যন্ত্র বিকল হলে সারাই সম্ভব, একই বিষয় মানসিকতার ক্ষেত্রে অসম্ভব।

in Incredible India6 months ago (edited)
20240104_201201_0000.png

মাঝে একদিন পোস্ট লিখতে পারিনি সেটা হয়তো কিছু সদস্য খেয়াল করেছেন। সাধারণত লেখাটা আমার ভালো লাগার পাশাপশি ভালো থাকার রসদ যোগানোর একটি মাধ্যম।

যদিও টিউটোরিয়াল ক্লাসের পরে অনেকেই পোস্ট করতে না পারার কারণটা জেনে গেছেন, তবুও বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আজকের লেখার শীর্ষক নির্বাচিত।

এনগেজমেন্ট চ্যালেঞ্জের পোস্ট লেখা শেষ হবার কিছুক্ষণ আগে থেকেই ল্যাপটপ চার্জে বসানোর কথা জানান দিচ্ছিল।

তবে, মাঝ পথে না উঠে, ভাবলাম লেখাটা শেষ করে ল্যাপটপ চার্জে বসবো।
এরপর, যখন চার্জে বসাতে গেলাম, তখন দেখলাম ল্যাপটপ চার্জ নিচ্ছে না!
আমার তো মাথায় হাত।🙆🤦

নতুন মাসের সাথে নতুন বছর শুরু, অনেক রিপোর্ট তৈরি বাকি, সাথে দৈনন্দিন লেখা সবকিছু মিলিয়ে দুঃচিন্তায় অবস্থা খারাপ।

এদিকে শীতের রাত, সাত সকালে সব দোকান বন্ধ হয়ে যাবার পূর্ণ সম্ভবনা!
এর মাঝেই মাথায় এলো, আগের বার চার্জার খারাপ হবার সময় যে দোকান থেকে সেটা সরিয়ে এনেছিলাম, তার ফোন নম্বরটা আমার মোবাইলে সেভ করা ছিল।

তাকে জানালাম বিষয়টা, কপাল ভালো বলতে হয়, উত্তর এলো, আর শুধু এলো না;
তিনি রীতিমত আমার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে লোক পাঠিয়ে দিলেন চার্জার নিয়ে যাবার জন্য।

IMG-20240102-WA0009.jpeg
IMG-20240102-WA0012.jpeg
IMG-20240102-WA0016.jpeg
IMG-20240102-WA0014.jpeg
IMG-20240102-WA0005.jpeg

তবে পরের দিন ফেরত দিতে পারবেন, সেটা জানিয়ে দিলেন। কাজেই, ওইদিন এর পরের দিন পোস্ট করা হলো না, কারণ রাত ১২ টা পার হতেই ২দিন দেখাচ্ছিল আগের লেখার বয়স।

পরের দিন টিউটোরিয়াল ক্লাস, প্রায় সন্ধ্যে হতে চললেও চার্জার এর খবর নেই, তাই আবার লোকটিকে মেসেজ পাঠালাম।

এবার ও উত্তর এলো, মেসেজের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনার ঠিকানায় নিজেই চার্জার নিয়ে আসছি।

সবে, চা খাওয়া শেষ হয়েছে, ফোন বেজে উঠলো, সাথে দোকানের নাম। ভদ্রলোক জানালেন আপনার ফ্ল্যাটের নিচে দাড়িয়ে আছি, এসে চার্জার নিয়ে যান। আগের মতই একই টাকা পারিশ্রমিক বাবদ নিয়ে, আমাকে চার্জার দিয়ে বললেন, আমি দাঁড়িয়ে আছি, আপনি ঘরে গিয়ে দেখে নিন চার্জার কাজ করছে কিনা, আমাকে ফোন করে জানান তারপর আমি যাবো।

IMG-20240102-WA0007.jpeg

খানিকটা লজ্জাই পেলাম, একা থাকি ঘরে অপরিচিত ব্যক্তিটিকে ডাকতে সংকোচ বোধ হচ্ছিল, কাজেই অগত্যা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ঘরে এসে দেখলাম চার্জার কাজ করছে।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, ফোন করে জানালাম, উনি আমার উত্তর পেয়ে বিদায় নিলেন রাস্তা থেকেই।

এখানে, এখনও পর্যন্ত আপনাদের একটি বিকল যন্ত্র, তৎসহ সেটা সারাইয়ের বিস্তারিত বিবরণ জানালাম।

কিন্তু উপরিউক্ত ঘটনাটি, যন্ত্রের সাথে একটি সুস্থ মানসিকতার মানুষের উদাহরণ শেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

অন্ততপক্ষে, আমার ক্ষেত্রে তো সেটাই আমি অনুভব করেছি।
একটা অচেনা অজানা মানুষ যে, আমাকে এই নিয়ে দুবার ভীষণ রকমের বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।

এখানে কাজের জায়গায়, ফোন এবং ল্যাপটপের বা ডেস্কটপ এর গুরুত্ব কাউকে বোঝানোর নেই।
সব কাজটাই চলে এর উপরে।

সম্পর্ক আসলে নাম ছাড়াও হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিচিত মানুষদের চাইতে অপরিচিত মানুষ অনেক বেশি মানবিকতার উদাহরণ রেখে যায়।

যন্ত্র আর মানসিকতার ক্ষেত্রে একটাই পার্থক্য, আর সেটা হলো বিকল যন্ত্র সারাই সম্ভব, তবে বিকল মানসিকতা নয়।

IMG_20240104_235621.jpg

সম্পর্ক সেটা রক্তের হোক বা রক্ত বহির্ভূত;
পরিচিত হোক বা অপরিচিত সেটা সবসময় হওয়া উচিত বাতাসের মত।

