একটি রেডিও ও ঝড়ের দিনের ভেলায়...(২য় পর্ব) { ১০% সাইফক্স ও ৫% এবিবি স্কুল বেনিফিশিয়ারি }

🗓️📌 তারিখ : ২১.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার।

সুপ্রিয় পাঠক ও বন্ধুগণ,

আপনাদের সবাইকে আবারো আরেকবার আমার এই বাংলা ভাষায় নিবেদিত বিশেষ ব্লগটিতে স্বাগতম জানাই। সবাই সুস্থ, সুন্দর ও ভালো আছেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। আজ শুক্রবার, বাঙালির জন্য এটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন। বেশ বৃষ্টি বাদলার মধ্যে দিয়েই সময় জমপেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

কেমন আছেন আপনারা ? আশা রাখি ভালোই আছেন আর ভালো থাকার মাঝেই জীবনের একটি বড় প্রাপ্তিযোগের বিষয়টির চূড়ান্ত সুরাহা হয়ে যায়। যদিও সবাই বলে যে আর্থিক, সামাজিক আর অবস্থান সৃষ্টির মাঝেই বিশাল সুখ নিহিত আছে, তবে এসবই তো ভালো থাকার জন্যই, তাই নয় কি ?

ইদানীং বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে অতিবৃষ্টি লক্ষ্য করা গেছে, যদিও জুন মাস বর্ষাকাল হওয়ায় বৃষ্টি হওয়া আর তার মাত্রা আবহাওয়া অফিসের ভাষ্যমতে, লাগাতার একটানা ভারী মাঝারি বর্ষণের মতো হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপরেও কিছু জেলা ও বিভাগে প্রায় প্লাবিত হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থানে পৌঁছেছে, যেটি সত্যিই কাম্য নয়।

Src

সিলেট অঞ্চলের মানুষ খুব দুর্দশার মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছে, বিশেষ করে রাস্তাঘাটে যেভাবে পানি উঠে এসেছে আর ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালার কিছু অংশ তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে, যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তো বন্ধুগণ, বন্যা নিয়ে কথা বলছিলাম যেহেতু সময়ের সাথে বিষয়টা প্রাসঙ্গিক ।

কয়েকদিন আগে রেডিও ও একটি ঝড়ের দিনের ভেলা শিরোনামে একটি স্মৃতিচারণমূলক গল্প লিখতে শুরু করেছিলাম। আজকে গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। প্রথম পর্বটি আপনাদের ভালো লেগেছে দেখে খুবই ভালো লাগলো। তো চলুন আজ পরবর্তী ঘটনায় প্রবেশ করে ভূমিকা পর্ব শেষ করি।

প্রথম পর্বের পর...

বৃষ্টির পানির ধারা ক্রমাগত বাড়ছে, তবে রৌদ্রের প্রখরতাও বেশ বোঝা যাচ্ছে যখন এক পশলা বৃষ্টির পর আকাশ ফকফকা হতে শুরু করে। এসময় নদীর ওপরে মাছরাঙার ঝাঁক চোখে পড়ছে৷ গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে একটি বিশেষত্ব হলো দুই -তিনটে বা বড়জোর চার পাঁচেক গ্রামগুচ্ছের মধ্যে অন্তত একটা শাখানদী নিজের মতো করে স্রোতস্বিনী গতিতে বেয়ে চলেছে।

নদী কেবল একেলা নিজের মতো করেই বেয়ে চলছে না, তার পাশ ধরে কাছাকাছি কখনো বিল কিংবা খাল যুক্ত হয়ে স্রোতের ঢলকে কমিয়ে দিয়েছে ; নদীর চড়া প্রশস্ত পাশ কমে গিয়ে ক্রমশ সরু হয়ে তা মিশেছে কানাগলির মতো খালে, যেখানে ফসলি ক্ষেতের সংযোগ রয়েছে। মাঠের পর মাঠ পানিতে টইটম্বুর হয়ে রয়েছে আর কোথাও একটুখানি খালি পানিবিহীন মাটির দেখা নেই।

এমন অবস্থা অবশ্য যখন গরমের খরায় চারপাশ শুকনো, নীরস। মাটি ফেটে চৌচির আর তাপমাত্রার পারদচূড়ী অবস্থা জনজীবনকে অসহ্য করে তুলেছে। তারই মাঝে মেঘ দে, পানি দে সঙ্গীতের গীতবাজনা কৃষককূল গৃহস্থবাড়ির সবার মুখে মুখে। তার পর এমন লাগামহীন বৃষ্টির উৎসব, যার পর বখিল হাতে বৃষ্টির উপহারকে আর চাই না বলে মানুষজনের একটি বিরক্তি চাপা সুরে ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে।

