অনুভূতি।
Edited by Canva ( সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ছবি ) |
---|
অনেক বছর আগে 'Grave of the fireflies ' দেখার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর দ্বিতীয়বার আমি কোনদিন এটা দেখবো না। কারন দ্বিতীয়বার দেখার মতো বা বলা যায় ওই রকম কস্টকর দৃশ্যের মুখোমুখি হওয়ার কোন সাহস আমার ছিলো না।
আর কোনদিন দেখিও নাই যদিও অনেকবারই সামনে অনেক ছবি এসে গেছে, সেটাকে এড়াতে পারি নাই। কিন্তু বাস্তবে যে এই দৃশ্য আমাকে দেখতে হবে কোনদিন কল্পনাও করি নাই। ছেলেটাকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশভ্যানে ঢোকাচ্ছে আর সে বার বার বলতেছে যে, আমার ছোট্ট একটা বোন আছে। দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ছবি |
---|
ধানমন্ডির একটা ছেলেকে নিতে দেখলাম যে আমারই ছেলের বয়সী হবে।ওর বলা প্লিজ, প্লিজ কানে ভাসতেছে।
ছোট ছেলে এসে বললো, আম্মু জিওকে জিমের সামনে থেকে ধরে নিয়ে গেছে। বড় ছেলে এসে বললো, আমার সাথে পড়ে একজন আইসিইউতে আছে তিন দিন ধরে। ওর চিকিৎসার অনেক খরচ।হেল্প লাগবে সবার।এসব শুনতে শুনতে হাঁপিয়ে পরেছি।ভয় লাগে না জানি আরো কিছু শুনতে হয়।
এমনিতেই কদিন থেকেই মুগ্ধ নামের ছেলেটার "পানি লাগবে, পানি " এই কথাটা কানে ভাসতেছিলো। মৃত্যুর মিনিট পনেরোর আগে ওর ভিরের মাঝে পানি বিলানোর এই ছবিটা সারাক্ষণই মাথায় ঘুরপাক খায়।
শুধু মুগ্ধ একাই না, লাল শাড়ি পরা সেই ৪/৫ বছরের মেয়েটা, সাইকেলে বসা হাসি মুখের চার বছরের ছেলেটার কথা যার গুলি চোখে লেগে মাথা ভেদ করে বের হয়ে গেছে , সামির নামের সেই ১১ বছরের কিশোর এর কথা যে টিয়ার গ্যাসের তীব্র ঝাঁজ থেকে বাঁচতে জানালা বন্ধ করতে গিয়ে গুলি খেয়েছে, ভয় পেয়ে ছাদের কার্নিশ ধরে ঝুলে থাকা সেই কিশোর যাকে পুলিশ খুজে বের করে গুলি করে কিংবা ছাদের উপর খেলা করা সেই শিশুটার কথা যাকে তার বাবা বাইরে হইচই শুনে ছাদের ওপর যেয়ে কোলে করে আনতে গিয়ে তাকিয়ে দেখেছিলো তার মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে.. অথচ বাবা মায়ের কোল একটা শিশুর জন্য পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা সেখানেও সে বাঁচতে পারে নাই।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ছবি |
---|
এসব জেনে নিজেদেরকে খানিকটা সৌভাগ্যবানও মনে হয়। কারন এসব ঘটনা যখন ঘটেছিলো বিশেষ করে ১৮ই জুলাই যেদিন অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিলো সেদিন বিকেল থেকে ৮.৩০ মিনিট পর্যন্ত আমরা ছাদের ওপর ছিলাম।অনেক ভিডিও ও ছবি তুলেছি।এখন ভাবি আমাদেরও তো হেলিকপ্টার থেকে করা গুলি লাগতে পারতো।
এমন অনেক এর কথাই সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খায়। কেমন যেন একটা অস্থিরতা, ভীতি, মানসিক অবসাদ, ঘৃনা ইত্যাদি সব একসাথে কাজ করে।
ATN নিউজ এর একটা ক্যাপশনের দিকে চোখ পরেছিলো আজকে , সেটা অনেকটা এমন ছিলো যে, পুলিশ অফিসার অন্য আরেকজন পুলিশ এর কর্মকর্তাকে বলতেছেন যে, একজন মানুষকে মারতে কটা বুলেট লাগে। প্রশ্নটা আমার মাঝেও এই কদিনে আমার মাঝেও অনেকবারই এসেছে বুলেটে ঝাজড়া হয়ে যাওয়া ছেলেগুলোর ছবি দেখে। এ-কারণেই কি হয়েছে জানার জন্য ভেতরে ঢুকলাম।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ছবি |
---|
সেখানে জানতে পারলাম এক পুলিশ অফিসার তার ছেলের ছেলের খোজ করতেছিলেন বিভিন্ন জায়গাতে। না পেয়ে হসপিটালেও খুজে বেড়াচ্ছিলেন। এক সাংবাদিক তাকে মর্গে গিয়ে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেয়ায় তিনি সেখানেই ছুটে যান। কি হয় দেখার জন্য সেই সাংবাদিকও যান।তখন তিনি মর্গে তার ছেলের খোঁজ পান।
এই ছেলে কোটা বিরোধীদের পক্ষে যোগ দিতে বের হয়ে এসেছিলো এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। পুলিশ অফিসার কম্পিত হাতে মুখের কাপড় তুলে রক্তে ভেজা মুখ দেখতে পান। এই দৃশ্য দেখে তার স্ত্রী লুটিয়ে পরেন কান্নায়। এসময় ফোন বেজে উঠে সেই পুলিশ সদস্যের। পুলিশ সদস্য কান্নায় ভেঙে পরে অপর প্রান্তে থাকা কাউকে প্রশ্ন করছিলেন যে, স্যার ..একটা মানুষকে মারতে কটা বুলেট লাগে।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ছবি |
---|
এটা শোনতেছিলাম আর ভাবতেছিলাম যে যে এই কথাগুলো পুলিশ সদস্য বলছিলেন না বরং একজন পিতা বলছিলো। কারণ সন্তান এর লাশের সামনে সব পিতাই এক।
আমিন নামের সেই ছেলেটার বাবার কথা মনে পরছে।যার গাড়িতে এক আহত ছেলেকে হসপিটালে নেয়ার জন্য তোলে । যে গাড়িতেই মারা যায়। নামানোর সময় সেই সেই গাড়ির চালক সাহায্যের জন্য এগিয়ে গেলে দেখতে পান সেই মৃত ছেলেটা তারই ছেলে।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ছবি |
---|
চোখে ভিজে যাচ্ছে আর্মি কোরের সেনা সদস্যের সতেরো বছরের ছেলেটার স্ট্যাটাস দেখে। যে লিখেছিলো, "আমি যদি মারা যাই তাহলে কেউ আম্মাকে বলিস তার ছেলে তাকে অনেক ভালোবাসতো।"
আমি জানি না আমি কি লিখবো। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে আমার চোখ এর সামনের সব অক্ষর।