।। বনের পাতা বিক্রি করেই জীবিকা চলে শত নারীর ! ।। 10% shy-fox beneficiary।।
০৩লা নভেম্বর/২০২২ইং।
রোজঃ বুধবার।
বন্ধুরা, নমস্কার/আদাব
আমি @amitab বাংলাদেশ থেকে "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বাংলা ভাষাভাষী সকল বন্ধুদের জানাই হেমন্ত ঋতুর উষ্ণ শুভেচ্ছা। আশারাখি সকলেই ভাল আছেন। আমিও ঈশ্বরের কৃপা ও আপনাদের আশীর্বাদে ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সামনে ব্যতিক্রমী জীবন জীবিকার একটি গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। আর তা হচ্ছে- বনের পাতা বিক্রি করেই জীবিকা চলে শত নারীর !
জীবন জীবিকার তাগিতে পৃথিবীতে নানা পেশাজীবীর মানুষকে দেখা যায়। এদের মধ্যে কেউ ব্যবসা, কেউবা চাকুরী ইত্যাদি। এদের মধ্যে দিনমজুর আর কিছু ছিন্নমূল মানুষের জীবন জীবিকা সত্যি হৃদয়ে দাগ কাটে। তেমনি একটি পেশা বনের পাতা বিক্রি করে জীবন জীবিকার জন্য বেঁচে থাকার লড়াই করছে শতশত ছিন্নমূল নারী। এদের খুব বেশি একটা অর্থের চাহিদা নেই। দিনশেষে দুমুঠো ভাত ও ডালের টাকা হলেই চলে।
অদ্য বিকেলে গিয়েছিলাম বিশেষ একটি কাজে কাদিরাবাদ বাজারে। আর কাদিরাবাদ বাজারে যেতে হলে বিশাল সরকারি বনবিটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্য। বোনের মাঝখান দিয়ে পিচ ঢালা পথ। শত শত একর জমিতে গড়ে উঠেছে এই সরকারি বনবিট । যাবার সময় হঠাৎ লক্ষ্য করলাম বনের মাঝে মাঝে বেশ কিছু নারী ঝাঁটা দিয়ে বনের শুকনো পাতা জোড়ো করছেন। পুরো বনের এলাকায় প্রায় শতাধিক নারী এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
এক পা দুই পা করে এগিয়ে গেলাম তাদের কাছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এই পাতাগুলো কি করবেন। নিজের ভাত রান্নার জন্য সংগ্রহ করছেন নাকি ? তারা উত্তরে বললেন-না ভাই, এগুলো আমরা বিক্রি করি। সারাদিনে একেক জন নারী চার থেকে পাচ বস্তা পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। এক বস্তা পাতা বিক্রি হয় ৬০ টাকা ধরে। আমি বললাম কিভাবে বিক্রি করে ? উনারা বললেন বাজার থেকে লোক এসে আমাদের বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।
এদের মধ্যে অনেকেই স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারী। কথায় কথায় পরিচয় হয় রহিমা বেগম, পুলি মাই ও কাজলী বেগমের সঙ্গে। তারা জানান, এই পাতার বস্তা বিক্রি করে যে টাকা পায় তা দিয়েই কোন রকমে চলে তাদের সংসার। একদিন পাতা বিক্রি না করতে পারলে তাদের সময় আগুন ধরে না। তাদের সকলের বাড়ি বনের পাশেই মদনখালী গ্রামে। অনেকের আবার থাকার ঘরটুকু নেই।
রাস্তার পাশে সরকারি বনের জমিতেই চাল তুলে বস্তি গড়ে তুলেছেন। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। অনেকেই ফাইভ স্টার হোস্টেলে নামিদামি খাবার নষ্ট করছেন। আবার অনেকেই শুধু বেঁচে থাকার তাগিদেই লড়াই করে যাচ্ছেন। আমার কাছে সব থেকে খারাপ লাগলো, রহিমা বেগমকে নিয়ে। সে স্বামী পরিত্যক্তা। তার দুটো মেয়ে, একটি মেয়ের বয়স ৭ বছর আর একটি মেয়ের বয়স তিন বছর। সঙ্গে করে মেয়ে দুটোকেও নিয়ে এসেছেন বনে পাতা কুড়ানোর জন্য।
