দূরে থেকেও কাছে | একটি জীবনের দর্শন ও ভাবনার উত্তরায়ণ

🗓️📌 তারিখ : ২৬.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার।

হ্যলো কমিউনিটি বন্ধুগণ,

আসসালামু আলাইকুম, আদাব/নমস্কার। কেমন আছেন আপনারা সবাই ?

নিশ্চয়ই ভালো আছেন বা ভালো থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন অবিরত। নিজেকে ও চারপাশের কাছের মানুষদের বিশেষ করে আপনজনের সাথে মিলেমিশে আনন্দ, সুখ -দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মাঝে একটি আত্নতৃপ্তি থাকে যা বিভিন্ন মানুষকে ভিন্ন ভিন্নভাবে ঘিরে ধরে।

এ পৃথিবীতে মানুষ যদিও নানান রকমের পেশা, বৃত্তি কিংবা জীবিকার সন্ধানে নিজেদের জীবনের একটি বড় অংশ অতিবাহিত করে চলে, তেমনি করে এসবের মধ্যে থেকে সবার ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ ধর্তব্য চাওয়া পাওয়ার গন্ডির মধ্যে মিশে থাকে। বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীতে মানুষের নিজেকে মেলে ধরা, জ্ঞানার্জনের ধারা ও ক্রমশ উন্নতি করার মাত্রা আলাদা, এবং তার ফলেই রচিত হয় ভেদাভেদ আর শেষমেশ একটি বস্তুগত প্রাপ্তির মেলবন্ধন।

সুখে দুঃখে মানুষের সময় বয়ে চলবে, তা-ই তো স্বাভাবিক, তাই নয় কি ? তবুও আমরা প্রায়শই শুধু মূল্য দেই ভালো থাকার বিষয়টা, সুখ সর্বখানে সর্বগ্রাসে যেন বিরাজ করে তার জন্য কমতির কম রাখি না, তা সে টাকাকড়ি কিংবা ধনদৌলত অথবা যশ,মান, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা - আরো কত কি।

Src

কিন্তু প্রায় সবসময়ই ভেবে দেখা হয় না, যদি দুঃখ এসে পরশ পাথরের মতো বুঝিয়ে না দিত যে আজকের হতাশা কিংবা কোন কিছুতে প্রাপ্তিযোগের বদলে হারিয়ে ফেলা বা মূল্যবান কোন কিছু খুইয়ে ফেলা একটি বড় অনুভবের দরজা খুলে দেয়, বুঝতে শেখায় আশপাশের মানুষরা আর তাদের জীবনেও পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অপ্রকাশ্যে থাকা কত ব্যথা, ছোটবড় আর হতাশা যা দানা বেঁধে রেখেছে - অথচ তা জানা হয় নি শুধুমাত্র নিজেকে গুটিয়ে রাখার ছুতোয়।

কিন্তু না, সত্য হলো এ বিষয়টি যেটি বলে চলে, যদি একদিন ক্ষুধার্ত না থাকা যায় তাহলে ভূরিভোজের সাথে যে বিপরীত অনুভূতিটি লুকিয়ে আছে তার সন্ধান কিভাবে করা যায়। আজকের দিনে এসে একটি ঘটনা যার চাক্ষুষ দৃষ্টিগোচর করে এসে তার মনের আলোড়ন কিছুতেই যেতে চায় নি, তা দেখে ভীষণভাবে চিন্তার সায়রে হালকা প্রবেশ করলাম।

মানুষ স্বভাবতই কাজের সন্ধানে, কিংবা ব্যবসা -বাণিজ্যসূত্রে অথবা শিক্ষার জন্য কিংবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে হলেও বিদেশ বিভূঁইয়ে যায়, যেতে হয় ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। কিন্তু দেখা যায় প্রায় অনেক মানুষের জন্যই প্রবাস জীবন সুখের হয় না। প্রথমত, অন্য একটি দেশ, ভিন্ন মানুষজন, ভিন্ন সংস্কৃতির চালচলন, আচার আচরণ ভিন্নধর্মী হওয়ার ফলে নতুন একটি মানুষকে খাপ খাইয়ে নিতে অনেক কষ্ট পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

