ইতিহাসের সেই ট্রয় নগরী ও ট্রোজান হর্সের প্রতারণা (১০ ভাগ 🦊🦊🦊)
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করি। আজ আমি আপনাদের সাথে একটি প্রেমের ধ্বংসলীলা নিয়ে আলোচনা করব। আমরা সব সময় শুনে থাকি যে প্রেমের জন্য, নারীর জন্য পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে, যত ধ্বংসলীলা হয়েছে। প্রেমের কারনে পৃথিবীতে বারবার ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এমন টা শুনে থাকি। সেই সাথে প্রেমের কিছু অমর কাহিনী আমরা উদাহরণ হিসেবে টানি যেমন - শিরি -ফরহাদ, ইউসুফ জুলেখা, রোমিও জুলিয়েট থেকে শুরু করে অনেক প্রেমের কথা আমরা জানি যদিও অনেকেই এগুলো উপকথা হিসাবেই জানে। ইংরেজ রাজা প্রেমের জন্য তার গদি ছেড়ে দিয়েছে সেটাও জানি। কিন্তু এর বিপরীতে প্রেমকে নিয়ে অনেক যুদ্ধবিগ্রহ লেগেছে, নারীকে কেন্দ্র করে এই জন্য আমরা কথায় কথায় বলি নারী হচ্ছে সকল নষ্টের মূল। নারীর কারণ এই পৃথিবীতে অনেক অনেক যুদ্ধ লেগেছে যার মধ্যে একটি অন্যতম যুদ্ধ স্পার্টা আর ট্রয় যুদ্ধ আমরা সবাই জানি । আমরা সবাই ট্রয় নগরীর কথা শুনেছি আমাদের এইচএসসি বইতে সেই অস্ত্র কবিতায় ট্রয় নগরী কথা উল্লেখ আছে। বইতে ট্রয় নগরী তুরস্কে কথা বলা আছে। সেই ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছে মূলত প্রেমের কারনে এটি মূলত একটি গ্রীক মিথলজি বা পৌরাণিক কাহিনী। আপনাদের মাঝে অনেকেই ট্রয় মুভিটা দেখেছেন আমি নিজেও ট্রয় মুভি দেখেছি কয়েকবার।
দুই দিন আগে আমি আমার কাজিনের বাসা থেকে যখন হলে ফিরছিলাম বাসে বসে থাকা অবস্থা আপনাদের সাথে কথা বলতেছিলাম। তারপরে যখন শাহবাগ থেকে হলে আসছিলাম তখন শাহবাগের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম সেখানে একটি পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র আছে অর্থাৎ এখানে বিভিন্ন ধরনের বই পাওয়া যায়। পাঠক সমাবেশ এর নাম আপনারা অবশ্যই শুনেছেন যারা বইমেলা আসেন বা বই পড়েন। তো এই পাঠক সমাবেশ গেটে একটি কাঠের তৈরি ঘোড়া আছে। এই ঘোড়ার হয়তো অনেকেই দেখেছেন কিন্তু এই ঘোড়া পিছনে একটি নিষ্টুর ইতিহাস আছে তা খুব লোকই জানে।এই ঘোড়ার অপর নাম ট্রোজান হর্স। এই ট্রোজান হর্স ট্রয় যুদ্ধে ব্যবহার হতে দেখি।তাই আমার মনে হল এটি নিয়ে আজ আপনাদের সাথে লেখালেখি করা যাক আসলে ট্রোজান হর্স এর পিছনের ইতিহাসটা কী।তবে চলুন জেনে আসা যাক।
ট্রয় নগরী ধ্বংস বা পরাজয় প্রধান কারণ ছিল এই ট্রোজান হর্স। আমরা অনেকেই হেলেনের নাম শুনেছি। হেলেন ছিল মূলত স্পার্টার রাজার স্ত্রী। সেই সময় মাঝে মাঝেই ট্রয় এবং স্পাটারদের মাঝে যুদ্ধ লেগে থাকত। ট্রয় রাজপুত্র প্যারিস স্পার্টার রাজার স্ত্রী হেলেন নিয়ে পালিয়ে আসে ।যুদ্ধ শুরু হয় মূলত হেলেন কে নিয়েই। ইতিহাস ঘাঁটলে এই হেলেনের কথা আপনারা অনেক শুনতে পাবেন। হেলেন কে কেন্দ্র করে ভালোবাসা, জিঘাংসা ,সৃষ্টি ও ধ্বংস সবকিছু হয়ে থাকে। কিন্তু তখন দেখা যায় প্যারিস যখন হেলেনকে নিয়ে পালিয়ে আসে তখন স্পার্টার রাজা ১০০০ যুদ্ধজাহাজ পাঠায় হেলেনকে রক্ষার জন্য। আর সেই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন একিলিস নামের এক বীর যোদ্ধা। এইভাবে দুই পক্ষের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং এই যুদ্ধে অ্যাকিলিসের ভাই ইউরেনাস মারা যায় তবে এটি মূলত ভুল বোঝাবুঝিতে হয়। ইউরেনাস তার ভাই অ্যাকিলিসের পোশাক পরিধান করে যুদ্ধে আসে অন্যদিকে ট্রয়বীর হেক্টর মনে করে সেই অ্যাকিলিস তাই তাকে আক্রমণ করে। আর সেই আক্রমণে ইউরেনাস মারা যায়। এ খবর শুনে একিলিস ক্ষুব্দ হয়ে ট্রয় নগরী ধ্বংস করার জন্য ব্রত নেন। পরবর্তীতে গ্রীকরা ট্রয় জয় করলেও তারা এই জয়ের মধ্যে এক প্রতারণার আশ্রয় নেয়। আর সেই প্রতারণা মূলত ট্রোজান হর্স এর মাধ্যমে। ইতিহাসে এক জঘন্যতম প্রতারণার কথা বলা হয় এই ট্রোজান হর্স এর মাধ্যমে জয়কে।
