নিয়তিবাদ | সাফল্য -ব্যর্থতায় দেখা সংসার ।

🗓️📌 তারিখ : ২০.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার ।

সুপ্রিয় পাঠক ও বন্ধুগণ,

আপনাদের সবাইকে আবারো আরেকবার আমার এই বাংলা ভাষায় নিবেদিত বিশেষ ব্লগটিতে স্বাগতম জানাই। সবাই সুস্থ, সুন্দর ও ভালো আছেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। সাথে সালাম ও শুভেচ্ছা জানাই যারা দীর্ঘদিন আমার বাংলা ব্লগের সাথে আছেন আর নিজেদেরকে বিভিন্ন সৃষ্টিশীলতায় সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলছেন।

একটি মানুষের জীবনে সবসময়ই দুটি বিষয়ের নিগূঢ় সম্মিলন ঘটে চলে, তা হলো সুখ ও দুঃখের পালাবদল। আমরা বুঝতে পারি না কখন সুখের দেখা মিলবে আবার দুঃখের স্রোত এসে গ্রাস করে নেবে।

Src

কখনো রোদের মতো প্রতিকূলতা চড়াও হয় আর খোলা প্রান্তরের মধ্য দিয়ে পথ চলতে হয়, কারো সময় থেমে থাকে না ; আবার কখনো মন ক্ষনিকের প্রাপ্তিযোগে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে।

সবার আবেগের প্রকাশভঙ্গিমা একরকম হয় না, কেউ নিজেকে খুব বেশি প্রকাশ করতে ভালোবাসে, আবার কেউ চুপচাপ নিজের মতো করে সবকিছুকে বিশ্লেষণ করতে মনোযোগী হয়।
দুরকমের বৈপরীত্যের চাদর থাকলেও কখনোই কিন্তু একটি ব্যাক্তিবিশেষের নিজেকে অতিমাত্রায় আবেগের চড়া স্রোতে ভাসিয়ে দেওয়া উচিত নয়।

এ কথাটি এজন্য বলছি কারণ একটি বিশ্বাসের মূল সবসময়ই সত্য একটি পথে ধাবিত করার জন্য ইন্দ্র্রীয়গত বোধ জাগ্রত করে। নিয়তিবাদ নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত ভাবনার মধ্যে একটি সংযোগ আছে, যদিও সব বিশ্বাসই সার্বজনীন নয়।
একটি মানুষের জীবনে তাত্ত্বিক যে দিকটি থেকে বলা হয়, দুঃখ সুখের পরিমাণ নির্দিষ্ট, তা পূর্ব থেকেই বেঁধে দেওয়া, তা নশ্বর ও জাগতিক- মহাজাগতিকের ক্ষেত্র ছাড়িয়েই বেড়ে ওঠে। কখনো চারপাশের মানুষের জীবনের নানাবিধ ঘটনার প্রতিক্রিয়ার দিকে খেয়াল করে দেখেছি, খুব বেশি কিছু পেয়ে গেলে উৎফুল্ল ও আনন্দে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে একটা মস্ত গন্ডগোল বাঁধিয়ে ফেলে।

কিছুদিন আগে যখন একটি পরিচিত বন্ধুমহলে দেখেছি লটারির ভাগ্য জিতে নিতে, যেখানে লাখো লাখো মানুষের মধ্য থেকে অল্প কয়েকেজন মানুষ সৌভাগ্যের দেখা পায় আর যখন যৎসামান্য পরিমাণ ব্যয় করে কয়েক মাস পরে পত্রিকার ভাগ্যবান বিজয়ী লটারির নাম্বার স্ক্রলের মধ্যে নিজের লটারির পাতার নাম্বারটি দেখতে পায় - তখন আবেগের চড়া স্রোতকে সামাল দেয়া কঠিন।

খুব স্বভাবতই এত এত লটারির মধ্যে থেকে একটি বিজয়ী হওয়া আর যে ব্যাক্তিটি প্রায়শই নিজের ভাগ্যকে গালাগাল দিতে শিখেছে, নানা আয়োজনে আর ক্ষেত্রবিশেষে অল্পের জন্য আরাধ্য কিছু হাতছাড়া করেছে - তখন হতাশা এসে দানা বেঁধেছে। পারেনি হতাশার কালো অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে। বিষন্নতার একটা আবছা ছায়া বিরাজ করতো সারাটা সময় জুড়ে।

যখন দেখেছি খুব বেশি উৎফুল্ল হতে গিয়ে এমন কাজ করে বসে যা ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়, যা শুধুমাত্র সংযমী হতে পারলেই ঘটতো না। এ ধরনের কাজের সংখ্যাও কম নয়।

Src

আবেগীয় চড়ামাত্রার বহিঃপ্রকাশ কখনোই ভালো নয়, কেননা যদি তা ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে হতাশা বা সাফল্য দুটোই অর্থহীন আর তা অনবরত জীবনের পথে ঘটে চলে।
আমরা সবসময় তা বুঝতে পারি না। নিয়তিবাদ আমাদের শেখায় সবকিছুই বরাদ্দ আছে আগে থেকে। এটি এমন এক ধরনের বিশ্বাস যা বলে, দুঃখসুখের মধ্যে জীবন যা দেবার তা দিয়েই যাবে।
তা নিয়ে বেশি কিছু ভাববার নেই, হতাশাগ্রস্থ হওয়াও ঠিক নয় - তেমনি হয়তো একদিন প্রত্যাশার চেয়েও বড় কিছু পাওয়া যাবে - যা হয়তো স্বপ্নেও ভাবা হয় নি।

অতীতে যখন থেকে বুঝতে শিখেছিলাম যে, সবকিছুই নিয়মসিদ্ধ ভাবেই ঘটে আর অল্পের অতৃপ্তি কখনো একটি উন্নত অবস্থানে নিয়ে যায় যদি প্রচেষ্টা আর ধৈর্যের সমন্বয় ঘটানো যায়, তখন সব অভিযোগ তুলে নিয়েছি। ভাগ্যকে দোষ দেয়া ঠিক কাজ নয়, কারণ যা হবার তা তো হবেই - আজ অথবা কাল।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,

যাহা চাই তা ভুল করে চাই, যা পাই - তাহা চাই না ।

এটি অবশ্য ধ্রুব কিছু বিষয় সামনে নিয়ে আনে, এই যেমন চাওয়া পাওয়ার সাগরে নিমজ্জিত জীবন আর তার বয়ে চলা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির খেলা। আমি মনে করি, সেই অনুসারেই আবেগীয় বহিঃপ্রকাশ হওয়া উচিত। তাহলেই জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে।

সবার জন্য শুভকামনা অবিরাম আর ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। দেখা হবে আশু আগামীতে। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা