কালো বিড়ালের অভিশাপ ???
image
আপনি কি কালো জাদুতে বিশ্বাস করেন? ফুটবলের উপর কালো জাদুর প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে হয়? যদি এসব শুনে আপনি হেসে উড়িয়ে দেন, তবে এই লেখাটা আপনার জন্য, পড়ে দেখুন কিভাবে কালো জাদুর প্রভাবে একটা ক্লাব রীতিমতো বিলুপ্ত হতে বসেছিল।
ঘটনা টা আর্জেন্টিনার। ১৯৬৪ সাল, আর্জেন্টাইন ক্লাব রেসিং ক্লাব তখন তাদের ইতিহাসে সেরা সময় পার করছে। আর্জেন্টাইন লীগ জিতে তারা কোয়ালিফাই করে দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়নস লিগ খ্যাত কোপা লিবার্তোদোরেস এ। এবং সেই টুর্নামেন্টও জয় লাভ করে তারা। তারা ছিল প্রথম আর্জেন্টাইন ক্লাব যারা কোপা লিবার্তোদোরেস জিতে। এবং এর ফলে তারা কোয়ালিফাই করে ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপে ( ততকালীন কন্টিনেন্টাল কাপ)। কিন্তু সেখানে ফাইনালে ইন্টার মিলানের কাছে ২-১ এ হারে। ১৯৬৫ সালে তারা আবার আর্জেন্টাইন লীগ, কোপা লিবার্তোদোরেস জিতে কন্টিনেন্টাল কাপে জায়গা করে নেয় এবং আবারও ইন্টার মিলানের কাছেই পরাজিত হয়।
image
কিন্তু হাল ছাড়ে না তারা, ১৯৬৭ সালে আসে তাদের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এবারও তারা একইভাবে কোয়ালিফাই করে এবং এবার কন্টিনেন্টাল কাপে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল সেল্টিক। কিন্তু এবার আর তারা হারে না, ২টি লেগের পর প্লেঅফে তারা সেল্টিককে হারিয়ে প্রথম আর্জেন্টাইন ক্লাব হিসেবে কন্টিনেন্টাল কাপ জিতে। এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন, এই রকম ফর্মে থাকা, এই রকম বড় মাপের ক্লাব কি হঠাৎ করেই পতন হতে পারে?বেশিরভাগ ই বলবেন না, তারা এভাবে হারিয়ে যেতে পারে না, কিন্তু ভুল, তারা এক চরম রোষের মধ্যে পড়ে। কিভাবে? আসুন জানি
তখনকার সময়ে যখন রেসিং ক্লাব এই রকম সুসময় পার করছিল, বিশ্বব্যাপী তাদের সুনাম গাওয়া হচ্ছিল, সেটা অন্যরা সহ্য করলেও একটা ক্লাবের জন্য ছিল তা অসহ্য, তারা হল ইন্ডিপেন্ডিয়েন্তে। রেসিং ক্লাবের সবচেয়ে বড় রাইভাল। রেসিং ক্লাবের স্টেডিয়াম থেকে মাত্র ২৯০ মিটার দূরেই ইন্ডিপেন্ডিয়েন্তের স্টেডিয়াম। তবে তাদের রাইভালরি শুরু হয় ১৯১৫ সালে, একটা লীগ ম্যাচে, ইন্ডিপেন্ডিয়েন্তে ২-১ গোলে জিতলেও রেফারির ভুলে তাদের ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায় এবং সাথে সাথে লীগও, এবং তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রেসিং ক্লাব,,যারা এই সুবিধা পুরোপুরি উপভোগ করে৷ সেই থেকেই তাদের মধ্যে অত্যন্ত বিপদজনক রাইভালরির সূচনা। তো রেসিং ক্লাবের এমন সুখ কি তাদের সহ্য হবে? মোটেই না তাই তারা রেসিং এর উপর অভিশাপ আনতে ৭ টি মরা কালো বিড়ালের লাশ রেসিং ক্লাবের স্টেডিয়ামে গোল পোস্টের নিচে পুতে দেয়। উল্লেখ্য, কালো বিড়ালকে অনেক দেশেই অভিশাপ বা অলক্ষুণে হিসেবে দেখা হয়। এখন হয়তো আপনারা ভাবতে পারেন এসব করলেই কি আসে যায়? তাহলে শুনুন, এর ঠিক পরের ম্যাচ ছিল রেসিং এর মাঠে ইন্ডিপেন্ডিয়েন্তের সাথে, যেই মাঠে অনেক দিন ধরেই জিততে পারছিল না তারা, কিন্তি এই বিড়ালের লাশ পুতার পরের ম্যাচেই তারা ০-৪ গোলে হারায় রেসিং ক্লাবকে। কি এখনো বলবেন যে কাকতালীয় ঘটনা, এটার সাথে কোন সম্পর্ক নেই? তাহলে শুনুন ওই সিজন তারা ৩য় হয় লীগে, এর ল
পরের সিজনও ৩য়, এভাবে তাদের ফলাফল খারাপ হতেই থাকে, ১৯৭৬ এ তো কোনমতেই রেলিগেশন ঠেকায় তারা। তখনই প্রথমবার তারা ভাবতে শুরু করে যে আসলেই তারা অভিশপ্ত কিনা?
