একটি রেডিও ও ঝড়ের দিনের ভেলায় (তৃতীয় পর্ব)

🗓️📌 তারিখ : ২৬.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ।

দেখতে দেখতে জুন মাসও শেষ হওয়ার পথে। সময় কিভাবে নিজস্ব গতিতে চলে যায় চোখের পলকে মনের অন্তরালে তা টেরই পাওয়া যায় না। কেমন আছেন প্রিয় কমিউনিটি বন্ধুগণ?

আশা থাকবে বরাবরের মতো ভালোই থাকবেন, সবমিলিয়ে দিনশেষে সুন্দর দিনযাপনের মধ্যেই একটি ভালোলাগা ও পূর্ণতা লুকিয়ে থাকে। আমাদের সকলেরই সুযোগ খোঁজা উচিত, সে অনুভূতিটি ও সময়কে কিভাবে কাজে লাগিয়ে নিজের মতো করে স্বপ্নের মেলবন্ধন খুঁজে বেড়ানো যায়।

বেশ কিছুদিন আগে পর্ব আকারে অতীত জীবনের স্মৃতিচারণমূলক একটি গল্প লেখা শুরু করেছিলাম যা বেশ দারুণ একটি ছন্দ পেয়েছে দেখে ভালো লাগলো। যখন ভেবে দেখি, জাত লেখক হিসেবে তো অনেক গল্প সাহিত্যের আদ্যোপান্ত লিখে গেলাম, কিছু খসড়া আকারেই নিজস্ব নিয়তি খুঁজে পেয়েছিল আর বেশ কিছু প্রকাশনার পর্যায়ে ত্বরিয়ে গেল।

Src

তবে দীর্ঘ সময় চিন্তাভাবনা করে আর ভালোলাগা খুঁজে পাওয়ার পর তাতে একটি ঘনিষ্ঠ ভাব যেই ধরতে পেরেছি, সেটির আরো গভীরে গিয়ে মূল অন্বিষ্ট বিষয় নিয়ে চিন্তা করার পরই সার্থকতার মর্মভেদ করতে পেরেছি।

শৈশব জীবনের স্মৃতিতো সবারই থাকে কমবেশি, কিন্তু সবকিছু তো আর মনে থাকে না সবার। তবে যেটুকু উঠে আসে তাতে বেশি মনের আলোড়ন তৈরি হয়, তাই ভবিষ্যতের পাথেয় হয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকে মনিকোঠায়।

তো চলুন, আবার সেই মূল গল্পের ভেতরে প্রবেশ করা যাক যেখান থেকে লেখা শুরু করেছিলাম। আশা করি আপনাদের তা ভালো লাগবে আর যেকোন গঠনমূলক মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট সেকশনে, আলাপ হবে, আড্ডা হবে - এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকবেন আর শুভকামনা রইলো অঢেল।

---------------- ------------------ ---------------- ---------------::
সময় নিরবধি বয়েই চললো তার নিজের মতে করে, ঠিক তেমন আমাদের নিজেদের গ্রামগুলোর প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলো যেমন তার স্রোতের পালাকে কখনো থামাতে পারে নি চিরকাল। নানা আয়োজন সম্পন্ন হতো আবার তা ফুরিয়ে যেত ছলেবলে, কোন না কোন ঘটনার রেশ ধরে।

লোকে বলে চলে শৈশব-কৈশোর জীবনের সময়গুলো হয় সবচেয়ে সোনালি, সবচেয়ে রঙিন আর নানান স্বপ্নে মোড়ানো। এসময় কোন নৈরাশ্য থাকে না, চিন্তা -দুশ্চিন্তারা ভীড় জমায় না। আর সর্বোপরি জাগতিক পৃথিবীর প্রসারমান জ্ঞান যত বেশি হয়ে ওঠে, বোধশক্তির আধিক্য নতুন ফ্রেমে পৃথিবীকে, চারপাশের প্রকৃতিকে দেখতে শেখায় - যা ক্রমশই নির্মল পৃথিবীর জীবনযাপনকে বিষিয়ে তোলে।

