ডলফিন দেখতে একদিন বিকেলে ।
ফোনের গ্যালারিতে ছবি ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ করেই এই ছবিটার দিকে নজর গেল ।আর সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এই লাইন মনে পরে গেল।
আমার যেতে ইচ্ছে করে নদীটির ওই পারে যেথায় ধারে ধারে বাঁশের খোঁটায় ডিঙ্গি নৌকা বাঁধা সারে সারে।
মানুষের ব্রেইন জিনিসটা আসলেই খুব অদ্ভুত। এমনিতে আমাকে পিটালেও হয়তো ওই মূহুর্তে এই লাইন মনে করতে পারতাম না কিন্তু ছবি দেখার সাথে সাথে এই ভুলে যাওয়া লাইন মনে পরে গেলো। সেই সাথে এই দিনের স্মৃতিও চলে আসলো মনের মাঝে।
কয়েক মাস আগে এক প্রচন্ড রকম গরমের বিকেলে আমরা এখানে গিয়েছিলাম। সেদিন আমাদের কোথাও যাওয়ার আসলে কোনো প্ল্যানই ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার ভাগ্নে কল দিয়ে বললো যে আসবেন নাকি ডলফিন দেখতে।
ওর কথা শুনে আমি হেসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম কারণ আমাদের দেশে ডলফিন দেখা যায় এটা আমি জীবনে কখনো শুনেছি বলে মনে পরে না। আর ও যে জায়গার কথা বলেছে সেটা ঢাকার ভেতরেই বলা চলে। সেখানে তো ডলফিন নামক কিছু থাকার প্রশ্নই নেই।
পরে ও জানালো যে মিঠা পানির ডলফিন মানে শুশুক দেখতে পাওয়া যায়। একে আমরা ছোট বেলাতে 'শিশু ' নাম ডাকতে শুনতাম। শেষবার কবে দেখেছি মনে পরে না। তবে স্মৃতিতে যে শুশুকের কথা মনে পরে সেটা ধলেশ্বরী নদীতে নানু বাড়ি থেকে নৌকায় করে ফেরার সময় দেখেছিলাম হয়তো।
যার কারণে ওর প্রস্তাব শুনে বলা যায় লাফিয়ে উঠেছিলাম। ছেলেদের যাওয়ার তেমন কোনো ইচ্ছে না থাকলেও ডলফিন দেখানোর লোভ দেখিয়ে রাজি করেছিলাম। যদিও ওরাও আমার মতোই বিশ্বাস করে নাই।
জায়গাটার নাম এই মুহুতে আমার মনে নাই। তবে ধানমন্ডি থেকে খুব একটা দূরে না। এখানে তিনটা নদী মিলিত হয়েছে। যার কারণে হয়তোবা গভীরতা বেশি। বহু বছর পরে মুগ্ধ হয়ে দেখলাম কিছুক্ষন পর পর শুশুকরা লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে ,দেখে মনে হচ্ছিলো যে নদীর মাঝে ছাতার ভেসে উঠছে।
একটা অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ। নদীর পাশে খানিকটা খোলা জায়গা ,সেখানে ফটবল খেলছে কিছু ছেলে মিলে। একদম নদীর গা ঘেঁষে একটা রাস্তা চলে গেছে ,হয়তবা সেটা নদীর বাঁধ হবে।
নদীর পাশেই দেখলাম কেউ একজন গাছের মাঝে হ্যামক বেঁধে শুয়ে আছেনআমরা সন্ধ্যার পরে চলে আসলাম। আমরা নদীর একদম পাশেই আমাদের গাড়ি রেখেছিলাম যার কারণে একটু লেট করেই এসেছি। আমরা যখন আসি তখন চারপাশে নীরবতা নেমে এসেছে।। ক্যাম্পিং করার আদর্শ একটা জায়গা হবে এটা।
সবচাইতে বড়ো কথা এখনো মানুষের খুব একটা নজরে পরে নাই বিশেষ করে ইউটিউবারদের। যার কারণে এখনো কিছুটা নিরবতা আছে। তবে সেটা বোধকরি খুব বেশিদিন থাকবে না। কারন ফেরার পথে দেখলাম দোকান হচ্ছে এছাড়া ভ্যানে করে পুরি ,সিঙ্গারা জাতীয় জিনিসপত্রও বিক্রি হচ্ছে।এখন আবার গেলেই হয়তো সেই নিরিবিলি পরিবেশ আর পাবোনা।
মনে পরে ,যখন প্রথমবার দিয়াবাড়ি গিয়েছিলাম তখন আমরা আর একটা কাপল ছাড়া আর কেউ ছিল না আশেপাশে। এর কিছুদিন পরেই দেখলাম আস্তে আস্তে মানুষ বেড়ে যাচ্ছে। আর এখনতো দিয়াবাড়ি যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি মানুষের অত্যাচারে। এখানেও হয়তো এমনি হবে। তবে যায়-ই হোক না কেন ,আশা করি ডলফিনগুলো বেঁচে থাকবে আর ওদের বংশবৃদ্ধি হবে।
Camera | iPhone 14 |
---|---|
Photographer | @sayeedasultana |
Location | Dhaka,Bangladesh |
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আগে আমিও বুঝতাম এগুলা ডলফিন মাছ, আমি অনেক ছোট সময় দেখেছি। আপনার পোস্টটি পড়ে এই শিশুর কথা আবার মনে পড়ে গেল, আমি শুনেছি,আগে মানুষ নদীতে চলাচল সময় শরীর ছুঁয়ে পয়সা ফেলতো নদীতে এই কথাটা কতটা সত্য আমার জানা নেই। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক আনন্দ উপভোগ করছি। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন,আল্লাহ হাফেজ।
নদীতে পয়সা ফেলার কথা অবশ্য আমার জানা ছিলো না। আপনার কমেন্ট এর মাধ্যমেই প্রথমবার জামতে পারলাম। আসলে একেক জায়গায় একেক জিনিস প্রচলিত ছিল।
এত চমৎকার করে আমার পোস্টে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবসময়।
খুব কাছ থেকে ডলফিন দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ৷ এমন সৌভাগ্য খুব কম সংখ্যক মানুষেরই হয়৷
আসলে একটা মানুষের অনেক কিছুই মনে থাকে না কিন্তু কিছু কিছু জিনিস বা কিছু কিছু ছবি মানুষের মনকে কথা বলতে সাহায্য করে আপনার হয়তোবা অন্য সময় এই লাইনগুলো মনে পড়তো না কিন্তু যখন আপনি এই ছবিটা দেখেছেন কথাগুলো আপনা আপনি আপনার মধ্যে চলে আসলো এটা একেবারেই অদ্ভুত ওই যে কথায় বলে না ছবি কথা বলে আপনার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে।
আমাদের এখানে যেহেতু নদী নেই নদীর পাড়ে ঘুরতে যাওয়াটা আমাদের জন্য একেবারে স্বপ্নের মতন তবে আমাদের কাছ থেকে অনেকটা দূরে একটা নদী আছে সেটা অনেক ছোট অনেক আগে গিয়েছিলাম বিয়ের আগে এর পরে আবার যাওয়া হয়নি আপনারা ওখানে গিয়েছিলেন গরমের সময় ডলফিন দেখার জন্য জায়গাটা আসলে সত্যিই সুন্দর ধন্যবাদ আপনাদের বিকেল বেলার মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।