গ্রীকরা অনেক চেষ্টা করেও ট্রয় নগরীর ভেতরে ঢুকতে পারে না কারণ ট্রয় নগরী ছিল চতুরপাশ দিয়ে এতটাই সুরক্ষিত দেয়ালে ঘেরা। পরে টিকতে না পেরে গ্রীকরা পালিয়ে গেছে এটা বুঝানো হয় । তারা যেখানে অবস্থান করছিল সেখানে সবকিছু পুড়িয়ে চলে যায়। কিন্তু আসলে তার এখানেই প্রতারণার আশ্রয় নেয় । সেখানে তারা একটি বিশাল ট্রোজান হর্স বা কাঠের তৈরি বিশাল এক ঘোড়া রেখে যায় উপহার হিসেবে। গ্রীকরা পাহাড়ের অন্য এক পাশে গিয়ে অবস্থান নেয়। গ্রীকরা মূলত চাচ্ছিল যে কোনভাবেই হোক তাদের ট্রয় নগরীর ভেতরে প্রবেশ করতে হবে ।তাই তারা ট্রোজান হর্স এর মধ্যে অ্যাকিলিস সহ কয়েকজন বীরযোদ্ধাদের প্রবেশ করিয়ে রাখে। আর এই দিকে ট্রয়ের রাজারা যখন উপহারস্বরূপ ঘোড়াকে ভেতরে নিয়ে যাবে তখন রাত্রিবেলায় সেখান থেকে তারা বের হয়ে মূল ফটক খুলে দেবে এই ছিল তাদের পরিকল্পনা। গ্রিকদের এর প্রতারণা মূলত কাজে দেয় । ট্রয় রাজা এই কাঠের তৈরি ঘোড়াকে উপহার ভেবে দুর্গার ভেতরে নিয়ে যায় এবং বিজয়ের আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে পুরো ট্রয় নগরী। তখনো তারা কল্পনাও করছিলো না যে একটু পরেই তাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে ধ্বংসলীলা । ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাবে ট্রয় নগরী। ট্রয় নগরীর সবাই যখন আনন্দ উল্লাস করে রাত্রিবেলা ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চিন্তে ঠিক তখনই ঘোড়ার ভেতর থেকে একে একে সৈন্য বের হয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং মূল ফটক খুলে দেয়। এদিকে আগে থেকেই দুর্গের কাছে জড়ো হয়ে থাকা গ্রিক সেনারা বিদ্যুতের গতিতে দুর্গা ভেতরে প্রবেশ করে হত্যাযজ্ঞ চালানো শুরু করে কিন্তু ট্রয়বাসীরা যখন বুঝতে পারে যে দুর্গ আক্রমণ হয়ে গেছে তখন তাদের কিছু করার থাকেনা। এই যুদ্ধে ট্রয় নগরী পরাজয় বরণ করে নির্বিচারে নারী,শিশু সবাইকে হত্যা করা হয়। মূলত ট্রয় নগরী ছিল ইতিহাসে সবথেকে সমৃদ্ধ সাজানো-গোছানো একটি শহর। ট্রয় নগরী ধ্বংসের পেছনে হেলেন কে মূলত দায়ী করা হয়।
আপনাদের জ্ঞাতার্থে একটি তথ্য। আমরা সবাই Achilles hills নামে একটা প্রবাদ পড়েছি যার বাংলা অর্থ দুর্বলতা। আসলে এই যুদ্ধে স্পার্টার বীর একিলিস এর পায়ের গোড়ালিতে তীর বিদ্ধ হয় এবং সে দূর্বল হয়ে পড়ে, পরে সে মারা যায়।আর এখান থেকেই Achilles hills (দূর্বলতা) প্রবাদ এসেছে।
ধন্যবাদ সবাইকে
এই ট্রোজান হর্স নিয়ে চমৎকার লিখেছেন 👌
আর পুরো গল্পটা চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন ।
আসলে মুভিটি আমি দেখেছি যেখানে চমৎকারভাবে সবকিছু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আপনার লিখনী এবং উপস্থাপনা সুন্দর ছিল।
দোয়া রইল 🥀
