ব্যাপারটা চিন্তার না....?
src
সপ্তাহের দুটো দিন ভার্সিটিতে আমার ক্লাস থাকে, মানে শুক্র ও শনিবার । তা হয়তো আগের বিভিন্ন পোস্টে আপনাদের অবগত করার চেষ্টা করেছিলাম। যাইহোক, গতকাল শনিবারও আমার ক্লাস ছিলো৷ শুক্রবার ভীষণ ক্লান্তি নিয়ে ঘুমানোর পর দারুণ ঘুম হয়েছিলো ওই রাতে। প্রচন্ড ভালো ঘুম হওয়ায় পরদিন শনিবার খুব সকালেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।
বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে গেলাম৷ ফ্রেস হয়ে এসে দেখি প্রচুর পরিমাণে ধুলো জমে আছে রুমের মেঝেতে৷ এর ঢের কারণও আছে বটে। একটা জায়গায় অনেকটা সময় জুড়ে মানুষের চলাচল না থাকলে সেখানে ধুলোর আস্তরণ পড়াই স্বাভাবিক। আমি যে রুমে থাকি সেটা আবার রাস্তার ঠিক পাশেই। তাই রাস্তার ধূলো জানালার ফাঁক দিয়ে এসে রুমে প্রচন্ড ময়লার আবরণ সৃষ্টি করে৷ অনেকবার ভেবেছি রুমটা পরিবর্তন করবো। কিন্তু কেনো জানি ওই রুমের মায়া ছাড়তে পারছি না৷
একবার কোনো কিছুর প্রতি মায়া জন্মে গেলে সেটাকে ছেড়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে, হোক সেটা মানুষ কিংবা কোনো জড় পদার্থ। এজন্য হয়তো গুণীজনরা বলেন, এপৃথিবীর সবচেয়ে বড় খুনি হলো "মায়া"।
রুমটা পরিষ্কার করলাম খুব ভালোভাবে। সব কাজ শেষে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলাম। কারণ, কিছুসময় পরেই আবার ভার্সিটিতে যেতে হয়েছিলো। দুপুর সাড়ে বারোটার পর বের হয়ে হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে ভার্সিটিতে গিয়েছি। ক্লাস চলেছিলো সাড়ে চারটা পর্যন্ত। ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই বেড়িয়ে পড়েছিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাস স্ট্যান্ডে এসে দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। একটু পর বাস পেয়েছি কিন্তু বসার মতো সিট ছিলো না, কারণ ওটাই ছিলো রাজশাহী টু রংপুরের শেষ বাস। শেষ বেলায় সিট না পাওয়াই স্বাভাবিক।
মনে মনে ভাবছিলাম এত দূরের রাস্তা দাঁড়িয়ে যাবো ক্যামনে...? আবার এটাও ভাবনায় আসছে যে, এই বাস যদি মিস করি তাহলে আজ আর বাড়িতে যাওয়া হবে না। সাত পাঁচ না ভেবে উঠে পড়লাম। বাসে উঠে একটা বিষয় ভাবলাম, সেটা হলো বাসে দায়িত্বরত যারা থাকেন তারা সর্বদাই দাঁড়িয়ে পুরো যাত্রা শেষ করে। তাদের দিকে তাকিয়ে একটা বিষয় উপলব্ধি হলো, তারা যেহুতু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আমাদের প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, আমি না হয় একটা দিন দাঁড়িয়েই বাসাই যাই৷ কিছু রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকার পর বাসের সুপারভাইজার এসে বলল, সামনের সিটের যাত্রী নাকি একটু দূর গিয়েই নেমে যাবেন, ওনি নামার পর আমি যেন সেখানে বসি।
সত্যি বলতে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার একটুও খারাপ লাগছিলো না। একটা প্রবাদ আছে "আমি নিজেকে চিনেছি সহসা,আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাধ"। ঠিক তাই, আমি যখন বাসের দায়িত্বশীলরা নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে আমাদেরকে সেবা দেওয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করেছি তখনই আমার ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠেছিলো। আমি কিছু সময়ের জন্য নিজের আরাম আয়েশের ব্যাপারে খেয়াল হারিয়ে ফেলিছিলাম৷
আমরা বেশিরভাগ মানুষ বাস কিংবা অন্য কোনো যানবাহনে উঠে শুধু নিজেদের স্বার্থ হাসিলেই ব্যস্ত থাকি, বিন্দুমাত্র ওই মানুষগুলোর কথা ভাবিনা যারা নিজেদের ঘাম ঝরিয়ে আমাদের সেবা দিয়ে যান অবিরত৷ নিজেদের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে তাদেরকে অকর্থ ভাষায় গালি দিতেও দ্বিধাবোধ করি না। আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, তারাও মানুষ,তারাও কারো বাবা কিংবা ভাই৷
পরিবর্তন হোক আমাদের মানসিকতা। এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ভাই আপনার আজকের লিখনিটি পড়ে মন থেকে অনেক তৃপ্তি অনুভব করেছি। ভালো লাগলো লিখাটি পড়ে। আপনার লিখায় আপনি বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেছেন। মায়া সত্যি এমন একটি জিনিস যা আমরা সহজে ছাড়তে পারি না। মায়া খারাপ ভালো বোঝে না। হুট করেই হয়ে যায়।
আর বাসের কর্মচারীর প্রতি আপনার অনুভূতিগুলো শুনে ভালো লাগলো। শুভকামনা রইলো আপনার প্রতি। ভালো থাকবেন।
সত্যি কথা বলতে আপনি যে বিষয়টা নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন। এটা আমরা কখনো ভেবে দেখিনি। তবে আজকে আপনার চিন্তাভাবনা দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো। একদম ঠিক বলেছেন, তারা ঘন্টার পর ঘন্টা দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থেকে আমাদেরকে সেবা দিয়ে যায়। আমরা যদি তাদের জায়গায় নিজেদেরকে একটু দাঁড় করাই। তাহলে তাদের কষ্ট একটু হলেও অনুভব করতে পারব। ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।