' ঢাকা হোটেল'কলকাতার বুকে যেন এক টুকরো ঢাকা।
রাতের বেলা ঢাকা হোটেলে আমরা খাওয়া শেষ করে বের হয়ে যাবো আর তখনই হন্তদন্ত হয়ে এক তরুণ ঢুকে বললো যে, আমি নোয়াখালী থেকে এসেছি কিন্তু আমার কাছে খাওয়ার টাকাও নেই। তখন হোটেল মালিক এর স্ত্রী পাশেই একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন যে, আপনি ব্যাগগুলো ওইখানে রেখে হাত মুখ ধুয়ে আসেন।
এই অবস্থায় আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে আসলাম। এই হোটেল মালিক আমার শশুর বাড়ির দিক থেকে ভাসুর হন।
পরের দিন সকালে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে, কি হয়েছিলো গতকাল ওই ছেলের।তখন ভাবি বললো যে, ওই ছেলে বোকামী করে শুধু কার্ডের ভরসায় এসেছে কিন্তু গতকাল কোন কারনে ওর কার্ড কাজ করে নাই।
যার কারনে ওই ছেলের কাছে কোন টাকা ছিলো না আর টাকা না থাকায় কেন হোটেলেও উঠতে পারে নাই । পরে কি হয়েছে জানতে চাইলে বললো যে, এজন্য রাতে ভাই ওকে বাসায় নিয়ে রেখেছিলেন। সকালে কার্ড কাজ করতেছে তাই এখন সমস্যা মিটে গেছে।
এটা শুনে অবাক হই নাই কারন এই ক'দিনে বেশ কয়েকজনকেই দেখেছি কেউ এসে বলেছেন এখন টাকা নেই কিংবা জিনিসপত্র গুলো একটু রেখে যাই এরকম মানুষদেরকে সাহায্য করতে। ভাবির মুখে শুনেছি যে, অনেক বাংলাদেশীকেই সমস্যায় টাকা দিয়েও সাহায্য করেন এই বলে যে, দেশে গিয়ে পাঠিয়ে দিয়েন।অনেক সময় বাসায়ও নিয়ে যান।
দেশের বাইরে গেলে যেকোন মানুষই খানিকটা অসহায় হয়ে পরেন সেটা যে দেশই হোক না কেন।নিজের দেশে যে জোর নিয়ে চলা যায় সেটা ভিন্ন কোন দেশে সম্ভব না। তখন যদি কেউ এরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হতেই হয়।
এই হোটেলের নাম ঢাকা হোটেল। যা কলকাতা নিউমার্কেট এর পাশেই মারকুইস স্ট্রিট এর যেখানে বাংলাদেশ থেকে বাস আসা যাওয়া করে সেখানেই অবস্থিত।এতদিন শুধু ওদের খাবারের হোটেলই ছিলো কিন্তু আমি আসার আগ দিয়ে শুনে আসলাম যে, এক মাস এর মাঝেই থাকার হোটেলও ওপেন করতেছে। আমাকে বলে দিয়েছেন যে, পরের বার যেন ঢাকা হোটেলেই উঠি।
এই হোটেলে একদমই ঘরোয়া পরিবেশে খাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।আর আমি যে কদিন ছিলাম এর মাঝে প্রায় প্রতি দিনই ওদের কিচেনে ঢুকেছি এবং ভির দেখলে নিজের হাতে খাবার এনে খেয়েছি। তখনই দেখেছি রান্নাঘর এর পরিবেশও ভালো।ভাই -ভাবি অনেক সময় নিজেরাও রান্না করেন। সবকিছু বললাম কিন্তু খাবার এর স্বাদ এর কথা বলা হয় নাই এখনো।
খাবার যে, খুবই সুস্বাদু সেটা বলবো না কিন্তু ভালো এবং এই খরচে আশেপাশের হোটেলগুলোর তুলনায় ঘরোয়া পরিবেশে অনেক বেশি পরিস্কার - পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাওয়ার জন্য একটা চমৎকার জায়গা বলা যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো যে কোন সমস্যায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় এরা।
দূরে গিয়ে যখন নিজের এলাকার নাম দেখি তখন অনেক ভালো লাগে, যেমন ঢাকাতে সিরাজগঞ্জ হোটেল নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানে গেলে আমাদের সিরাজগঞ্জের কথা মনে পড়ে, কলকাতায় ঢাকা হোটেল দেখে ভালো লাগলো, হোটেলের মালিক মানুষের খুব উপকার করে, মানুষের উপকার করা মহৎ কাজ, ধন্যবাদ এই সুন্দর পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
বিদেশে যখন আমরা দেশের লোক দেখতে পাই তখন সত্যিই অনেক ভালো লাগে । নিজের ভেতর একটা আত্মবিশ্বাস বেড়ে ওঠে যে, নিজের দেশের ভাই । আপনার আত্মীয়ার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ।তারা দেশের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম রেখেছিল ’ঢাকা হোটেল’। সত্যি এখনো ভালো মানুষ এই পৃথিবীতে আছে যার জন্য পৃথিবীটা এখনো অনেক সুন্দর। আপনার পরিচিত ভাবি অনেক ভালো মনের একজন মানুষ। আপনাদের জন্য শুভকামনা রইল।