আপনার প্রশংসা পেলে লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ হই ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এক সময়ের সেরা সুন্দরী ছিল হেলেন। যার কারণে ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়। ইংরেজি সাহিত্যে আমি এব্যাপারে পড়ালেখা করেছি। আজ আপনি ট্রয় নগরী ধ্বংসের সম্পর্কে অনেক কিছু উল্লেখ করেছেন। তবে এই মুভিটা আমি এখনো দেখিনি। আপনার পোস্ট দেখে এই মুভিটা দেখার আগ্রহ বেড়ে গেল।
আপনি ঠিক বলেছেন এটি মূলত ইংরেজি সাহিত্যের এক মিথলজি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সুন্দর লেখনি,আসলে মাঝে এরকম লেখা পড়া দরকার।অনেক কিছুই জানা যায়।আর আপনার উপস্থাপনা আর ভাষা শৈলী খুব সুন্দর ছিল।আর মুভি টা এখনো দেখা হয়,তবে দেখা উচিত বলে মনে হচ্ছে।
আর আসলেই নারী হইতেই সব বিপত্তি ঘটে এটা কিন্তু ঠিক😁
আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাই প্রতিটি যুদ্ধের পিছনেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নারীর জড়িত থাকে ।যেমনটি আপনি ট্রয় নগরী যুদ্ধের পিছনে স্পার্টার রাজার স্ত্রী হেলেন কে দায়ী করেছেন। হেলেনে ছিল এই যুদ্ধের প্রধান কারণ। খুব ভালো লাগলো আপনার ব্লগ টি পড়ে ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার ব্লগ পড়ে আপনার ভাল লেগেছে শুনে খুশি হলাম।
শিক্ষা জীবনের কোন এক পর্যায়ে গল্পটা পড়েছিলাম। তবে পরিষ্কার মনে পড়ছে না ঠিক কখন পড়েছিলাম। তবে আপনার পোস্টটা পড়ে সেই গল্পটা আবার মনে পড়ে গেলো। মানুষ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর কৌশলী হলে যেকোনো কিছুই লাভ করতে পারে। এই ঘটনা থেকে এই শিক্ষাই পেয়েছি। যদিও ট্রোজান হর্সের ব্যাপারটিকে প্রতারণা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর পর থেকে এই ব্যাপারটিকে সমরবিদরা যুদ্ধ জয়ের কৌশল হিসেবে অনেকবার ব্যবহার করেছে। চমৎকার লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন দেখে।আসলেই এখন যুদ্ধে যে যত কৌশলী হতে পারে সেই জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় ।
একটা কথা কী কমিউনিটির এতো সব পোস্ট থাকলেও আমার এইরকম ইতিহাস বিষয়ক পোস্ট পড়তে বেশ ভালো লাগে। আপনার লেখা অনেক আগে থেকেই পড়ি। দারুণ লিখেন আপনি বলা যায়। ট্রয় নগরীর এই ইতিহাস জানতাম তবে সামান্য। কিন্তু আপনার পোস্ট টা সত্যি অনেক তথ্য বহুল ছিল। এবং দারুণ আলোচনা করেছেন।
আপনার এইসব পোস্ট করতে ভালো লাগে লাগে শুনে খুবই খুশি হলাম শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ট্রয় নগরী সম্পর্কে বেশ তথ্যবহুল লেখা লিখেছেন। ইতিহাসের এই বিসয় গুলো পড়তে অনেক ভাল লাগে। আপনার লেখার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপু
আমি শুধু চেষ্টা করেছি ভাইয়া। শুভকামনা রইল।
ইতিহাসের সেই ট্রয় নগরী ও ট্রোজান হর্সের প্রতারণাআমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। খুবই সৃজনশীলভাবে বর্ণনা করেছেন এই কাহিনী। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ শুভকামনা রইল।
ট্রয় নগরী ও ট্রেজান হর্স সম্বন্ধে চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
কিছুদিন আগে টেলিগ্রাম গ্রুপে দাদা ট্রয় নগরী নিয়ে একটি কুইজ দিয়েছিলেন। তারপরই ট্রয় নগরী ও এ যুদ্ধ সম্বন্ধে কিছু ধারণা নিয়েছিলাম গুগল থেকে।
এই মুভিটি দেখার ইচ্ছা আছে। আপনার লেখনি অনেক সুন্দর ছিলো। ধন্যবাদ আপু।
এই কুইজের সময় আমি ছিলাম না থাকলে হয়ত ভালো হত। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।