এরপর ১৯৮০ সাল। রেসিং এর দায়িত্ব নেন হুয়ান কার্লোস লরেঞ্জো, যে কিছুটা অন্ধবিশ্বাস করত, তো তিনি বেশ জোরেশোরেই ক্লাব মালিক কে বললেন এসবের পিছনে অভিশাপ আছে, তাই ক্লাবকে দিয়ে স্টেডিয়াম খুড়তে বললেন, এবং খুড়ে দেখা গেলো তার কথাই ঠিক, সেখানে তারা ৬ টি মরা বিড়ালের কংকাল পায়,তাই তারা ৬ টি ব্যান্ডের লাশ পুতে দেয় ( দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অঞ্চলে ব্যাঙকে সৌভাগ্যের প্রতীক মানা হয়) কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হয় নি, ১৯৮৩ সালে তারা আর্জেন্টাইন প্রিমিয়ার লিগ থেকে রেলিগেটেড হয়ে যায়। কারণ হয়তো আপনারা বুঝতে পারছেন, একটা বিড়াল এখনো রয়ে গেসে সেখানে। সেটা তারা বুঝতে পারে না। ফলে ক্লাবের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতেই থাকে। ১৯৯৮ সালে যখন তারা আর সহ্য করতে পারছিল না তখন পুরো শহরের লোকেরা স্থানীয় এক চার্চের থেকে হাতে মশাল নিয়ে স্টেডিয়ামে যায় মার্চ করতে করতে, অভিশাপ দূর করার জন্য। কিন্তু বিধিবাম লাভ তো হয় ই না, উল্টো ১৯৯৯ সালে ক্লাব দেউলিয়া হয়ে যায়।
২০০০ এর শেষ দিকে ক্লাবের দায়িত্ব নেন রেনাল্ডো মেরলো। সে দাবি করে ৬ টি বিড়ালই সব না, ওখানে আরো কিছু আছে, সেটা বের না করা পর্যন্ত আমাদের ক্লাব অভিশাপ মুক্ত হবে না। ততদিনে ক্লাবও বিশ্বাস করতে শুরু করে। তাই বিশাল অংকের টাকা খরচ করে পুরো স্টেডিয়াম খোড়া হয়। এমনকি কনক্রিটও বাদ যায় না। তার পরে ২০০১ সালে অবশেষে পাওয়া যায় সেই আরেকটা বিড়ালের কংকাল। এবার আপনারা হয়তো ভাবছেন বিড়াল পেলেইকি হলো, এতো বাজে অবস্থার একটা ক্লাবের ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। কিন্তু এখানেই সবচেয়ে বড় চমক।২০০১ সালেই তারা লীগে প্রোমোশন পায় এবং শুধু তাই না তারা সেবার ৫ম হয় লীগে। এবং সেই বছর আর্জেন্টাইন কাপে ফাইনাল ডে পর্যন্ত ফাইট চলে, শেষ ম্যাচে যাবার আগে তারা রিভার প্লেটের থেকে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে ছিল, তাই ড্র বা জিতলেই কাপ তাদের। এই সমীকরণ মাথায় রেখে নামে তারা, এর আগেই রিভার প্লেট তাদেফ শেষ ম্যাচে ৬-০ গোলে জয় পায়, তাই রেসিং এর উপর প্রেসার ছিল বেশি, এবং তারা আগে গোলও খায়, সবাই ভাবছিল অভিশাপ কি তাহলে কাটে নি? কিন্তু না শেষ দিকে দুর্দান্ত খেলায় তারা ২-১ গোলে জয় নিয়ে ৩৪ বছরের ট্রফি খরা কাটায়, এবং এটা বিড়াল পাওয়ার বছরই, যারা গত ৩৪ বছর কোন কিচ্ছু জিতে নি তারাই লীগে ৫ম এবং কাপও জিতল। এখনো বলবেন কাকতালীয়? তাহলে শুনুন তার পরের বছর তারা ৩য় হয়, এভাবে তাদের ফলাফল আবার আগের দিকে যেতে থাকে। ইন ফ্যাক্ট এর পরে তারা রেলিগেশন দূরে থাক, লীগে ১০ এর নিচেই যায় নি বর্তমান সিজন পর্যন্ত।
বাকিটা আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন কাকতালীয় নাকি কালো জাদুর প্রভাব?
Great post bro