যাত্রা -Journey!
ট্রেনে করে শিয়ালদা থেকে ফিরছি নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে!
যখন উঠেছিলাম বেশ ভিড় ছিল, আর সত্যি বলতে আমি ট্রেনে যাতায়াতে বিশেষ অভ্যস্ত নই!
তবে, প্রয়োজনের তাগিদে উঠতে হলে বিভিন্ন ধরনের মানুষের দৈনন্দিন সংঘর্ষের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ মেলে।
এটা কোথাও বুঝতে সাহায্য করে জীবনটা কতখানি দামী হলে, মানুষ এতটা সংঘর্ষ করতে রাজি হয়!
অনেকেই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়, কাজেই তাদের আবার হীরের চামচের ইচ্ছে হয় সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে, সে বিষয়ে যাচ্ছি না!
সমাজের মেরুদণ্ড হল, দৈনন্দিন জীবনের খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
একজন কোটিপতি হয়তো কাজের জায়গা তৈরি করতে সক্ষম কিন্তু এই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মত পরিশ্রমে সমর্থ নয়, সাথে খেটে খাওয়া মানুষ ছাড়া কোম্পানিগুলো বিকল!
পৈতৃক সম্পত্তি পেয়ে নিজেদের অনেকেই অনেক বড় মহারথী ভাবেন!
আবার কেউ কেউ বসে খেতে খেতে বড় বড় জ্ঞানের বুলি দিয়ে থাকেন!
তবে প্রকৃত অর্থে জ্ঞান সংগ্রহ করতে হলে, এই দিন আনা, দিন খাটা মানুষের সংঘর্ষের সাক্ষী হতে পারলে, অথবা তাদের জুতোয় নিজের পা গলাতে পারলে একমাত্র সংঘর্ষের প্রকৃত অর্থ বোঝা সম্ভব।
যাক, যে প্রসঙ্গে উপরিউক্ত কথাগুলো উল্লেখ করলাম, সেটা হল, দমদম পার হবার পর, ট্রেনের ভিড় খানিক কম হল, এরপর দেখলাম, একটি অল্প বয়সী মেয়ে জায়গা পেয়েছে তাই, তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে রয়েছে, এবং নিচে তাকিয়ে দেখলাম, মেয়েটি বমি করে ফেলেছে!
একটু বাদেই বুঝলাম, ছোট্ট মেয়েটি কর্কট রোগাক্রান্ত, মাথা ন্যাড়া! সম্ভবত কেমো থেরাপি চলছে!
দেখলেই বোঝা যায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মায়ের শরীরের প্রতিটি হাড় বাইরে থেকে গোনা যাবে, এমন শারীরিক গঠন।
খুবই স্বাভাবিক! একজন মা যিনি ঐ সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর পথিকৃৎ তার কোলে শুয়ে আছে তার সেই অসুস্থ সন্তান, যার জীবনের প্রতিদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অতিবাহিত হচ্ছে।
একজন মায়ের কাছে সবচেয়ে কষ্টের তার আগে, তার সন্তানের চলে যাওয়া।
সেদিন, আমি কিন্তু ঐ বমি দেখে ঘেন্না পাইনি, বরঞ্চ দুটো নারীর লড়াই থেকে নিজের ভিতরের দুর্বলতা, নিজের ভিতরের নালিশ সবাইকে বলছিলাম, দেখ্ সুনীতা দেখ্! শিখে নে, দেখে নে, নালিশের আগে একবার সমাজের এই মানুষদের লড়াই দেখে, নিজেকে উদ্বুদ্ধ কর!
এরপর দেখলাম, অন্ধ স্বামী গান গাইছে, পিছনে পঙ্গু স্ত্রী বক্স নিয়ে পিছনে পিছনে চলেছেন!
কি দুর্দান্ত লড়াই করবার অনুপ্রেরণার স্রোত এই মানুষগুলো!
অনেকেই এদের দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তবে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে এদের পর্যবেক্ষণ করি, এরা জীবনের মানে শিখতে সাহায্য করে আক্ষরিক অর্থে।
রাস্তা দিয়ে চলার সময় মোবাইলে এখন বেশিরভাগ মানুষের নজর থাকে, তাই আসে পাশের অপরিচিত মানুষের থেকে বাস্তব শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়ে ওঠে না অনেকেরই!
এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়! প্রতিনিয়ত যারা প্রতিকূলতাকে পায়ে পিষে, রক্তাক্ত হয়ে (কখনো শারীরিক ভাবে, আর বেশিরভাগ মানসিক দিক থেকে) ক্লান্ত হয়ে যান না, শেষ হাসি তাদের জন্য জমা থাকে।
যন্ত্রের ন্যায় পরিশ্রম - সকাল হোক বা রাত্রি।
যাত্রা পথে নিজ নিজ পুঁজিতে লক্ষ্য!
জীবনযাত্রা উপভোগে, তাই আজ সকলেই ব্যর্থ।
আজকের দিন তো শুধু শেখার, আগামীতে যে যেমনটা শিখে জীবনের যাত্রা পার করবে, সেই অনুযায়ী তার শেষ রচিত হবে। জীবনযাত্রা সকল যাত্রার ঊর্ধ্বে! একটি দিন আসে, একবারের জন্য!নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ নিয়ে।
একথা যারা মাথায় রেখে দৈনন্দিন সংঘর্ষে সামিল, আর কেউ তাদের সাথে থাক বা না থাক, সৃষ্টিকর্তার নজরে তারা সর্বক্ষণ থাকেন।
প্রথমে আপনাকে বলব, বাস্তব জীবনের,এত সুন্দর একটি বিষয়বস্তু নিয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য, আপনাকে ধন্যবাদ। এই পৃথিবীর বুকে, কত মানুষ কত কিছুই না করে থাকে, খাদ্যের অভাবে! কেউ করে ভিক্ষা, কেউ করে চুরি, আবার কেউ করে কাজ, আমাদের আশেপাশে এই রকম অনেক মানুষ দেখতে পাই! তাদের কষ্ট গুলো যদি মন থেকে উপলব্ধি করা যায়। হয়তো নিজের মনের নালিশ থাকবে না কখনো! আশেপাশের পরিস্থিতি থেকে আমরা অনেক কিছুই শিক্ষা প্রতিনিয়ত পেয়ে থাকি। যা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
সত্যি কারের জীবনের মানে কি?
