আমাদের গোড়ায় গলদ (১০%🦊🦊🦊)
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমাদের জীবনের সবথেকে অবিচ্ছেদ্য অংশ যার জন্য আমাদের পুরোটা সময় ব্যস্ত থাকি, যার পেছনে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেই সে বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। অর্থাৎ আমি জীবনের লক্ষ্য নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে এসেছি আজ।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে আবার কেউ কেউ সামনে অনেক কয়েকটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলে। কিন্তু সবকিছুর পরেও আমাদের সবার জীবনে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের পেছনে আমরা সব সময় ছুটে চলি। জীবনের প্রথম ধাপেই আমাদের লক্ষ্য ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে লক্ষ্য ঠিক করতে গিয়ে আমাদের মাঝে অধিকাংশ মানুষই খুবই ভুল করে। সে ভুলের বাহিরে আমিও না। আর কিছু সংখ্যক মানুষ আছে যারা অনেক সময় নেয় নিজের লক্ষ্য ঠিক করতেই অর্থাৎ তারা জীবনের একটি মূল্যবান সময় লক্ষ্য ঠিক করতে নষ্ট করে। লক্ষ্য ঠিক করতে গিয়ে আমরা সব সময় দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। আমাদের মাঝে সবথেকে যে প্রবণতা দেখা যায় তা হচ্ছে অধিকাংশ মানুষজন যে লক্ষ্য নির্ধারণ করে আমরাও সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পছন্দ করি। ধরা যাক আপনার আশেপাশের সবাই বিসিএসে দিকে ঝুঁকছে তার মানে আপনার আমারও বিসিএস দিতে হবে। আপনি যেখানে থাকেন আপনার আশেপাশের সবাই ডাক্তারি পড়ে তার মানে আপনার বাবা-মা ধরে নেবে আপনাকেও ডাক্তারি পড়তে হবে। অর্থাৎ আমরা সব সময় অন্যের লক্ষ্যকে নিজের লক্ষ্য মনে করি। নিজের ভেতর থেকে যদি কখনও লক্ষ্য না আসে তাহলে একটা সময়ে এসে আমাদের আফসোস করতে হবে কারণ অন্যের ঠিক করা দেওয়া লক্ষ্য কখনো আমাদের সত্তিকারের লক্ষ্য হতে পারে না। আমাদের সবসময় ব্যতিক্রম হতে হবে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে হবে। যাতে সবাই আমাদের খুব সহজে চিন্তা পারে এবং আমাদের ভেতরে যেন একটা স্বতন্ত্র বোধ জেগে ওঠে। আমাদের মাঝে আর এক ধরনের প্রবণতা দেখা যায় যে অন্যের চোখে ভালো হওয়ার জন্য, বাবা মা আত্মীয় স্বজনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদের ভেতরে থাকা সুপ্ত লক্ষ্য সেখানেই নষ্ট করে ফেলি। ধরুন আমাদের মাঝে অনেকে আছে যাদের ছোটবেলা থেকে কবিতা লেখার অভ্যাস সে দারুন কবিতা লেখে। তার ধ্যানে -জ্ঞানে শুধুই কবিতা কিন্তু সে কখনোই কবি হতে পারবে না। কেননা সমাজ বাস্তবতা তাকে কবি হতে দেবে না। সমাজের জন্য পরিবারের জন্য তাকে তার সব থেকে ভালো লাগার বিষয়টি কি ত্যাগ করতে হবে।
আমাদের মাঝে আর একটি প্রবণতা সবথেকে বেশি দেখা যায় সন্তান জন্ম নেওয়ার ১ মাসের মধ্যেই আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছে আবার সন্তান ভূমিষ্ঠ না হতেই আমাদের সন্তান কি হবে? ডাক্তার হবে নাকি ব্যারিস্টার। বিসিএস ক্যাডার হবে হবে নাকি ইঞ্জিনিয়ার । একবার ভাবুন আমরা কোন পর্যায়ে চলে গেছি যে সন্তান কথায় বলা শেখেনি, যে নিজের ভাব প্রকাশ করতে শেখেনি অথচ তার ভাগ্য আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি। তার লক্ষ্য আমরা ঠিক করে দিয়েছি। তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা মতামতের কোনো তারতম্য আমরা করি না। শুধুমাত্র নিজেদের স্যাটিসফ্যাকশন এর জন্য অন্যকে বড় গলায় বলার জন্য যে আমার ছেলে ডাক্তার, আমার মেয়ে বিসিএস ক্যাডার এইসব। দিনশেষে পরিবারের শান্তির জন্য, তাদের মুখ রক্ষা করার জন্য আমাদের নিজের ভেতরে থাকা সত্য সুন্দর লক্ষ্যগুলোকে মেরে ফেলতে হয়। ইচ্ছার বাহিরে গিয়ে অন্যের বেধে দেওয়া স্বপ্ন পূরণ করতে হয়। তবে আপনি যদি ভীষণ জেদি হন, ভীষণ একগুঁয়ে হন তাহলে আপনাকে আপনার ভেতরে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে হবে। আপনার লক্ষ্য কে ঠিক রাখতে হবে যত বাধাই আসুক কখনোই সে পথ থেকে দূরে সরে যাওয়া যাবেনা।
তাই আমি বলবো আমাদের আত্বকে চিনতে হবে। নিজের ভেতরে থাকা শত প্রশ্ন কে জাগ্রত করতে হবে। যে আসলে আমি কি চাই??কোন কাজটা আমি করতে না পারলে আমার জীবনটা বৃথা হয়ে যাবে? আমার জীবনের অপূর্ণতা কি? আমার লক্ষ্য অর্জন করতে আমার কি কি অর্জন করতে হবে।। সব বিষয়গুলোকে যখন আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখতে পারবো নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেব। তখনই আমরা আমাদের সঠিক লক্ষ্যে পৌছাতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।নিজের স্বপ্নকে জাগ্রত করতে হবে। জাগ্রত করতে হবে নিজের আত্মাকে।
ধন্যবাদ সবাইকে
হ্যাঁ সবই ঠিক বলেছেন আমাদের গোড়ায় গলদ। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই নির্ধারণ করে ছেলে সন্তান ডাক্তার হবে। ইঞ্জিনিয়ার কেউবা পুলিশ অফিসার কেউবা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত প্রতিযোগিকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাচ্ছে, তার আগ্রহ আছে কিনা সে পারবে কিনা তা দেখার সময় নেই। সত্যি বলতে অসাধারন একটি শিক্ষনীয় পোস্ট আমাদের উপহার দেয়ার জন্য আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
আমার লেখা পোষ্ট এত সুন্দর ভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।
লেখাটার বিষয়বস্তু অত্যন্ত চমৎকার। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা টাই ত্রুটিপূর্ণ। তবে একথা সত্য একটা লক্ষ্য স্থির করে নিয়ে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারলে আমাদের জীবনটা অনেক সুন্দর হবে। কিন্তু সমস্যাটা তখনই হয় যখন মাঝপথে গিয়ে হাল ছেড়ে দেই। আর এখনকার মা-বাবারা সন্তানের ওপর তাদের ইচ্ছে গুলো জোর করে চাপিয়ে দেয়। একজন ভালো এবং আদর্শ মানুষ হতে হবে এই কথাটা কোন সন্তানকে হয়তো সহজে বোঝানো হয় না। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই আমাদের অবক্ষয় শুরু। অনেক ভালো কিছু বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
আমার পোস্ট আপনি খুব সুন্দর ভাবে পড়েছেন দেখে খুব ভালো লাগলো ।এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।