পতিতা ( ১০% @shy-fox এবং ৫% @abb-school এর জন্য)

সারাটা দিন জুড়ে সূর্যের প্রখর আলোতে শহরের এই গলি ওই গলি মিলিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষ যখন নানা কাজে ব্যস্ত থাকে, নিজের সমস্ত দৈহিক পরিশ্রমের বিনিময়ে মুখর হয়ে ওঠে আগামী দিনের উপার্জন টুকুকে নিশ্চিত করতে ঠিক সেই সময়টাতে শান্তি সুধা লেনের এই পাঁচ নম্বর গলিটায় যেনো কোনো হেল দোল লক্ষ্য করা যায় না। অথচ শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এখানেই কিন্তু হৈ হট্টগোল, মানুষের কোলাহল হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে বেশি, কিন্তু আজ দেখো কেমন নিশ্চুপ নীরব।

photo-1517330357046-3ab5a5dd42a1.jpegimage source

ধীরে ধীরে সূর্য পশ্চিমের কোলে হেলে পড়েছে, তার আভা হয়েছে ম্লান। আর তার সাথে সাথেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে এই গলিতে, আলোর রোশনাইতে ঝলমল করে উঠেছে এই গলির প্রতিটি কোণ। চারিদিক আলো হারিয়ে যখন নীরব নিঝুম হতে শুরু করে, তখন যেনো এই গলিতে মেলা বসতে আরম্ভ করে।

arindam-saha-tUAIxYIhIlM-unsplash.jpg
Image source

সন্ধ্যে যত রাতের দিকে গড়াতে থাকে কোলাহলে যেনো মুখর হয়ে ওঠে এই গলিপথ টি। জন মানব হীন গলিতে হঠাৎ উঁকি দিতে শুরু করে ঝলমলে রঙ চঙে কত গুলো ষোড়শী থেকে অষ্টাদশী মেয়ের মুখ। যাদের মাথার খোপা গুলিতে সুরভিত ফুল, মালা গোজা। যাদের আতরের গন্ধে ম ম করছে গলির প্রতিটা অংশ। মেয়েগুলির পরনের কাপড় যেনো আচ্ছাদনের চাইতে উজাটন করছে বেশি। সকলের মধ্যেই যেনো মোহময়ী একটা ভাব। সকালের দিকে এদিক ওদিক একটু আধটু এদের মুখ উঁকি দিয়ে দেখা গেলেও তাতে কিন্তু এত আকর্ষণ থাকে না,

photo-1587538018365-2a1f8b544c08.jpeg
Image source
তবে সন্ধ্যে হতেই যে আমূল পরিবর্তন ঘটে এদের চেহারার তা দেখে তাক লেগে যেতে হয়। এবার ধীরে ধীরে আরম্ভ হয় ছোট বড় গাড়ির আনাগোনা। প্রতিটা গাড়ি থেকেই নেমে আসে সাহেব সুভ লোকজন, যারা তথাকথিত সমাজে বেশ প্রতিষ্ঠিত। এমন ভাবেই একদিন সন্ধ্যায় , ২৪-২৫ বছর বয়সের একটি ছেলে গলির মুখে এসে দাঁড়ালো, সুঠাম দেহ, পরনে একটা নীলাভ জিন্স আর কালো শার্ট, যার উপরের দুটো বোতাম আলগা, গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি, উস্কো খুস্কো চুল। তাকে দেখলে বোঝা যায় চোখে মুখে একটি ইতস্তত ভাব যেন ভাবছে ভেতরে যাবে কিনা। এক পা বাড়িয়েও আবার থেমে যায় সে। যেন একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে, কেবলই ভেবে যাচ্ছে যা সে করতে যাচ্ছে তা উচিত হবে কিনা, যে পথ থেকে এসেছে সেই পথেই আবার ফিরে চলে যাওয়ার ভাবনাও তার মনে যে উঁকি দেয় নি তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এমনই দো টানার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার নজর পরে সেই সমস্ত লাস্যময়ী দের দিকে। দিক বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সে যেন কোনো মায়ার বশে হাঁটতে থাকে তাদের দিকে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করে সে এক অদ্ভুত রঙ সজ্জায় সাজানো ঘরের ভিতর। যেখানে একজন মধ্য বয়স্কা মহিলা তাকে দেখেই যেনো উৎফুল্লিত হয়ে উঠল। কারও উদ্দ্যেশে বলে উঠল , "যাও সোনা মনিরা সোনাবাবু কে নিয়ে যাও ভেতরে, দেখো যেনো যত্নে কোনো খামতি না থাকে।" ঘরের ভেতর থেকে উপরতলায় উঠে যাওয়ার একটা সরু সিড়ি, যেখান থেকে দুজন পাশাপাশি উঠতে গেলে ঠোকা লাগা টা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। ধীরে ধীরে টলোমলো পায়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে থাকে সে, আর তাকে সেই সিঁড়ি ভাঙতে সাহায্য করছে একজন রমণী।