আমি পরেরদিন বেড়িয়ে পড়লাম আমার এক বন্ধুর বাড়ি, নাম জুয়েল। সে আমাদের বাড়ির শেষ সীমানা উঠোন থেকে আধমাইল দূরে তাদের নিজ বাড়িতে থাকে। মাঝখানে কিছু ঝোপঝাড় আর বাঁশবাগানের এলাকা রয়েছে, যার পাশ দিয়ে কাঁচামাটির রাস্তা বয়ে চলেছে। সেই ছোটবেলা থেকে আমার পরিচিত বন্ধু হওয়ার সুবাদে সে বাল্যকাল থেকে সবসময় যখনই বাইরে বেড়িয়ে পড়তাম, সে আমার সাথেই চলতো।

Src

বরাবরের মতো তাকে বলে রেখেছিলাম যখন পথের মধ্যে তার সাথে দেখা হয় যে, কাল একবার তোদের বাড়ি আসবো সময় করে দুপুরের পর, তৈরি হয়ে থাকিস। এমনিতে বিভিন্ন সময় যখন একসাথে মফস্বলি বিদ্যালয়টাতে পড়তাম, তখন দুপুরের পরের সময়টা সকল কাজকর্ম, লেখাপড়া থেকে মুক্ত থাকতো। এ সময়টা শুধু প্রকৃতি উপভোগের আর নিজের মতো করে ঘুরে বেড়ানো গ্রামের যে দিকগুলো অচেনা অদেখা রয়ো গিয়েছে।

বন্ধুর বাড়ি পৌঁছানোর পর তাকে বললাম, গতকাল একটা নৌকা ম্যানেজ করে রেখেছি । আজ পুরো দিন মাঝিকে দেখা যাবে না, সে দূরের হাটের কাছে গিয়েছে অন্য এক জরুরি কাজে। বিলের ঐ প্রান্তে যেখানে মাইলখানেক মাঝের ব্যবধান - তা পার হয়ে গেলেই নতুন কিছু দেখা মিলবে।

এমনিতো ছোটবেলার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া আর বাউণ্ডুলে স্বভাব তখনো ফুরিয়ে যায় নি, বরং বড় পরিসরে তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো। যেই ভাবনা সেই কাজ। কিছু রসদপাত্তি, কোচ আর একটি বেতের পাত্র সাথে নিয়ে রওনা হলাম নৌকা ধরতে যদি কিছি মেলে আর তাছাড়া তখন অবসরের কোন শেষ ছিল না।

Src

নৌকায় উঠে অর্ধেেকটা পথ জুয়েল দাঁড় বাইলো আর আমি বসে বসে ভাবছি কিভাবে নতুন পাড়ে গিয়ে পরিকল্পনা শানানো যায়। মাছ ধরার ঝোঁক তেমন ছিল না, বরং তার উল্টোটা অর্থাৎ যদি নদীর পাড়ের তালগাছ আর নারিকেল গাছের তাল - নারকেল করাগত করা যায়, তাহলে আর দেখতে হবে না।

কিছু নারকেল তাল নিজ বাড়িতে নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করবো আর কিছু বিলের ধারের হাটে বেচে পয়সা বানানো যাবে। কৈশোরের সে সময় এতটুকু ঝক্কিঝামেলা তেমন দুর্বোধ্য ঠেকতো না, জুয়েলকে তা বলতেই সে রাজি হয়ে গেল। তারপর পুরোটা জলপথ পাড়ি দিলাম। মাঝে একটা কলাগাছ আর কাঁকড়া ফেনার মাঝ দিয়ে দেখতে পেয়েছিলাম। এছাড়া বিলের পানি বেশ শান্ত স্থিরই ছিল বলা যায়।

শেষমেশ পুরো বেতের পাত্রে তাল বোঝাই হলো আর সাথে করে নারকেল কিছু পাড়লাম। হাটে পাঠিয়ে দিলাম বন্ধুকে দামদর করার জন্য আর নিজি ফিরে এলাম বাড়িতে বাকি অর্ধেকটা ফলপাকড় নিয়ে। ভাগ বাটোয়ারা পরে হবে, এর মধ্যে ভেলাটা দিয়ে দিলাম অন্য আরেক মাঝিকে। তারপর বাড়ির পথে রওনা হলাম, অপেক্ষা লয় জুয়েল কখন ফিরে আসবে গ্যাটে পয়সা নিয়ে। পরেরদিন আবার নতুন একটি কাজ পড়ে রয়েছে বলে...

[চলবে]...

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা