১৫ই সেপ্টেম্বর, বৃষ্টিভেজা একটি দিন।
ঘুম থেকে উঠেই দ্রুত নাস্তা বানানোর কাজে হাত লাগলাম। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। বড়ো ছেলের ক্লাস আছে আজকে। কিন্তু ছেলেকে দেখলাম সকাল থেকেই কিছুটা ঘ্যানঘ্যান করার মুডে আছে। বুঝতে পারতেছি যে বৃষ্টির কারণেই তার এই অবস্থা। এই রকম বৃষ্টিতে ধানমন্ডি ২৭ এ পামি জমে আবার বসুন্ধরা এলাকাতেও পানি জমে। ২৭ এর পানি বৃষ্টি থামার পরে চলে যায় কিন্তু বসুন্ধরার পানি মারাত্মক। ও এমনিতে ক্লাস মিস দেয় না কিন্তু আজকে তার ক্লাস না করার ইচ্ছে তাই আমিই বললাম আজকে বাসায় থাকতে।
আমার কোথায় তার মুড্ চেঞ্জ হতে দেখলাম মুহূর্তে মাঝে। কিন্তু আমার হাবির ব্যাঙ্ক কামাই দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই সে নাস্তা করে দ্রুত বের হয়ে গেলো। ইদানিং রাস্তায় মারাত্মক জ্যাম পরে। আগে সবকিছু একটা সিস্টেমের মাঝে চলতো কিন্তু ইদানিং সব কিছুই এলোমেলো। অবশ্য গণঅভভুত্থানের পুরো পৃথিবী জুড়েই মোটামুটি এমন চিত্রই দেখা যায়। কারন পুরো সিস্টেম ভেঙে পরে। এজন্যই যেকোনও দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে ছিল না বলেই আজকে এই অবস্থা। ছিল না বলাটা অবশ্য ভুল। আসলে থাকতে দেয়া হয় নাই।।
ঐদিকে আমিও নাস্তা করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। আজকে আমাকে একটা কাজে ধামরাই এর রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হৰে। ভাই আগেই বলেছিলো দশটার মাঝে প্রস্তুত থাকতে। এর মাঝে বড়ো ছেলে বললো যে ,বড়ো মামার সাথে মুশফাক ভাইয়া যাচ্ছে ,তাহলে আমিও যাই। মুশফাক ওর মামাতো ভাই হয় সম্পর্কে। এটা শুনে ছোট ছেলেও পেছনে লাগলো। দুইজনের আগ্রহ দেখে ওদের নিয়ে যেতে রাজি হলাম। আমার বড়ো ভাইয়ের যেতে কিছুটা লেট্ হবে বলে আমি আমার ছোট ভাইয়ের সাথেই বের হলাম।
আমরা যখন বের হলাম তখন বৃষ্টি ছিল না কিন্তু মিনিট পাঁচেক যেতেই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মাঝেই আমরা এগিয়ে চললাম ধামরাই এর দিকে। বৃষ্টির মাঝে জার্নি করতে ভালোই লাগে কিন্তু গাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে ভিজে গেলাম অনেকটাই।
আমাদের সিএনজি পাম্পে হুজুরের দোকান আছে ,যেখানে বিরিয়ানি ও খিচুড়ি বিক্রি হয়। বড়ো ছেলে বাসা থেকে বের হবার সময় থেকেই বলেছে যে, আজকে হুজুরের বিরিয়ানি খাবো। ঐদিকে বড়ো ভাইয়ের ধামরাই পৌঁছাতে অনেক লেট্ হয়ে গেলো।
আমরা সিএনজি পাম্প স্টেশন এই বসে রইলাম আর বড়ো ভাই বাচ্চাদের নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে গেলো। কথা হলো যে ঐখানেই কোনো এক খাবার হোটেলে আমরা খেয়ে নিবো। কিন্তু বৃষ্টি কাকে বলে ! আবারো নেমে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে একদম কাকভেজা হয়ে গেলাম। এর মাঝে প্রচন্ড রকমের ভিড়। কাজ শেষ করে আরেকদফা ভিজলাম গাড়ি পর্যন্ত আসতে গিয়ে।
গাড়িতে যখন বসলাম তখন মনে হলো আমরা সবাই গোসল করে আসলাম মাত্র। এরই মাঝে বড়ো ছেলেকে আর ছোট ভাইকে দেখতে পেলাম না। শুনলাম যে ওরা কোন এক গার্মেন্টসে যাবে ,তার পর সেখান থেকে গুলশান যাবে। আমরা হুজুরের খিচুড়ি খাওয়ার সময় ওদেরকে কল দিয়ে জানতে পারলাম ওরা তখনও কিছু খাই নাই।
সন্ধ্যার আগে দিয়ে আমরা ঢাকার দিকে রওনা দিলাম। তখনও আমাদের পোশাক ভেজা। কিছুটা আসার পরে বড়ো ছেলে জানালো যে রাস্তায় প্রচন্ড রকমের পানি জমে যাওয়ার কারণে ওরাও ওদের সব প্রোগ্রাম বাদ দিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দিয়েছে। শুনে খুশিই হলাম। তারপরও বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে আটটার মতো বেজে গেলো।
বৃষ্টির দিনে কোথাও যাওয়া সত্যিই খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। সকালের কাজকর্ম সেরে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বেশ অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেমন অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। আপনার সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।