দ্বিতীয়ত, কখনো পরিবার থেকে দূরে থেকে আর স্বদেশের প্রতি টান অনুভব করে হৃদয়ের গহীনে একটি শূন্যতা অনুভব করা হয়ে ওঠে যার নিরাময় কোন ঔষধের মাধ্যমে সারানো সম্ভব হয়ে ওঠে না৷ সেই চির চেনা রূপপ্রকৃতির মাঝে থাকা পরিবেশ আর আলোবাতাসের টান কখনো ফুরায় না - সে শত কিংবা হাজার মাইল দূর থেকে হোক কিংবা দূরত্ব যোজনের হোক ঘুরেফিরে একখানেই।

তবুও আমি দেখেছি, বেদনার অস্ফুট হাহাকার চেপে রেখে দিয়ে কাজের ফাঁকে কিংবা সময় পেলে অবসরে বাড়ির লোকেদের সাথে স্বদেশীদের সাথে দেখা হলেই কি নিদারুণ মায়ায় আলিঙ্গন করা হয়ে ওঠে, দু গালভরা কুশল বিনিময় করা আর তার সাথে হালকা চায়ের আলাপ ভিন্ন মাত্রা পেয়ে ওঠে। এসবই শুধু স্থানের ভেদাভেদে, দূরত্বের কারণে।

Src

প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূরে থেকেও প্রিয় মুখগুলো দেখার জন্য স্কাইপি কিংবা আধুনিক ম্যাসেন্জারে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়ায় মন ভারী হয়ে ওঠে। কত শত গল্প রচনা হয়, দূর থেকে ভালোবাসা ঠিকরে পড়ে চাঁদের আলোর মতো মিহি সুরে যার তুলনারহিত । শেষকালে মনে হয়, মানুষ নানা ঝক্কিঝামেলা পার হয়ে, নানা কষ্ট,বঞ্চনা সয়ে আখেরে প্রিয়জনের একটুখানি ভালোবাসা পেতে চায়, হারিয়ে ফেলে আবার মিলতে চায়, ঝগড়া কি খুনসুটি আর অল্প বিরাগের মধ্যে দিয়ে।

তাই বলতে হয়, যে যেমন রঙেই জীবনকে রাঙিয়ে চলি না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের আবেগ আর দেহমনকে সজাগ রাখা, অনুভূতিগুলো পুরনো হলে অথবা শুকিয়ে যেতে চাইলে তাকে ধরে জিইয়ে সজীবতায় রূপান্তর করাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ।

দূরে থেকে সুখের বৃহস্পতির চেয়ে বরং আপনজনের কাছাকাছি থেকে ভালোবাসা পেয়ে বেড়ে ওঠার বামুন গ্রহ কিংবা ছোট্ট তারাই শ্রেয়।

এ ভাবনা যখন থেকে চেপে ধরেছে, তখন থেকে আর বড় কিছু পাওয়ার জন্য হাত বাড়াই না। অল্পতেও দিন কেটে যায় বেশ, বেশি কিছু পেলেও দিন থেমে থাকে না। এ সত্য যেভাবে ভাস্বর হয়ে বেড়ে ওঠে তেমনি করে জীবনের কিছু বিষয়ও সহজ হয়ে যায়। শেষমেশ, বলতে হয় সহজ ভাবলেই সহজ, কঠিন করে নিলেই বরফের মতো কঠিন, তাকে ভাঙতে হয়, কিংবা গলে গিয়ে ভেঙে যায়।

তাই নয় কি ?

ধৈর্য্য ধরে পড়বার জন্য ধন্যবাদ জানাই। দেখা হবে আগামীর কোন এক দিনে, সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, খুশী থাকুন, 💐✒️

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা

(