কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করি সবাই-ই ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালই আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার পড়া নতুন একটি বইয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। ইদানিং চেষ্টা করছি বই পড়ে শেষ করে বই পড়ার একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে। সেই ধারাবাহিকতাতেই আজকে আমি এই বইটা পড়ে আমার অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

কেমন হতো যদি আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কেউ জীবজন্তুদের সাথে কথা বলতে পারতেন? নিঃসন্দেহে দারুণ হতো ব্যাপারটা। বন বালিকা গল্পে এমনই এক মেয়ে মিতুলের কথা বলা হয়েছে। ৬ বছর বয়সী মিতুল তার মায়ের কাছেই বড় হয়েছে, তার বাবা বিনা দোষে ৬ বছর ধরে জেল খাটছেন। অবশ্য তার অবস্থাকে জেল খাটা বলা যায় না, কারণ কোর্টে মামলা উঠেই নি। মিতুল তার বাবার সাথে কথা বলার জন্য একটি কাককে রাজি করায় চিঠি নিয়ে যাওয়া আসার জন্য। কারণ, কাকটার বুদ্ধি নাকি অনেক আর কাকটা নাকি ৩ পর্যন্ত গুণতে পারে!

কিন্তু সবসময়ই কিছু মানুষ থাকে যারা অন্যদের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হতে চায়, তাদের কাছে মিতুল অপরিসীম টাকার ভান্ডার ছাড়া আর কিছু না। মিতুলকে দিয়ে তাই তার মা সবসময়ই প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেয় যে সে কাউকে তার ক্ষমতার কথা জানতে দিবে না। কিন্তু ঘটনাক্রমে একদিন মিতুল দুই গ্রামের মধ্যকার একটি ষাঁড়ের লড়াই থামিয়ে দেয়। তখন গ্রামের স্থানীয় পরিষদের মেম্বার জব্বার মিতুলের ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে যায়। সে মিতুলের পেছনে তার চেলা-চামুন্ডাদের পাঠিয়ে দেয়। মিতুল কোনোমতে পালিয়ে সুন্দরবনে চলে যায়। কিন্তু মিতুলের গল্প মাত্র এখানে শুরু। বাকিটুকু বললে গল্পটা পড়ার মজাটাই চলে যাবে।

আমার অনুভূতিঃ

এখন আমরা আসতে পারি আমার ব্যক্তিগতভাবে গল্পের কোন কোন দিক ভালো লেগেছে। প্রথমেই বলতে চাই, এটার সাথে মুহম্মদ জাফর ইকবালের অন্য সায়েন্স ফিকশনের মিল নেই। অনেকেই জানেন, সাধারণত তার সায়েন্স ফিকশন পড়ার মাঝামাঝি অংশে এসে বোঝা যায় যে কাহিনী কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। শুধু অল্প কিছু বইয়ের ক্ষেত্রে এটা বোঝা যায় না, "বন বালিকা" সেরকম একটি বই।
দ্বিতীয়ত, আমার বাওয়ালি ও বনবিবির ঘটনাটা ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের খুব বেশি লেখায় বনবিবির কথা পাওয়া যায় না, যদিও অনেকেই জানেন যে সুন্দরবনের বাসিন্দারা ধর্ম নির্বিশেষে বনবিবির উপাসনা করেন।
তৃতীয়ত, আমরা বইতে বিনাদোষে কারাদণ্ডের বিষয়টি দেখি। শুধুমাত্র নির্বাচনে সমর্থন না পাওয়ায় মিতুলের বাবাকে জব্বার মেম্বার মিথ্যা হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামী করে মামলা করে আর কোর্টে ৬ বছর ধরে কেস উঠতে দেয় না। ক্ষমতার অপব্যবহারের এই উদাহরণ আমার ভালো লেগেছে।
সবশেষে, মিতুলের দুই দিন বয়সে যে ঘটনাটি ঘটে। আমরা যদিও জানি না এটাই মিতুলের ক্ষমতার উৎস কিনা, তারপরও এটা মিতুল ও জীবজন্তুদের মধ্যকার সম্পর্কটা বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরে।
আমার কাছে গল্পটার একটামাত্র দিক ভালো লাগে নি। সেটি হলো যে, যখন মিতুলের কাককে গুলি করে তার চিঠি চুরির প্ল্যান করা হয় তখন কারো মাথায় আসেনি চিঠিটা রক্তে ভিজে গেলে কী হবে অথবা চিঠিটা ছিঁড়ে গেলে কী হবে। আমার মনে হয় না বাস্তবে এত বড় ঝুঁকি নিয়ে কেউ একটি কাককে গুলির চেষ্টা করবে।
বইটির একটি অন্যরকম বৈশিষ্ট্য হলো "বন বালিকা" বইটি শুধু মানুষের কথা বলে না, এটি জীবজন্তুদের কথাও বলে। বিশেষ করে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বন্য প্রাণিদের প্রতি যে নির্দয়-নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হয়, সেটা যথাযথভাবে বইটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
যারা অবসরে বই পড়তে পছন্দ করেন, তাদেরকে বইটি আমি সাজেস্ট করবো। বইটি লাইফ-চেঞ্জিং বা আধ্যাত্মিক নয়, কিন্তু বইটি পড়া শুরু করলে আপনার সময় কীভাবে কেটে যাবে আপনি বুঝতেই পারবেন না।

আমি অলক রায়। আমি একজন বাংলাদেশী। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমি টুকটাক লেখালেখি করতে বেশ ভালোবাসি। এছাড়া রান্না, গান করা, বই পড়া ও সিনেমা দেখা, ছবি তুলতে ও নিজের বন্ধু ও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে আমার অনেক ভালো লাগে। ঘোরাঘুরি করা আমার অন্যতম প্রিয় একটি কাজ, যখনই সময় পাই আমি বেরিয়ে যাই অজানার উদ্দেশ্যে। আমি বিশ্বাস করি যে পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি, তাই কোন কাজ করলে সেখানে নিজের শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করি। নিজের এই এতো রকম শখ ও আমার অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগাভগি করতেই আমার স্টিমিট যাত্রা।

---

VOTE @bangla.witness as witness



OR

SET @rme as your proxy

---

JOIN WITH US ON OUR DISCORD SERVER

---

Follow @amarbanglablog for latest updates

১০% বেনেফিশিয়ারিজ লাজুক-খ্যাঁক এর জন্য

---

যদি আপনাদের আমার পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন।

---

ধন্যবাদ

---