বিদেশ বিভ্রান্তি [পার্ট ৩]
এয়ারপোর্টে বসে আছি দীর্ঘক্ষন, অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না৷ প্রচুর চিন্তা হচ্ছে পরিবার এবং দেশে রেখে যাওয়া সঙ্গের সাথীদের জন্য। বিশেষ করে ছোট মেয়েটার কথা ভীষন মনে পড়ছে৷ মাঠে ঘাটে কাজ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন বাসায় ফিরতাম তখন ছোট মেয়েটা দৌড়ে এসে কোলে উঠে বলতো আব্বা কি আনছো আমার লাইগা...?
যখনি কোমড়ের গোছায় কিনে রাখা তার জন্য অল্প কিছু মিঠায় বের করে তার হাতে দিতাম, সে প্রচন্ড মায়াবী হয়ে উঠতো। আমার কপালে এবং গালে চুমা দিতো। কাছে পেলেই আব্বা আব্বা বলে ডাকতো, কি যে মধুর লাগতো তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
মনে পড়ছে প্রিয় সহধর্মিণীর কথা, ক্লান্ত শরীরের ঘর্মাক্ত দেহ মুছতে গামছা কিংবা তোয়ালে এগিয়ে দিতেন যিনি, সেই স্ত্রী এবং মেয়েটাকে ছেড়ে এসেছি বহুদূরে, বহুদিনের জন্য।
মমতাময়ী মায়ের নিকট হতে শেষবারে যখন বিদায় নিচ্ছিলাম তখন মা হাউমাউ করে কাঁদছিল। আমাকে আটকানোর সাধ থাকলেও সাধ্য ছিলো তার৷ আমি সবার মায়া কাটিয়ে বিদায় নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়েছিলাম৷ আমি বিদেশি টাকা কামানোর নেশায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম, আমাকে আটকানোর সাধ্য কার ছিলো...?
অনেক বছর তাদের সাথে দেখা হবে না ভাবতেই চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে, প্রচন্ড চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, আমি পুরুষ মানুষ, সেটাও পারছি না। ফ্লাইটের অপেক্ষায় বসে থেকে নানানও দৃশ্য ভাসছে চোখের সামনে। এভাবেই কেটে গেলো একটি রাতের পুরো সময়টুকুই।
অপেক্ষার প্রহর আপাতত কেটে গেলো, কিছুক্ষণ পরই ফ্লাইট৷ সব জল্পনা কল্পনা শেষ, এবার শুধু নামা বাকি। অপেক্ষা শেষে যখন বিমানে উঠলাম তখন আদম ব্যবসায়ীর কথাগুলো কানে ভাসছিলো। কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল তার আওড়ানো বুলিগুলো হয়তো ফলতে শুরু করেছে৷ বহু পথ পাড়ি দিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিদেশের মাটিতে নামলাম।
আদম ব্যবসায়ীর কথামতো আমাকে যেভাবে রিসিভ করার কথা ছিলো তার বিন্দুমাত্র আনুষ্ঠানিকতাও আমার ক্ষেত্রে দেখতে পেলাম না৷ এতটুকু বুঝতে পারছি আমি হাতবদল হচ্ছি৷ আমাকে সহ আরও কয়েকজনকে একটি মাইক্রোতে উঠিয়ে একটি স্থানে নামিয়ে দিয়ে বলা হলো কেউ একজন এসে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিবে। কে আসবে আমরা কেউ জানিনা৷ আবারো অপেক্ষা.......!
একটি দিন পুরোই কেটে গেলো, কেউ আসলো না আমাদের রিসিভ করতে৷ আমি ও আমরা হতাশ, আদম ব্যবসায়ীর আওড়ানো বুলির সমাপ্তি বুঝি এখান থেকেই শুরু হলো৷ নতুন জায়গায় কোনো কিছুই চিনিনা আমরা। কি করবো, কোথায় যাবো ভেবেই কুল পাচ্ছিলাম না। এমতাবস্থায় এক প্রবীণ বাংলাদেশি প্রবাসীর সাথে দেখা। তিনি এ যাত্রায় আমাদের থাকার জায়গা করে দিলেন৷
[আগের পোস্টেও বলেছিলাম, সব কথা এক পোস্টে লিখতে গেলে গল্পটি বড় হয়ে যাবে। যা পাঠকের মনে বিরক্তির ছাপ লেগে দিতে পারে, এজন্য গল্পটি আমি কয়েকটি খন্ডে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করেছি। আপনারা যারা "বিদেশ বিভ্রান্তি পার্ট ১ এবং ২" মিস করে ফেলেছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি নিচে দেয়া লিংকে ক্লিক করার জন্য]
নিজের প্রিয়জনদেরকে ভালো রাখার জন্যই মানুষরা কষ্ট করে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমায়। শুধুমাত্র তাদের মাথায় একটাই চিন্তা থাকে পরিবার যেন ভালো থাকে।
আপনার সম্পূর্ণ পোস্ট পরে খুব ভালো লাগলো আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।