আব্বা
গত তিন মাস যাবৎ আব্বা অসুস্থ। হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তিনি। কঠোর পরিশ্রমী এই মানুষটিকে আমি আমার জীবদ্দশায় কখনো অলস সময় কাটাতে দেখিনি। কিন্তু এখন তিনি আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না৷ একটুতেই হাঁপিয়ে ওঠেন৷ আব্বার শরীরটা প্রচন্ড দুর্বল। আব্বা যেদিন প্রথম এরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেদিন আমি কোনো একটি বিশেষ কাজ শেষ করে দিনাজপুর থেকে বাসায় ফিরছিলাম। কি যেন একটা প্রয়োজনে আব্বাকে কল করলাম,
আব্বা ফোন ধরে কথা বলতে পারছিলো না, খুব কষ্টে শুধু এতটুকুই বলেছিলেন, "ফোন রাখোতো, আমার ক্যান জানি বুক ব্যাথা করছে"।
আব্বাকে প্রশ্ন করলাম, কেনো এমন হচ্ছে...? ফিরতি উত্তর পেলাম না, আব্বা পরক্ষণেই ফোন কেটে দিয়েছিলেন সেদিন। আমি ব্যাপারটাকে আমলে নেইনি, ভেবেছিলাম গ্যাস্টিক জনিত ব্যাথা হবে হয়তো...!
কিন্তু যখন বাসায় আসলাম, শুনলাম আব্বাকে নাকি হসপিটালে নেয়া হয়েছে, তরিঘরি করে রওনা দিলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আব্বা বুকের ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, মায়ের চোখের কোণায় পানি গড়িয়ে পড়ছে। এমন দৃশ্য দেখার পর সন্তান হিসেবে নিজেকে দাঁড়িয়ে রাখতে পারছিলাম না, হাত-পা কাঁপছিলো।
আব্বাকে প্রথমে নাকি আমাদের এলাকার সরকারি হসপিটালে নেয়া হয়েছিল, অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত হসপিটালে রেফার করেছিলেন তারা। পরবর্তীতে যে ক্লিনিকে আব্বাকে ভর্তি করানো হয়েছিলো সেখানকার কর্তৃপক্ষ কয়েকটি টেস্ট করে আব্বার অবস্থা বেগতিক দেখে তারাও অন্য হসপিটালে ভর্তি করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আব্বাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরপর তিনবার আব্বাকে এই হসপিটালে ভর্তি করাতে হয়েছে৷
আব্বার অসুস্থতার প্রতিটি দিন প্রতিটি ক্ষণ আমাকে ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল।
বহু মানুষকে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরতে সহযোগিতা করেছি কিন্তু আব্বার অসুস্থতায় আমি আব্বার পাশে থাকতে পারতাম না, আজে বাজে চিন্তা মনের ভিতর ঘুরপাক খেতো। আব্বার নিথর দেহ হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখলে আমি স্থির থাকতে পারতাম না৷ হসপিটাল থেকে আব্বার নাম্বার থেকে কল আসলে কলিজা কেঁপে উঠতো, আমার। আব্বার অসুস্থতা আমার পরিবারের সকল সুখ যেন ছিনিয়ে নিয়েছিলো কিছুদিনের জন্য।
পরিবারের প্রধান কর্তা আমার আব্বার অসুস্থতার দিনগুলোতে সংসারের পুরো দ্বায়ভার বহন করছেন, আমার মা। বাজার খরচ, আব্বার ঔষধ কেনা থেকে শুরু করে সকল দ্বায়িত্বই বহন করছেন তিনি। একটু একটু করে জমানো টাকা দিয়ে কি কারিশমায় সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছেন, তা খুব কাছ থেকে দেখছি৷ আমার ইনকাম প্রচণ্ডই ক্ষুদ্র, যতটুকু পারি আমিও কিছু কন্ট্রিবিউট করি৷
আলহামদুলিল্লাহ, আব্বা এখন মোটামুটি সুস্থ, শুধু শরীরে একটু জোড় কম ৷ আশা করছি রবের দয়ায় তার সকল দূর্বলতা কেটে যাবে।