তিনি বারংবার নিঃশ্বাস ছেড়ে বলছিলেন বনের পাতা করে কোন রকমে দিন যাচ্ছে। কিন্তু আমার এই মেয়ে দুটো বড় হলে কিভাবে বিবাহ দিব এই চিন্তায় রাত্রে ঘুমাতে পারি না। শুনে খুবই খারাপ লাগলো। এই পৃথিবীতে যাদের রয়েছে তারা তারা যদি এই সমস্ত ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়াইত তাহলে পৃথিবীটা শান্তিতে ভরপুর হতো। যাদের রয়েছে তারা আরো চাই, মানবিক মানবতা নেই বললেই চলে।
যাই হোক এই কাদিরাবাদ বনবিটে শতাধিক ছিন্নমূল দুস্থ নারীদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন শুকনো পাতা। এই পথে অনেকবার যাতায়াত করেছি কিন্তু দাঁড়িয়ে থেকে এ দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য কোনদিন হয়নি। কিন্তু আজকে সেই সৌভাগ্যটুকু হয়েছে। দোয়া ও আশীর্বাদ করি ভাল থাক এই সকল ছিন্নমূল নারী। যাদের অতিরিক্ত কোন লোভ-লালসা নেই। দিনশেষে ডাল ভাত হলেই যথেষ্ট।
বন্ধুরা, এই ছিল আজকে আমার বনের পাতা বিক্রি করেই জীবিকা চলে শত নারীর ! জীবন জীবিকা নিয়ে কঠিন বাস্তবতার একটি গল্প। আজ এ পর্যন্তই, আবার কথা হবে আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, সকলের দীর্ঘায়ু কামনা করে, শুভ রাত্রি।*
নাম | শ্রী ফণিভূষণ রায় অমিতাব। |
---|---|
User Id | @amitab |
Camera | Symphony Mobile phone. |
Mobile Phone Model | Z-35. |
Photo Location | Madan Kali pirganj rangpur. |
My Address | Vendabari Prigonj Rangpur Bangladesh. |
কত মানুষ কত রকম ভাবে নিজের জীবিকা নির্বাহ করে ভেবে অবাক লাগে। আসলে এভাবে যে কখনো পাতা বিক্রি করেও অনেকে পরিবারের খরচ চালায় সেটা ভাবতে সত্যিই খারাপ লাগে। তারা কতটা নির্বিষহ জীবন যাপন করে বুঝতেই পারছি। ভাইয়া আপনি অনেক সুন্দর ভাবে নিজের অনুভূতি দিয়ে এসব অসহায় মানুষের কথা তুলে ধরেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জি আপু, সত্যিই এরা খুবই নিরীহ। এদের চাহিদা বেশি নেই শুধু দু মুঠো ডাল ভাত। শত শত পরিবার িত হচ্ছে এই বোনের পাতা দিয়ে। মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
সত্যি কত মানুষ কত রকম কাজ করে জীবিকার তাগিদে। রহিমা খাতুন এর সাথে কথা বলে আপনি আমাদের মাঝে ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। তার দুটি মেয়ে একটি মেয়ের বয়স সাত বছর আর একটি মেয়ের বয়স তিন বছর। সে দুটি মেয়েকে নিয়ে কত কষ্ট করে পাতাগুলো কুড়িয়ে বিক্রি করে জীবিকার তাগিদে। আপনার লেখাটি পড়ে খুবই কষ্ট লাগলো। কত লোক ফাইভ স্টার এ খাওয়ার নষ্ট করতেছে আর কিছু লোক জীবিকার তাগিদে কত রকম কাম কাজ করে খাওয়া জোগানোর জন্য। ধন্যবাদ আপনাকে অসহায় মানুষের কথাগুলো শেয়ার করার জন্য।
জি আপু, সারা বাংলাদেশের এলাকাভিত্তিক এ ধরনের ছিন্নমূল অসংখ্য মানুষ রয়েছে। যারা ঠিক ভাবে দুবেলা দু'মুঠো ডালভাত খেতে পান না। মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এসকল ছিন্ন মূল মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।