বিদেশ বিভ্রান্তি [পার্ট ১]
src
আমি স্বল্প শিক্ষিত একজন মানুষ। লেবারি, দিনমজুরি কিংবা অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে টাকা রোজগার করি। আর তা দিয়েই অতি কষ্টে আমার সংসার চলে।
আমার গ্রামের কিছু বন্ধু বাইরের বিভিন্ন দেশে থাকে। ওখানে তারা কি কাজ করে তা আমি জানিনা, তবে এদেশে তাদের পরিবারের মানুষগুলোর দিকে তাকালে, চলাচল ভালোই মনে হয়৷ মাঝে মাঝে দেখি তাদের পাঠানো টাকা দিয়ে পরিবার কতৃক জমিও কেনা হয়৷ নাম ডাক ভালোই শোনা যায় তাদের৷ তাদের এমন রাজকীয় চলাফেরা দেখে আমারও লোভ হলো বিদেশ যাওয়ার। তাই আমাদেরই এলাকার এক আদম ব্যবসায়ীর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম৷
তিনি প্রথম পরিচয়েই আমাকে ভালোই প্রলোভন দেখালেন, অনেক টাকা মাস বেতন, এসি রুমে কাজ, থাকা খাওয়ার বিভিন্ন সুবিধা আরও কতকি....। আমি বাড়িতে এসে পরিবারের সাথে কথা বল্লাম এব্যাপারে৷ কিন্তু তারা মতামত দিতে নারাজ। কোনোভাবেই যেন রাজি করানো যাচ্ছিলো না। আদম ব্যবসায়ীর শেখানো সেই বুলি আওড়াতেই পরিবারের মানুষ রাজি হলো কোনোরকমে। আমার তখন অবস্থা এমন ছিল যে, একদম হাত খালি। হাতে কোনো কাঁচা টাকা ছিলো না।
কিন্তু সামান্য কিছু আবাদি জমি ছিলো, চোখ গেল সেদিকে৷ প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিছু নগদ অর্থ চক্রবৃদ্ধি সূদে ধার করেছিলাম আর বাকি অর্থ জমি বন্ধক রেখে ম্যানেজ করলাম। আদম ব্যবসায়ীর কথা অনুযায়ী, যত টাকা খরচ করে আমি বিদেশে যাবো তা মাস সাতেকের মধ্যেই তুলে ফেলতে পারবো। তার লোভনীয় অফার আমাকে হয়তো বিমোহিত করেছিলো সেই সময়ের জন্য। যাইহোক, আমাদের দেশের বিভিন্ন দরবার ঘুরে বিভিন্ন কাগজ উদ্ধার করে এখন বিদেশ পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায়....।
আদম ব্যবসায়ী ফ্লাইটের বিভিন্ন ডেট দেন আবার ডেট মিস হয়ে যায়৷ একদিন আমাকে ফোনে বলা হলো তাড়াতাড়ি রেডি হও পরদিন ফ্লাইট। এর আগে আদম ব্যবসায়ীর সাথে সকল লেনদন ক্লিয়ার করতে হবে। আমার আরও কিছু টাকা বাকি, নানান উপায়ে টাকা ম্যানেজ করে সব টাকা বুঝিয়ে দিয়ে তারপর আমার স্বস্তি মিললো৷ সেই দিন সন্ধ্যায় আমি ঢাকা নয়া পল্টনের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিলাম।
কারণ, বিদেশে লোক পাঠানো বেশিরভাগ অফিসগুলোই সেখানে৷ আমার কাঙ্খিত অফিসও সেখানেই ছিলো। আমি সারারাত জার্নি করে খুব ভোরে গিয়ে পৌছালাম সেখানে। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে শুনলাম অফিস তখনও খোলেনি৷ তাই বাহিরেই অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষণ। সেখানে শুধু আমি একাই ছিলাম না, বিদেশে পাড়ি জমাবে এমন আরও অনেককেই সেখানে দেখতে পেলাম৷ যাইহোক, সকাল দশটায় অফিস খুললো আরও অনেকের সাথে আমিও ঢুকে পড়লাম৷
সেইযে সকাল দশটায় অফিসে ঢুকেছিলাম কাজ শেষ হতে সন্ধ্যা লেগে গিয়েছিল। সামান্য একটু কাজ করতে অতক্ষণ সময় কেনো লেগেছিল, আমি অশিক্ষিত মানুষ তাই হয়তো বুঝতে পারিনি৷ সারারাতের ঘুমজাগা, দিনে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে আমার শরীর নেতিয়ে গিয়েছিল। আমি ঠিকমতো দাঁড় হতে পারছিলাম না। তারা যদি আমার কাজটি তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ করে দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিতো তবে আমি হয়তো কোথাও গিয়ে ভালোভাবে খেয়ে একটু ঘুমাতে পারতাম।
[সব কথা এক পোস্টে লিখলে গল্পটা অনেক বড় হয়ে যাবে, যা পাঠকের মনে বিরক্তির ছাপ লাগিয়ে দিতে পারে তাই ভেবে রেখেছি, গল্পটি আমি কয়েকটি খন্ডে প্রকাশ করবো]
প্রিয় ভাই আজ দারুণ একটি বিষয় নিয়ে আপনি গল্পের মাধ্যমে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। আদোত এটি গল্প হলেও আমাদের দেশে এটি একটি বাস্তব ঘটনা। কেননা আমরা অনেকেই আদম ব্যবসায়ীর প্রলোভনে পরে অনেক ভুল করি। শেষমেস নিজের জীবন দিয়ে সেই ভুলের প্রাচিত্য করতে হয়।
ভাই আপনার গল্পের পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন।শুভ কামনা রইলো।
টাকার জন্য এই ধরনের মানুষ গল্প বেশ ভালই বলতে পারে। তবে আমার কাছে মনে হয় এই ধরনের মানুষগুলোকে যারা বিশ্বাস করে। তারাই একটা সময় ঠকে যায়। আমি নিজেও ঠকে গিয়েছিলাম, আমার হাজব্যান্ড কে বাহিরে পাঠিয়ে।
আমি ঠিক জানিনা আপনার সাথে পরবর্তীতে কি হয়েছিল। তবে অবশ্যই আপনার পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। আশা করি আপনি ঠিকঠাকভাবেই পৌঁছাতে পেরেছেন। ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য, ভালো থাকবেন।
আসলে মানুষ ভাবে বিদেশে হয়তো বা কতটা সুখ। কিন্তু যারা বিদেশে থাকে তারাই একমাত্র জানে বিদে শেষ কেমন অবস্থা। বিদেশে গিয়ে কষ্ট করে অপরিচিত টাকা বাসায় পাঠায় সেই টাকা দিয়ে পরিবার মানুষরা চলাফেরা করে।
আপনার সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।