"ওরে বাবু, এবার ওঠ। দেখ ন'টা বেজে গেলো। দুদিনের ছুটিতে এসে যদি সারাদিন ঘুমিয়েই থাকিস তাহলে কিভাবে চলবে বল দেখি?" - মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো অনিমেষের। অনিমেষ, দুরন্ত একটা ছেলে। বছর চারেক হলো মুর্শিদাবাদের এই পাড়া গা ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব বেশি নয়, তবে স্কুলের গণ্ডিতে পার হওয়ায় একটা কারখানায় কাজ জুটে গেছে। সোম থেকে শুক্র সারা দিন হাড়ভাঙ্গা খাটনি আর শনি রবি ছুটি। শুক্রবার বিকেলে কাজ থেকে ফিরতেই শিয়ালদা থেকে মুর্শিদাবাদ এর উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরে সে আর রবিবার রাত্রে আবার ফেরত আসার ট্রেন।

photo-1544714907-7b704cb5fe0e.jpeg image source

বাবা মারা যাবার পর সংসারের হাল ধরতে তাকে কাজে নামতেই হয়েছিল। নয়তো কলেজে যাওয়ার ইচ্ছা তার মনে মনেও ছিল, ছিল আরও পড়াশোনা করার ইচ্ছা, ছাত্র হিসেবে যে পাকা বুদ্ধি তার, ছিল তীক্ষ্ণ মেধাও । কিন্তু ভাগ্যের পরীক্ষার কাছে নতি স্বীকার তো করতেই হতো। তারপর থেকেই রোজ-নামচার এই জীবন, সপ্তাহের পাঁচটা দিন কলকাতায় আর দুটো দিন নিজের বাড়িতে। মা আর ছেলের সংসার এভাবে ভালোই চলছিল। হঠাৎ যে এইরকম একটা ঢেউ এসে সমস্ত কিছু এলোমেলো করে দেবে, তা কেই বা জানতো। ধীরে ধীরে তছনছ হয়ে যেতে শুরু করবে চারিদিক এমনটা হয়তো কেউ ভাবতেই পারেনি।

(ক্রমশ)

Sort:  
 2 years ago 

লেখার ধরনটা বেশ ভালো লাগলো। ক্রমশ ভেতরের দিকে ঢুকছিলাম । হঠাৎ করেই শেষ। যাই হোক পরের পর্বে কি অপেক্ষা করছে সেটাই দেখবার পালা। শুভেচ্ছা রইল।

শেষ হয়নি দাদা, সবে শুরু। অপেক্ষা করুন নতুন পর্ব আসছে শীঘ্রই।

This is a one-time notice from SCHOOL OF MINNOWS, a free value added service on steem.
Getting started on steem can be super hard on these social platforms 😪 but luckily there is some communities that help support the little guy 😊, you might like school of minnows, we join forces with lots of other small accounts to help each other grow!
Finally a good curation trail that helps its users achieve rapid growth, its fun on a bun! check it out. https://plu.sh/somland/

Enjoy best deals- Learn more https://isla-kiniw.com/

 2 years ago 

পরবর্তী পর্ব পড়ার লোভ জাগিয়ে দিলেন। আপনার লেখার হাত বেশ ভালো। আশা করি আমরা কমিউনিটিতে একজন ভালো লেখক পেতে যাচ্ছি।

অনেক ধন্যবাদ দাদা, পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়ি আসছে। একটু অপেক্ষা।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58559.96
ETH 3156.41
USDT 1.00
SBD 2.44