যতদিন এ বিষয়টি নিয়ে ভেবেছি ততবারই অবাক হয়েছি, সাথে কিছুটা বিস্মৃতিপ্রবণ যে সরলরেখার জীবন নিয়তিতে সবসময়ই ঢাকা পড়ে ছোটবেলার খুনসুটি আর তার আস্তরণের সেই দিনগুলি যখন প্রকৃতি সান্নিধ্য কিংবা জাগতিক জীবনযাপন ছিল নিজের মতো করে রাঙানো, সব সময় জুড়ে তার সত্তায়, ভালোলাগার পুরোটা ক্ষন জুড়ে।

Src

পরেরদিন সকালে বাল্যবন্ধু জুয়েল এসে হাজির হলো বাড়িতে। আমি সবে ঘুম থেকে উঠে প্রাতরাশ সেরে বারান্দার বাইরের দিকে চেয়ে দেখছিলাম সেদিনের আবহাওয়া আর চারপাশের প্রকৃতি - তার কতটুকু বদলে গিয়েছে। বর্ষার মৌসুমে দেখা যেত প্রায় দিন পুরোটা সময় জুড়েই বৃষ্টি লেগে আছে, কখনো ঘনঘোর - কখনো তা পশলার আকারে, ঝুপ ঝুপ! ঝম ঝম!

দুটোর ধ্বনাত্নক ব্যন্জনায় পার্থক্য আছে। একটিতে ঘরের বাইরে বেরোনো দায়, অন্যটিতে ছাতা মাথায় ঘুরে বেড়াতে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে৷ কিন্তু সেদিন সকালে চমকে দিয়ে সূর্য তার সেই গ্রীষ্মের গনগনে রূপ নিয়ে হাজির হলো। ঘরের চৌহদ্দি, রাস্তাঘাট হালকা শুকাতে আরম্ভ করলো। জুয়েল এসে গতকালের লেনাদেনার পাই ফিরিস্তি দিতে শুরু করলো।

সেবার পঞ্চাশ টাকা লাভ হলো। আর দুজনের পকেটে আধাআধি বখরায় ভাগ পড়লো। দশটাকা ট্যাকে রেখে দারুণ অনুভূতি হলো। মনে হলো এবার সত্যিই একটি দারুণ কাজ করেছি। তাকে বললাম, চল। আজকে বিকেলে হাটের পাশ ধরে যে সরু সাঁকোটা আছে তা পার হয়ে একেবারে গঞ্জে তরী ভিড়াবো। একটি মেলা বসেছে হপ্তার শেষে।

সে আমার কোন কথায় সায় না দিয়ে পারে নি। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বোঝাপড়ার মিল সবচেয়ে বড় বিষয়, যার কমতি ছিল না বিধায় সে আমার সাথেই চললো। দুপুরের খাবার খেয়ে খালের প্রান্তে চলে আসলাম। হঠাৎ করে দেখতে পেলাম একদল বেদে ভেসে এসেছে। তারা নানা রকম জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে, গাছের ছাল বাকল, কেউ পাকা ওঝা আবার কারো কাছে বেশ ফল-মূলের ভান্ডার আছে।

Src

গঞ্জ থেকে অনেকেই ফিরে আসতে লাগলো, আর তাদের দেখে বুঝতে পারলাম বোধহয় বড় একটি হাট বসেছে, এবার তাহলে মেলায় গিয়ে অনেককিছু দেখতে পাওয়া যাবে। আধঘন্টা পর মেলায় পৌঁছলাম৷ প্রথমেই দেখলাম কুমোররা মাটির তৈজসপত্র নিয়ে এসেছে, অন্যদিকে মিষ্টান্ন ভাণ্ডার আর দই সন্দেশ, গুড় বাতাসা, কাঁচাগোল্লা প্রচুর।

কিছু মিষ্টান্ন কিনলাম আর তারপর বাঁশি যেটা দিয়ে সুর তোলা যেত দারুণভাবে। এরপর চিংড়ি গ্রিলভাজা নিলাম আর সবশেষে একটি টর্চলাইট যেটি পেন্সিল ব্যাটারির সাথে সোলার চার্জিং ব্যবস্থা ছিল। তারপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে পথ ধরলাম, রাত করে বিল পার হওয়া মুশকিল হবে, নানা বিপদের হাতছানি থাকতে পারে।

এই আশঙ্কায় দুই বন্ধু মিলে পগার পাড় হয়ে গেলাম...

[চলবে]

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা

(