তুমি আসবে বলে সন্ধ্যারাত এখনো হয়নি || [ মুক্তলেখা গদ্যধারায় ]

🗓️📌 তারিখ : ০৮.০৭.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ।

হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণময় জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।
ধন্যবাদ৷

মানুষের জীবনে নানা পর্যায় একটির পর একটি আসতেই থাকে, এটা জীবনের চিরাচরিত নিয়ম। যদিও পৃথিবীতে জ্ঞানীগুণী বলে " যে দিন চলে যায়, তা আসন্ন দিনের থেকে ভালো হয় ",তারপরেও আমি এ বিষয়টির সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারি না। হয়তো সোনালী সকালগুলো প্রায় সবদিনই শৈশবের জন্য বরাদ্দ থাকে, যখন মানুষ বেশি বুঝতে শিখে যায়, তখন নানা বিপত্তি দানা বাঁধে।

বয়স যখন বাড়ে মানুষের তখন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, ধ্যান ধারণার প্রসার, জগৎ ও জীবন থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়, লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে ধীরে ধীরে পৃথিবীর একটি বিরাট পরিমন্ডলে প্রবেশ করতে থাকে। এ প্রবেশ দীর্ঘকাল ধরে আজীবন অব্যাহত, যত গভীরে ততই খেদ, আক্ষেপ আর চিন্তা দুশ্চিন্তার শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করে।

Src

সুখে দুঃখে জীবন অতিবাহিত হবে, তাই স্বাভাবিক। তবে সবসময় জীবন প্রবাহ একরকম সুরে তরঙ্গায়িত হয় না। কেমন হতো যদি পৃথিবীর এ সময়যাপন সুরতরঙ্গের মতো হতো, সঙ্গীতের মতো গানের সুর বিভিন্নরকমে বিস্তৃত - কখনো হল্লা খুশি হওয়া, বিষাদ করুণ সুর, কখনো অনুপ্রেরণার একটি ডানা মেলা চিলের পাখা হয়ে ক্রমশ আকাশের দিকে মুক্ত হয়ে বেড়ে ওঠার জন্য আকুল হয়ে আছে ?

দিনের শেষে যখন সকল কোলাহল সারা হয়ে ক্রমশ অন্ধকার নামছে, এত শব্দময় পৃথিবীর ব্যস্ততা কমছে ধীরে ধীরে, আর চারপাশের সবুজ গাছপালায় শেষ বিকেলের আলো ঝলমলে দিগন্তের ছাওয়া রোশনি কমে গিয়ে নিভে যাওয়া প্রদীপের মতো লাল হয়ে চলেছে। তারপর একটি অরণ্য এসে পড়েছে, সেখানে ঘাসের সারি মাঠের পাশে নির্জনের সবটুকু ঘ্রাণ, অনুভব আর ভালোলাগা এসে জড়ো করে চলেছে।

সেখানে কত আসলো, কত গেল তার কোন হিসেব রাখার তাড়না নেই। পরেরদিন নিজ কাজকম্ম সামাল দিতে হবে আর নতুন কিছু সুগভীর কাজ হাতে নিয়ে তার একটি সুরাহা করতে হবে, এমনতরো চিন্তা রেখাপাত করে না কপালের ভাঁজে। সংসারের সব কাজ আর দুশ্চিন্তা উড়ে চলে গেছে কোন এক বাঁকে, ধোঁয়ার মতো অসীমের পানে আর মনে মনে শূন্যতার প্রকৃতির শোভা জাপটে ধরতে চায়।

Src
তারপর যদি থাকে চিত্তে সেই ভালোবাসার মানুষ, সে আসবে বলেও আসে নি দিনের শেষে। শত অভিমান আর না বলা কথা চিন্তার রাশি হয়ে ভেসে যায় প্রতিদিন, প্রতিক্ষনে চাঁদের আলো তাকে পূর্ণিমা সন্ধ্যায় ডেকে চলে - অথচ তাকে বলা হয় না, খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু তা বাস্তবে হয় না, হয় নাকি ?

সত্যিটা এই সবাই ভালোবাসতে জানে, ভালোবাসতে পারে না। দুটোর মধ্যে একটি তফাত রয়ে যায়, যা কখনো অপূর্ণতায় সংহার হয়ে যায়। সব শূন্যতা দেখা যায় না, তেমনি হৃদয়ের শূন্যতা।

প্রিয় একটি মুখ দেখবে বলে কতদিন যে অপেক্ষায় থাকে নিঃস্ব হৃদয়ে, দূর হতে সে আসবে ফিরে, দিগন্তের মাঠে যতক্ষণ আলো রয়ে গেছে ততক্ষণের লগনেই সে দেখা দিবে সফেদ গাউন পরে, ফুলের মতো মুখখানি, তা রজনীগন্ধাকে ফিকে করে দেয়, গোলাপকে পরাজিত করে আর হাসনাহেনাকে রাঙিয়ে দিয়ে যায়।

Src

সে আসবে বলে দূরের পথ চেয়ে থাকা, ঘুরেফিরে তার আপণ রূপে মরীচিকা সারা মনপ্রাণ জুড়ে বিরাজ করে চলেছে, তার শেষ হয়েও ফুরিয়ে যায় না। কখনো রূপসাগরের ঢেউ উপেক্ষা করে তার আগমনী রূপ দেখা দেয়, ভেসে ওঠে নূপুরের নিক্কণ ধ্বনি কানে বাজে তার অবিশ্রান্ত ধ্বনি সারাটা সময় ধরে।

তাকে দেখতে পেলেও, পাওয়া হয়ে ওঠে না। কি জানি ভালোবাসা নামক চার অক্ষরের শব্দের মধ্যে কত রূপ। অল্প কয়েকটা বোঝা যায় বাকিগুলো হারিয়ে যেতে থাকে। তারপর কখনো তা যোগ বিয়োগের অনিবার্য সমীকরণের মধ্যে দিয়ে গিয়ে শেষমেশ বিয়োগকেই বেছে নেয়, তখন কান্নার রঙের গভীরে সূর্যের অস্তের লালিমা নিজ স্থান লাভ করে । সুললিত চাহনির প্রতিফলন !

একটি সময়ে এসে জীবনের সাধ খুঁজে পাওয়া যায় না। একাকী অনেকটা পথ যাওয়ার পর সে রাস্তা ধরে বাকি পথটুকু পাড়ি দেওয়া হয়ে ওঠে না। তখন পথের সাথী হয়ে কেউ এসে পড়ে গল্পে, তাকে দিয়েই পথচলা এগিয়ে যায়। দিন আসে দিন যায়, সকাল গড়িয়ে সাঁজের বেলা ফুরিয়ে রাত গভীরে প্রবেশ করে।

Src

একদিন শুধু আমি থেকে আমি ও সে হয়ে একাকার হয়ে পড়ে দীর্ঘ নির্জন প্রহর, সাঁঝের সুরে জীবনের আহবান বলে চলে, এই ভালোবাসা নিজেকে বাঁচতে শেখায়, মরুভূমি থেকে মরুউদ্যানের দিকে। উষর বালুরাশির থেকে জলাধারের দিকে।

এভাবেই গল্প হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

অবসান।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা

(