নতুন আশায় বাঁধা ঘর | পর্ব:০১ |

হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণময় জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।

প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু কথা থাকে যা মনের ভেতরে লুকানো থাকে, কিছু কষ্ট বেদনা যা বাইরের চাহনির মাঝেও ধরা পড়ে না। সব কথা হৃদয় বলার সৌভাগ্য রাখে না আর অনুভূতিগুলো এক সময় হালকা হয়ে ধোঁয়ার মতো ওপরের দিকে উঠে যেতে থাকে। তার সবটুকু আমরা দেখতে পাই না, তবে তার কিছু নজির আজকের পোস্টে তুলে ধরবো।

Src

কোন এক শরতের দিনে এখন যেমন কাশফুল ফুটে উঠেছে তেমনি করে প্রকৃতি সেজেছিল আকাশের রঙের মাঝে যেমন এক ধরনের আড়ম্বর খুঁজে পাওয়া যায়। চারদিকে গ্রাম, কুঞ্জ, ঘনবসতি ছেয়ে গিয়েছে আর তারই পাশ ধরে রূপসা নদীর জল বয়ে চলেছে নিজের মতো করে।

বলেছিলাম, প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে নানান রকমে ঢাকা রঙ থাকে, স্বপ্নগুলোও সে রঙে রাঙানো থাকে। বাইরের প্রকৃতির সাথে তার সাদৃশ্য দেখা যায়, কখনো সময় যখন নানা দিক থেকে জ্বালা যন্ত্রণা দিয়ে যায়, সংসারের নানা জিনিস যা মনের গভীরে প্রবেশ করে - তখন প্রকৃতির মাঝে নিজেকে অনুভব করার একটি মাধুর্য থাকে।

শ্রেয়া জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠেছে একটি অসচ্ছল পরিবারে, তাদের আদি বসতি যেখানে ছিল সেটি পুরোদস্তুর একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। ঘরবাড়িগুলো বেশ পুরনো, গ্রামীণ পরিবেশ যেমন হয় ঠিক তেমন। শহরাঞ্চলের জীবনযাত্রার মধ্যে যেমন চাকচিক্য, জৌলুস ছিল - বেশ অর্থকড়ি ও দিন যাপনের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য, তাদের মধ্যেও সে বিষয়টি ছিল তবে তা ততটা বড় পরিসরে ছিল না।

মেয়েটি চোখ মেলে দেখতে পেত কিভাবে তার ভাইয়েরা ও বাবা নিজস্ব ব্যবসায় তদারকি করতো। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়েই নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখভাল করার জন্য চলে যেত। তারা প্রত্যেকেই কর্মঠ ছিল, কেউ ঘর সামলাতো - কেউ বাহির। তবে তাদের দৈনন্দিন জীবনের অবনতির জন্য কখনোই তাদের নিষ্ঠাকে দায়ী করা চলে না।

Src

কখনো অতীতকে কেন একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে দোষারোপ করতে হয়। মানুষের ভাগ্য যে অনেকাংশেই বিভিন্ন কারণে, নানান দশার মধ্যে পড়ে হতভাগ্যের পরশে পরিবর্তিত হয়ে জীবনের অবস্থার পরিবর্তন করে চলে, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। তেমনি এক ভাগ্যের পালাবদলে তাদেরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে হাত বাড়াতে হয়।

যে বিষয়টি সম্পর্কে বলছি তা বছর দশেক আগের ঘটনা৷ উপকূলীয় অঞ্চলে তাদের বাস ছিল আর শতবর্ষের বেশি সময় ধরেই তারা একই পরগণায় বাস করে এসেছে। বছর বছর নানা দুর্যোগ লেগে থাকতো আর সেগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য তাদের সংগ্রাম ছিল বছর বছর।

কখনো খরা তো অন্য সময় অনাবৃষ্টি, আবার তার হাত ধরে যখন ফসলের ক্ষয় হতো কৃষককূল দেখতে পেত একটি মন্দভাগ্যে ঢাকা দিন। তারপরেও প্রকৃতির এমন উদ্দামতার সাথে লড়াই করে তারা জয়ী হতো আর এভাবেই সময়৷ বয়ে চলেছিল।

Src

তারপর হঠাৎ এক বর্ষায় লাগাতার বৃষ্টিপাত হওয়া শুরু করে দিলে তারা এক বন্যার সম্মুখীন হলো। বন্যার পানি নেমে গেল আর তখনই শুরু হলো আরেক দুর্যোগ। নদীভাঙন একটাকা হয়ে দেখা দিল। নদীর ঢেউয়ে ভাঙতে শুরু করলো উপকূল আর কোন এক লগ্নে তাদের শতবছরে জোড়ানো ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেলে, একটি নৌকায় করে তারা পাড়ি দিল ঝড়ের কবলে পড়া সন্ধ্যায়।

কিছুদিন, সকাল -সন্ধ্যা -রাতে চললো অনিশ্চিত যাত্রা,অকূল নদীর বুকে চড়ে তাদের বয়ে চলা আর শেষ হতে চায় না। তখনি কোন এক সময়ে এসে তারা একটি চরের সন্ধান পেল। সেখানে অল্প কিছু মানুষ বসতি স্থাপন করেছে, তারা সেখানে যোগ দিল। একূল, ওকূল, দুকূল হারা মানুষ বাঁচার ও বাকি জীবন পাড়ি দেওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল খুঁজে পেল।

[চলমান]

১০% সাই-ফক্স ও ৫% এবিবি-স্কুল বেনিফিশিয়ারি