পৃথিবীর সবচাইতে মূল্যবান অনুভূতি ভালোবাসা।
ঈশ্বর সৃষ্ট পৃথিবীর একাধিক সুন্দর জিনিসের মধ্যে একটি অমূল্য সম্পদ তিনি প্রতিটি প্রানী জগৎকে দিয়েছেন, আর সেটা হলো অনুভূতি।
এই অনুভুতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো, ভালোবাসা।
ভেবে দেখুন, আমাদের বাস্তব জীবনের সংঘর্ষের সাথে যদি এই অনুভূতি সৃষ্টিকর্তা আমাদের না দিতেন, তাহলে সেই সংঘর্ষের আসলেই কোনো মানে থাকতো কি?
আমরা কেবলমাত্র নিজেরা ভালো খাবো, ভালো পড়বো এর জন্যই তো উপার্জন করি না! ভালো রাখবো প্রিয় মানুষদের সেই কারণেও উপার্জন করে থাকি।
এখন এই প্রয়োজনের মধ্যে অনেকেই পড়েন, এবং সম্পর্ক গুলোই আসলে আমাদের বাঁচার রসদ যোগায়। তাদের ভালোবাসা দিয়ে, তাদের আমাদের প্রতি স্নেহ, যত্ন কোথাও না কোথাও আমাদের এই সংঘর্ষের শক্তি যোগায়।
মায়া, মমতা, শ্রদ্ধা সবটাই কিন্তু ভালোবাসার এক্ একটি পরিভাষা।
প্রতিদিন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পরে, প্রিয় মানুষের সেবা যত্ন সেই ভালোবাসার বাহ্যিক প্রকাশ।
মান, অভিমানের মাঝেও প্রিয় মানুষের পছন্দের খাবার তৈরি, আবার মান ভাঙ্গাতে শত ব্যস্ততার মাঝে দু'একবার ফোন করে খোঁজ নেওয়া,;
অফিস ফেরত, কি গো, কি খাবে? জানতে চাওয়া, এগুলোই তো আমাদের আবদ্ধ করে রাখে একে অপরের সাথে।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে, আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখে দুশ্চিন্তায় পথ চেয়ে থাকা, ফোনে না পেলে সেই দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া।
বাড়ী ফেরার পরে সেই দুশ্চিন্তা, রাগে পরিণত হওয়া, আর উত্তরে তোমার প্রিয় খাবার আনতে দেরি হয়ে গেল, ফোনে চার্জ ছিলনা, আজ রাতে আর রান্নার প্রয়োজন নেই;
এটা শুনে নিজের উপরে নিজের রাগ হওয়া, শুধু শুধু নালিশের ঝুলি নিয়ে বসে থাকার কারণে।
একসাথে সারাদিনের অভিজ্ঞতা আদান প্রদানের মাধ্যমে নৈশভোজ, তারপর খানিকক্ষণ সন্তানের সাথে খুনসুটি করে একটা দিনের অবসান।
এগুলো আমাদের জীবনে আছে বলে বোধহয়, আজও আমরা অনেক জীবনযুদ্ধ জয় করতে পারি।
পাশে থাকা মানুষগুলো হারিয়ে গেলে, জীবন বড্ডো অসহায় হয়ে যায়।
প্রকৃত ভালোবাসায় কখনো ঘেন্না কাজ করে না, তাই ইচ্ছে করে একটু বেশি করে খাবার দেওয়া, যাতে অবশিষ্ট এঁটো খাবার খেয়ে ভালোবাসা বাড়ানো যায়।
ছেলেবেলা থেকে শোনা যে, এঁটো খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে।
সন্তানের মল হোক বা স্বামীর, আবার অপরপক্ষে স্ত্রীর, বা বৃদ্ধ পিতা মাতার;
যখন পরিষ্কার করতে সংকোচ বোধ হয় না, সেটাকে বলে ভালোবাসা।
শেষ জীবন পর্যন্ত একসাথে পথ চলার অঙ্গীকারে, ভরসা, বিশ্বাস অব্যাহত রাখার নাম ভালোবাসা।
একটা সত্যি ঘটনা আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো, ভালোবাসা শব্দের সঠিক মানে বোঝাতে।
