বিদেশ বিভ্রান্তি [শেষ পর্ব]

in Incredible India2 months ago

pexels-dariabuntaria-2209529.jpgsrc

[প্রথমেই বলে রাখছি, "বিদেশ বিভ্রান্তি" শেষপর্ব বুঝতে হলে আপনাদের এর আগের পর্বগুলোতে চোখ বুলাতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে পূর্বের তিনটি পার্টের লিংক আমি নিচের অংশে জুড়ে দিয়েছি।]

অচেনা এই শহরে ওনার সান্নিধ্যে থাকলাম কিছুসময়। দেশের মানুষ, একটু-আধটু মোহাব্বত তো আমাদের উপর থাকতেই পারে। তার সহবতে কিছুসময় কাটানোর পর উনি নিজেই আমাদেরকে তাদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন, যাদের আমাদেরকে রিসিভ করার কথা ছিলো৷
আমাদের আগমনে তারা রীতিমতো ভরকে গিয়েছিলো সেদিন, খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম৷ তবুও ওনারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছিলেন৷ তাদের লোক দেখানো আতিথ্যেয়েতা আমাদের কাছে অনেক আগেই পরিষ্কার হয়েছে৷

যাইহোক, তারা আপাতত আমাদের ভরণপোষণের দায়িত্বে নিলেন৷ এটাই তো কথা ছিলো আদম ব্যবসায়ীর সাথে৷ নুন ভাত খেয়েতো জীবিকা নির্বাহ করছিলাম, কিন্তু কাজ কবে শুরু হবে তার তো কোনো নির্দিষ্টতা নেই, কেউ বলতে পারে না সে কথা। যাদের মাধ্যমে আমরা এখানে এসেছি, তাদের সাথে কাজের বিষয়ে কথা বললে তারা জানায় "কিছু জটিলতা" শেষ হলেই কাজ শুরু হবে৷ কিন্তু যারা আমাকে এই সান্ত্বনা দিয়ে সময় ক্ষেপণ করছে, এক সময় তারাই আমাকে গল্প শুনাতো "অমুকের ছেলে" বিদেশে পৌঁছেই পরদিনই কাজ পেয়েছে, প্রথম মাস থেকেই বাড়িতে টাকা পাঠানো শুরু করেছে৷ আরো নানানও গল্প, সেসব আর নাই-বা বল্লাম৷

দিন যত গড়াচ্ছে ততই জটিলতায় প্রবেশ করছি৷

pexels-nipan-chawcharernpon-8572125-6072365.jpgsrc

হাত খরচের জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে আসা অন্ধের যষ্টিও প্রায় শেষ। এখানে পানিও কিনে খেতে হয়। কি আর মাসে মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাবো, আমাকেই বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে চলতে হচ্ছে। বাড়িতে থাকা মানুষগুলো আমার পানে তাকিয়ে আছে কবে টাকা পাঠাবো, সেই টাকা দিয়ে বন্ধকি জমিগুলো খালাস করতে পারবে৷

কয়েকদিন পরপর আমাদেরকে কাজের আশ্বাস দিলেও, তা শুধু মুখে মুখেই থেকে যায়৷ এখন বাড়ি থেকে ফোন দিলেই প্রথম কথাই বলে "অমুক এসেছিল বাড়িতে" ঋণের টাকা চাইতে৷ আমি মাসে মাসে টাকাও পাঠাতে পারছি না, মানুষকে দেওয়া কথাও রাখতে পারছি না৷ আমি নিরুপমায়। আমি কেমন আছি, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না৷ তবুও বাড়ি থেকে ফোন দিলে খুব হেসে খেলেই কথা বলি৷

দিন যাচ্ছে, দুশ্চিন্তায় আমি নেতিয়ে পড়ছি, ভাঙ্গা চেহারার ভাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে৷

pexels-inzmamkhan11-1134204.jpgsrc

দীর্ঘ ছয়মাস এভাবেই কেটে গেলো৷ একটা কাজ জুটেছে, তবে সেটা করতে গিয়ে আমার বোধগম্য হলো আমার দেশের তাপমাত্রার তুলনায় এদেশের তাপমাত্রায় কাজ করা আমার জন্য প্রচন্ড জুলুম। রৌদ্রতাপে পিঠ পুড়ে যায়, আমি সহ্য করতে পারি না৷ বাড়ি ফিরে যেতে প্রচন্ড মন চায়, কিন্তু পাওনাদারদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করে, ক্যামনে ফিরবো.....? সেই অব্দি অপেক্ষা করতে হবে৷ অনেকগুলো টাকা খরচ করে যে রঙ্গিন স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম, তা শুধু স্বপ্নই থেকে গেলো৷ পূরণ হবে কিনা জানিনা...........!

পার্ট ১ঃ লিংক পার্ট ২ঃ লিংক পার্ট ৩ঃ লিংক
Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 62808.61
ETH 3464.94
USDT 1.00
SBD 2.53