনো জায়গায় বসে চায়ের মগ হাতে এলোমেলো চুলে সেই মাতাল হাওয়ায় মন ভরাবো। ইচ্ছে হয় আকাশটা ছুঁয়ে দেখতে খুব কাছ থেকে। আকাশে ভাসতে থাকা মেঘের টুকরো বাক্সবন্দী করে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারলে আরো ভালো হয়। আকাশে ওই ডানা ঝাপটানো পাখিদের মত যদি উড়তে পারতাম একটা দিনের জন্য.....
ইচ্ছে হয় একটা পড়ার ঘর বানাতে। যেখানে একদম মাঝে একটা বড় আরাম কেদারা থাকবে। মাথার উপর আর চারপাশে বইয়ের তাকে বই দিয়ে ভরতি, হাতের কাছে কফির মগ থাকবে, যখন তখন চুমুক দিয়ে আনন্দের সমুদ্রে ডুব দেয়া যাবে আর অনেক অনেক গাছ থাকবে, ছোটো ছোটো গাছের চারায় ভরতি থাকবে। ঘরটায় যখন রোদ এসে উকি দেবে তখন পুরোটা ঘর সবুজ হয়ে উঠবে, এক অন্যরকম সবুজ। রোদের সোনালী আভা আর সবুজ মিলে নিজেকে খুব সুন্দর একটা মানুষ মনে হবে তখন।
খুব ইচ্ছে আমার জোনাকি দেখার। একদম কাছ থেকে, অন্ধকার রাতে নিজের হাতে ছুঁয়ে দেখবো জোনাকি। গায়ে মাখবো জোনাকি আলো। তখন মনে হবে আকাশ থেকে বুঝি সব তারারা আজ মাটিতে নেমে এসেছে। তখন যে কেমন একটা অনুভতি কাজ করবে ভেতরে ভাবতেই ভালো লাগছে খুব। ভীষণ ইচ্ছে হয় একটা নৌকোয় করে বড় কোনো নদীর ঠিক মাঝখানটায় চলে যেতে। তখন বিকেলটা শুরু হয়েছে সবে এমন একটা সময়। ম্লান আর স্নিগ্ধ একটা আলোয় আমি নিজেকে দেখবো সেই নদীর মাঝে। চারপাশটায় পানি, হালকা ঢেউ....মনে হবে হারিয়ে যাচ্ছি একদম কোথায় যেনো। তারপর হুট করেই পা দুটো নৌকো থেকে পানিতে ডুবিয়ে দিবো। পা ভেজাতে ভেজাতে সেদিন আমি মাথার উপর ঝুলে থাকা খোলা আকাশটা দেখবো। আকাশে উড়তে থাকা পাখির মাঝে হারানো সুরগুলো খুজবো।
ইচ্ছে আছে আরো একদিন বৃষ্টিতে ভেজার। ঝুম বৃষ্টি হবে সেদিন। কয়েক ঘন্টা পার করে দিবো বৃষ্টিতে ভিজে। বৃষ্টির মধ্যেই দুটো কদম ফুল খুঁজে বের করবো নিজেকে উপহার দিতে। কদম হাতে সেদিন খুব হাসবো বৃষ্টি ভেজা শরীরটা নিয়ে। হঠাৎ করেই ইচ্ছে জাগে সমুদ্রে যাবো, সমুদ্রের কিনারায় থাকা বালিতে শরীর মাখাবো। সমুদ্রের ঢেউ নিজের হাতে ছুঁয়ে দেখবো। মাথার উপর থাকা খোলা বিরাট আকাশটায় আমার না বলা কথাগুলো সেদিন ছুঁড়ে দিবো। ভীষণ ইচ্ছে হয় আমার বিরাট একটা ক্যানভাস থাকবে। রং, তুলিতে ভর্তি থাকবে চারপাশ। অনেক অনেক রং আর সুন্দর সব তুলি দিয়ে সেদিন আমি ক্যানভাসটায় যা ইচ্ছে হবে আঁকবো। কেউ বলবে না সময় নষ্ট হচ্ছে, বলবে না এইসব অপচয়, বলবে না এগুলোতে কি লাভ....আমার কাছে যেটা মনের শান্তি আমি সেখানে লাভ লোকসান হিসেব করি না কখনো। এত হিসেব নিকেশ ভালো লাগে না আমার।
খুব ইচ্ছে করে মাঝরাতে এই ব্যাস্ত শহরটা দেখতে বের হবো পায়ে হেঁটে। এই শহরের অলিগলি ধরে ঘুরে বেড়াবো। কোনো পিছুডাক থাকবে না সেদিন। মাঝরাত পেরিয়ে ভোর যখন দেখা দিবে তখন বাড়ি ফিরে আসবো। অনেক ইচ্ছে আমার একটা সুন্দর শীতের রাতে নিজের সাথে কিছু সময় কাটাবো। রাতের শুরুতে একটা চাদর গায়ে দিয়ে চায়ের মগ হাতে শিশিরের উপর পা ভিজিয়ে হাঁটবো কিছুটা সময়। চায়ে চুমুক দিয়ে হেঁটে যাবো যতক্ষণ ইচ্ছে আর ভুলে যাবো সব কষ্ট, চাপা কান্নাদের। সেদিন আমি আরো একবার নতুন করে নিজেকে ভালোবাসবো।
গ্রীষ্মের কড়া রোদে একদিন বিশাল কোনো গাছের ছায়ায় বসে বই পড়ার ইচ্ছে আছে খুব। ছায়া আর রোদের লুকোচুরির মাঝে আমি সেদিন আবারও শান্তি খুজবো, নিজের জন্য একটুকরো রোদে একটা সুন্দর নাম খুজবো। আরও কত শত ইচ্ছে। কবে পূরণ হবে আমার জানা নেই। পূরণ হলেই হলো। এতসব ইচ্ছে তো আর মনে করে লিখাও যায় না। আমার সব টুকরো টুকরো ইচ্ছেগুলো প্রতিদিন বড্ড জ্বালায়। কবে তারা পূর্ণতা পাবে সেই আশায় রোজ আমার সাথে বৈঠকে বসে। কি অদ্ভুত সুন্দর একটা ব্যাপার....
আপনার বর্ননা অনেক সুন্দর হয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু আসলেই আপনার গল্পটা অনেক সুন্দর হয়েছে , আমার মনে হয় আপনার কাছ থেকে গল্প কিভাবে লিখতে হয় সেটা শিখতে হবে ;)
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
গল্পটি খুব রোমান্টিক আপনার মনের কথা ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা এই গল্পে তুলে ধরেছেন।বাহ্ খুব দারুন হয়েছে।সব মিলিয়ে রোমান্টিক😍
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপনার টুকরো ইচ্ছেগুলি দারুণ ছিল আপু।তবে সেটা গ্রামেই পূরণ করা সম্ভব আমার মনে হয় কিছুটা হলেও সহজেই।ধন্যবাদ