আমার এক বন্ধু তখন খুবই ছোট, তার এক জ্যাঠা মশাইয়ের সন্তান তাদের বাড়িতে থেকেই পোর্ট ট্রাষ্ট এ কর্মরত ছিলেন।
দুই ভাইয়ের বয়েসের বিস্তর পার্থক্য, কাকা মশাইয়ের বাড়িতেই তার থাকা এবং চাকরি করা।
তখন আমার বন্ধুর বয়স এক্ অথবা দেড় বছরের হবে।
যাইহোক, একদিন অফিসের খাবার খেয়ে বেরোবেন, এমন সময় কাকিমার কোলে থাকা আমার বন্ধু সেই খারারের থালায় মূত্র ত্যাগ করে ফেলে।
এরপর, কাকিমা, স্বাভাবিক ভাবেই থালা পরিবর্তন করে নতুন করে খাবার আনতে উদ্ধত হন।
কিন্তু সেই দাদা, অবলীলায় থালার কোনে কিছুটা ভাত সরিয়ে ওই থালাতেই বাকি থাকা ভাত খেয়ে অফিস যান।
গল্পটা আমার বন্ধু শুনেছিলেন তার মায়ের কাছ থেকে, তাই এখন সেই দাদা যখন পেটের সমস্যায় সারা ঘর মলত্যাগ করে ফেলেছিলেন, আজকে সেই বড়ো হয়ে যাওয়া ছোট্ট ভাই, ঘেন্না ছাড়াই সেটা পরিষ্কার করেন হাসিমুখে।
এটাই ভালোবাসা, যেখানে বোধহয় কোনো লেনদেনের হিসেব বা অঙ্ক চলে না।
তাই আজকে আমি এসেছি আবারও একটি কবিতা নিয়ে, নাম রেখেছি:-
|
---|
অনেক কথার মাঝে
হটাৎ থমকে যাওয়া;
অপরপ্রান্তের কণ্ঠস্বরে
হারানো কিছু খুঁজে পাওয়া।
বারংবার সেই কণ্ঠস্বর,
শোনার ইচ্ছে;
কোথাও নিজের শূন্যতা
একটু একটু ভরিয়ে দিচ্ছে।
মায়াবী সেই কণ্ঠস্বরে,
নিজের নাম শোনা;
একসাথে সুদীর্ঘ পথ
পেরোনোর স্বপ্ন বোনা।
নালিশ যত, মান, অভিমান
সব ভাঙ্গানোর আশা;
সময়ের সাথে এসব কিছু
বাঁধছে মনে বাসা,
এরই নাম কি তবে
আকর্ষণ, আর ভালোবাসা?
না বলা কথা বোঝা,
না বলা অভিযোগ;
চোখে হারানো প্রতি ক্ষণে
একেই কি বলে প্রেমরোগ?
ভাবলে যার কথা,
ঠোঁটের কোণে আসে হাসি;
ইচ্ছে করে যাকে বলতে,
শুধু তোমায় ভালোবাসি!
বন্ধ আঁখির আড়ালে, যার মুখ ভাসে;
ভাবলেই তার কথা,
এক চিলতে হাসি, এমনি চলে আসে!
অব্যাক্ত থাক অনুভূতি,
কিছু কথা থাক্ বাকি;
কিছু জমা মেঘ আর অব্যাক্ত কথা
কেবল, মনের মাঝেই জমিয়ে রাখি।
-সুনীতা দত্ত। |
---|
জানিনা আপনাদের কেমন লাগবে, তবে আমার কাছে ভালোবাসার যে সংজ্ঞা, সেটাই তুলে ধরবার একটা ছোট্ট প্রয়াস।
দিদি কবিতার প্রতিটা লাইন যেন নতুন প্রেমের অনুভূতি প্রকাশের মত, যতবার পড়ছি ততই যেন প্রথম প্রেমে পড়ার কথা কথাগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছিল। যেমন আপনার লেখা কবিতার চারটা লাইন।
ভাবলে যার কথা,
ঠোঁটের কোণে আসে হাসি;
ইচ্ছে করে যাকে বলতে,
শুধু তোমায় ভালোবাসি!
আপনার নিজের লেখা কবিতা গুলো অসাধারণ যতবার পড়ি ততই যেন পড়তে মনে চায়। আপনার জন্য দোয়া রইল যেন আরও সুন্দর সুন্দর কবিতা আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করতে পারেন। ভালো থাকবেন।
প্রেম রোগ মায়ার বাঁধন
শ্রষ্টার শ্রেষ্ট দান,
এ রোগের শ্রেষ্ট ঔষধ
ভাঙ্গাতে হয় মান।
চোখ বুজিলে আঁধার হৃদয়
ভরিয়ে উঠে শুখে,
ভালবাসার মধুর আলিঙ্গন
ভাসে চোখে মুখে।
ভালবাসার সুন্দর কথন
কবিতায় আছে ভরা,
ভাল ভাল ভালবাসায়
মুখরিত আজ ধরা।
@mrnazrul