বাতাস যেমন সর্বক্ষণ আমাদের আসে পাশেই থাকে, বৃষ্টির মতো ফুরিয়ে যায় না;
সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সেটাই হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে আমার মনে হয়।

চেনা হোক অথবা অচেনা, আমাদের মানসিকতা আমাদেরকে আর সকলের থেকে পৃথক করে।

সেই কারণে, কেউ যদি এক মুহূর্তের জন্য আমাদের যেকোনো রকম উপকারে আসে, তাকে মনে রাখা এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আমাদের উন্নত মানসিকতার পরিচয় বহন করে।

কাজের জায়গা হোক বা বাস্তব জীবন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় আমাদের ব্যবহারে, আমাদের সহযোগিতায়।

আমি এখানে এত মুখোশধারী মানুষ দেখছি যে, খানিক বিরক্তিতে আমার দিন কাটছে। সাহস থাকলে সামনে প্রশ্ন করা উচিত, কাউকে নালিশ জানিয়ে অন্যের ক্ষতিসাধন করাটা সেই মানুষ না দেখলেও, যার দেখার তিনি দেখছেন।

আর যারা সেই একান্তে নালিশের ভিত্তিতে কার্য্য সম্পাদন সহ, সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন;
যোগ্যতার নিরিখে নয়, একপেশে কথার ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, তারা কি আদেও বিচারকের পদের যোগ্য?

আরো একটি বিষয় হলো, নিয়ম তৈরির করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সেই দায়িত্ব যথাযত পালিত হচ্ছে কিনা সেটা দেখার ও প্রয়োজনীয়তা আছে।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখি নিয়ম মুষ্টিমেয় মানুষের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে বা তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়, এটাকে আমি অন্ততপক্ষে
স্বৈরাচারীতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বলে আমি মনে করি।

এটাও একটি নিম্ন মানসিকতার উদাহরণ। যাইহোক অবশেষে যেটা বলার সেটা হলো, পৃথিবীটা গোল।

কাজেই, সময়ের মত পরিস্থিতি এক থাকে না কারোর ক্ষেত্রেই।

I9Ws6mn5yoT8JYcTf1.gif

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1R3nByagojBFK9X9VyMfrNoTUUqjGSvWpqdmMgU31CjnNeqLcAbmdrcdhwjg36qCE8hXx2eEL9gcF5xj7.gif

Sort:  

Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.

Loading...

দোকানদার ভদ্রলোককে যথেষ্ট ভালো বলতে হয়। উনি যেরকম ভাবে দায়িত্ব নিয়ে শীতের রাতে ল্যাপটপের চার্জার পাল্টানোর জন্য লোক পাঠালেন এবং তারপর নিজে এসে নতুন চার্জার দিয়ে গেলেন, এমনকি চার্জারটি ঠিক মতো চলছে কিনা সেটা জানার জন্য অপেক্ষাও করেছিলেন, ওনাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারা যায় না। এটা আপনি একদম সঠিক কথা বলেছেন যে যন্ত্র বিকল হলে তা সারানো সম্ভব কিন্তু বিকল বা অসুস্থ মানসিকতার লোককে পাল্টানো সম্ভব নয়।

 6 months ago 

একেবারেই সত্যি কথা, এই ভান করা মানুষের ভিড়ে সুস্থ্য মানসিকতার মানুষের সন্ধান পাওয়া সত্যি বিরল! তবে সংখ্যায় মুষ্টিমেয় হলেও এদের জন্যই পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকে আছে আজও, নইলে অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত। এরা আসলে অর্থের চাইতে মনের ধনী তাই আর সকলের থেকে এরা পৃথক।

I never knew indians too gets their hands on their heads when things go wrong; I thought it something personal to we Yorubas.

On the topic, I also got my laptop damaged and I have not been able to repair it. I know how it pinches especially when you have just one and most of your work depends on it.

 6 months ago 

Hahaha! We are also human being and sometimes situation comes all of a sudden that bound us to get hands on head. Why don't you join our community and share your posts my dear friend.

I already joined!

 6 months ago 

সর্বদাই দেখে এসেছি আপনি যতই অসুস্থ থাকেন না কেন সময়ের কাজ সময় মতোই করে থাকেন। যেহেতু এটা ল্যাপটপের একটা সমস্যা হয়েছে তাই আপনি করতে গিয়ে একটু একটা দিন বিলম্ব হয়েছে। আমার মনে হয় না এতে কারো কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে। যদি নিজের শরীর অসুস্থ থাকতো তাও কিন্তু আপনি কাজ সম্পন্ন করতেন তাই যন্ত্রের সমস্যা থাকার কারণে আগে সেটা সারাই করতে হবে। তারপরে কাজ করতে হবে। একটা মানুষ আপনাকে দ্বিতীয়বার আবারও সাহায্য করলো। বিষয়টা জানতে পেরে বেশ ভালো লাগলো।

আমাদের এখানে তো একটা কথা আছে আপনের থেকে পর ভালো পরের থেকে জঙ্গল ভালো। অর্থাৎ আপন মানুষগুলোর চাইতেও কিন্তু দূরের মানুষগুলো আমাদের একটু বেশি খেয়াল রাখে। এই জিনিসটা আমি বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছি। যাইহোক আপনার ল্যাপটপের চার্জার ঠিক হয়ে গেছে আপনার শরীরটা ভালো আছে। এটা জানতে পেরেই বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা টপিক আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। এবং বিষয়টা আমাদেরকে অবগত করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58559.96
ETH 3156.41
USDT 1.00
SBD 2.44