সমাজের মেরুদণ্ড হল, দৈনন্দিন জীবনের খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
এই খেটে খাওয়া মানুষ গুলো, নিজেকে যে কোনো পরিস্থিতিতে, সামলিয়ে নিতে পারে! অপরদিকে যারা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন! তারা সত্যি কারের জীবনের মানে বোঝেনা! তাদের কাছে জীবন মানে অফুরন্ত আনন্দ ইত্যাদি।
আপনার পোস্টটি পড়ে, একটি বিষয় জানতে পারলাম। একটি মেয়ে কর্কট রোগাক্রান্ত, এবং সে মৃত্যুর সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলছে। তারপরও তার মা তাকে আগলে ধরে রাখছে, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা অপরিসীম যা ভাষা প্রকাশ করার মত না! পৃথিবীতে সবচাইতে বড় ত্যাগ স্বীকার হলো, নিজের সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ, যা একটি পিতা মাতার জন্য অত্যন্ত কষ্টের বিষয়। যে পিতা-মাতার সন্তান হারিয়েছে, সেই হয়তোবা, এই কষ্টের কথা বুঝবে। আমরা তো শুধু অনুভব করতে পারবো।
আপনার পোস্টের শেষ মুহূর্তে, আপনি কবিতার মাধ্যমে শেষ করেছেন।
এই কবিতার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রা ও তার সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন আমাদের মাঝে! যা মানবজীবনের অপ্রতিরোধ্য পরিশ্রম ও অবিরাম পথচলার প্রতীক।
এই কবিতাটি একটি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যেখানে মানুষের পরিশ্রম এবং অর্থের প্রতি আগ্রহের সাথে জীবনের অর্থ এবং বাস্তব আনন্দের! মধ্যে একটি পার্থক্য তুলে ধরেছেন আপনি। আবারো বলতে চাই; এত সুন্দর একটি বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় বিষয় আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন, আপনার জন্য সর্বদাই শুভকামনা রইল দিদি।
@mdsuhagmia আপনার মধ্যে সবচাইতে ভাল দিক হলো আপনি লেখা শুধু পড়তে হবে বলে পড়েন না! আপনি তার আক্ষরিক অর্থ বোঝার প্রয়াস করেন, যেটা আমাকে প্রতিবার অভিভূত করে!
এটাই একজন ভালো মানুষ তথা দায়িত্ববোধ দর্শায়!
এই প্ল্যাটফর্মে নিজেকে উন্নত করতে সর্বাগ্রে এই বিষয়টি অত্যাবশ্যকীয়।
আমি অন্ততঃপক্ষে অনেক কিছু এই ভাবেই অন্যের লেখা পড়ে শিখেছি।
এবার বলি আমার লেখার বিষয়বস্তুর কথা। শৈশবে যখন কেউ খুব কড়া রোদ্দুরে দাঁড় করিয়ে দেন, আর মাথার উপরে কোনো ছায়া থাকে না, ঠিক সেই সময় এই আশেপাশের মানুষগুলো জীবনযুদ্ধের প্রকৃত অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে আগামী পথ চলতে সহায়তা করে।
বিকল্প পথ, অসাধু আচরণের জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন নেই, বরঞ্চ বিপরীত পথে হাঁটতে পারাটাই আসল চ্যালেঞ্জ!
অসাধারণ উত্তর দিয়েছেন আপনি, যা পড়ে সত্যিই আমি অনুপ্রেরণা পাই! আপনার বাক্যের অর্থগুলো মাঝে-মাঝে আমি গভীরে খুঁজে বেড়াই! এত সুন্দর একটি উত্তর দেওয়ার জন্য, আপনাকে ধন্যবাদ দিদি।
Thanks @nishadi89 mam again supported me 💕
You are wwelcome dear
দিদি আপনার এই পোস্টটি এক কথায় জীবনযুদ্ধের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। আপনার প্রতিটি পর্যবেক্ষণ বাস্তবিকই মর্মস্পর্শী। ট্রেনে ভ্রমণ যেমন মানুষের নানা জীবনের সাক্ষী হতে সাহায্য করে, তেমনই আপনার মতো একজন পর্যবেক্ষকের হাত ধরে আমরা এমন কিছু কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত হলাম,যা হয়তো চোখের সামনে দেখেও এড়িয়ে যাই।
ছোট্ট মেয়েটির মায়ের সঙ্গে লড়াই, বা অন্ধ স্বামী ও পঙ্গু স্ত্রীর যন্ত্রণা এসবই আমাদের শেখায় যে, জীবনের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লড়াই চালিয়ে যাওয়াই আসল। আর আপনি যেভাবে এই সবকিছু থেকে নিজের জীবনে শিক্ষা নিতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
পোস্টের শেষ লাইনগুলো, জীবনযাত্রা সকল যাত্রার ঊর্ধ্বে এবং সৃষ্টিকর্তার নজরে তারা সর্বক্ষণ থাকেন, হৃদয় ছুঁয়ে গেল। জীবনকে যে গভীরতা দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন, তা আমাদেরও নতুন করে ভাবতে শিখায়।
ধন্যবাদ, এমন একটি জীবনের শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
Thank you 😊