বিদেশ বিভ্রান্তি [পার্ট ২]
সব টাকা বুঝিয়ে দিয়ে কাছে রেখেছিলাম কিছু টাকা যেনো বিদেশের মাটিতে গিয়ে প্রয়োজনে খরচ করে খেতে পারি৷ সন্ধ্যার পর যখন কাজ শেষ হলো তখন অফিস থেকে অফিস খরচ হিসেবে দাবি করা হলো পাঁচ হাজার টাকা। আমার যা টাকা ছিলো তা ইতিমধ্যেই প্রায় শেষ। শুধু রাখা কিছু টাকা আছে তাও বুঝি থাকছে না। ওদের সব টাকাতো আগেই বুঝিয়ে দিয়েছি কিন্ত এখন আবার কিসের টাকা দিতে হবে, আমি মুর্খ মানুষ প্রশ্ন করারও সুযোগ পেলাম না।
যারা বিদেশ যায় তারা সবাই আমার মতোই কিছু সময়ের জন্য অমিতব্যয়ী হয়ে যায়। অজায়গায় টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করে না। আর তারাও সুযোগে সদ্ব্যবহার করতেই ব্যস্ত৷ তাদের হাইলি ডেকোরেটেড অফিসে বসে দেওয়া ছলিম বুঝে সবাই পরাস্ত হতে বাধ্য আর আমার মতো মূর্খ মানুষের কথা না হয় নাইবা বল্লাম৷ এর আগে তো আদম ব্যবসায়ীর বুলি শুনেই এই কাজে অগ্রসর হয়েছি।
আদম ব্যবসায়ীর কথা মতো এরকম ৫ ১০ হাজার টাকা কোনো ব্যাপারই না৷ একবার বিদেশের মাটি নামলেই খালি টাকাই কামাতে পারবো৷ তার আওড়ানো সেই বুলির কাছে সব নীতিবাক্যই ধোয়াশার ন্যায়। আমার বিদেশে যাওয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে চায় এমন লোকের বুঝ আমি মানতে চাইনা৷ আমাকে বিদেশে যেতেই হবে৷ যাইহোক, আজ আমার ফ্লাইট, পরিবারের সবার থেকে বিদায় নিয়েছি গত রাতেই৷ এবার শুধু আকাশে উড়াল দিবো.....
ক্লান্ত শরীর নিয়ে ১৩ ১৪ তলার উপর থেকে নীচে নামলাম। এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিতে হবে৷ এজন্য সিএনজি খোঁজা শুরু করলাম। পেয়েও গেলাম একটা তবে ভাড়া বেশি দাবী করলো, দর কষাকষি করে উঠে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরই গিয়ে এয়ারপোর্টে নামলাম। ওখানে গিয়ে কথা বলতেই আমাকে বলা হলো আপনার ফ্লাইটে আরো দেরি আছে, আনুমানিক ১২ ১৪ ঘন্টা।যে অফিস আমাকে বিদেশে পাঠাচ্ছে এই দ্বায়ভারতো তাদের।
তারা যদি ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়ে আমাকে এয়ারপোর্টে পাঠাতো তাহলে হয়তো আমাকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সারারাত এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে বসে কেটে দিতে হতো না। আমি মূর্খ মানুষ তাই হয়তো পদে পদে আমাকে হেনস্তার স্বীকার হতে হচ্ছে। যাইহোক, বিদেশের মাটিতে হয়তো একটু স্বস্তিতে নিশ্বাস নিতে পারবো আর তাতেই আমার সব ক্লান্তি উপশম হয়ে যাবে।
দুই রাতের ঘুম জাগা এজন্য শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত, এয়ারপোর্টে বসে ফ্লাইটের অপেক্ষায় থাকা এই আমি আদম ব্যবসায়ীর আওড়ানো বুলি মাফিক জেগেই স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম, ভালো কোম্পানির কাজ, এসি রুম, মাস শেষে অনেক টাকা বেতন, বিদেশি খাওয়া দাওয়া, আহ্৷ বছর পাঁচেকের মধ্যেই অনেক টাকার কারবার করে ফেলবো, আর মাত্র কিছু ঘন্টা তারপরই বিদেশের মাটিতে নেমে যাবো। তারপরই টাকা কামানো শুরু।
[আগের পোস্টেও বলেছিলাম, সব কথা এক পোস্টে লিখতে গেলে গল্পটি বড় হয়ে যাবে। যা পাঠকের মনে বিরক্তির ছাপ লেগে দিতে পারে, এজন্য গল্পটি আমি কয়েকটি খন্ডে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করেছি। আপনারা যারা "বিদেশ বিভ্রান্তি পার্ট ১"] মিস করে ফেলেছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি উপরে বা নিচে দেয়া লিংকে ক্লিক করার জন্য ]
মাঝেমধ্যে কিছু গল্প থেকেও শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব। ঠিক তেমনি একটি গল্পের কিছুটা অংশ আজ আপনার লেখার মাধ্যমে পরিদর্শন করার সুযোগ পেলাম। আপনি গল্পের মাধ্যমে শিক্ষনীয় একটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে একটি সার্থক গল্প সেটাই হয় যখন সেটার পরবর্তী অংশ পরিদর্শনের জন্য আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আপনার গল্পটি পড়েও আমার মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, আপনার গল্পের পরবর্তী অংশ পরিদর্শনের জন্য।
তবে আপনাকে অনুরোধ করব এভাবে অংশ করে যদি কোনো লেখা পরবর্তীতে লেখেন, চেষ্টা করবেন দুইটি পর্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে।
ধন্যবাদ আপনাকে আমার লেখাটি পড়ে সুন্দর একটি মতামত উপস্থাপন করার জন্য।
আমিও ঠিক সেটাই চেয়েছিলাম৷ কিন্তু আমার ভাবনার গল্পটি এক কিংবা দুই পোস্টে লিখতে গেলে ভীষণ বড় হয়ে যেতো। যার কারনে পাঠক বিরক্তি বোধ করতো আর আমি যে ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছি এই গল্পের মাধ্যমে, তা আড়ালেই থেকে যেতো৷ তাই আমি ইচ্ছা পোষণ করেছি এই গল্পটি কয়েকটি খন্ডে প্রকাশ করার।
প্রথম অবস্থায় যারা এই বিষয়গুলো না জেনে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখে। তাদের সাথে হয়তো বা এই ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। তবে যারা নিজেদের টাকা গুছিয়ে নেয়ার পর এ ধরনের মানুষগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়। তাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করা উচিত, সম্পূর্ণ বিষয়ে বুঝেশুনে তারপর কাজ করা, তারা কেন এভাবে একটা মানুষকে অযথা এত পরিমানে কষ্ট দেয়। আপনার পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন।
আসলে প্রতিটি মানুষ যখন বিদেশে যেতে চায়, তারা পরিবারের সঞ্চিত টাকা এবং সম্পদ সবকিছু আস্তে আস্তে শেষ করে বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। আপনার পোস্টটি পড়ে গল্প মনে হলো না। মনে হলো বাস্তব জীবনের কারো গল্প।
সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।