রহস্যময় অবচেতন মন যার অস্তিত্ব থেকেও নেই আমাদের কাছে । -১
কদিন আগে আমার ছোট ছেলের ব্লাড টেস্ট করতে গিয়ে ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। অথচ আগেও অনেকবারই ওর ব্লাড টেস্ট করা হয়েছে কিন্তু এমন হয় ঘটনা ঘটে নাই। ডাক্তার এর কারণ বলে দিয়েছেনা। ওর অবচেতন মনে জন্ম নেয়া ভয় থেকে এই সমস্যা। অথচ ওর চেতন মন এই ভয় পায় না। শুধু ওর মাঝেই না ,আমার আশেপাশের অনেকের মাঝেই এই রকম সমস্যা দেখেছি।
আমার এক ভাবির ক্লষ্টোফোবিয়া আছে। তাকে আমি অনেক বছর ধরে খুব কাছ থেকেই দেখতেছি। আগে তার মাঝে এমন কোনো সমস্যা ছিল না কিন্তু দিনকে দিন তার মাঝে এই সমস্যা বাড়তেছে। বেশ কয়েক বছর আগে সে একবার কলকাতার মেট্রোতে উঠে একদম স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু এর পর সে চিৎকার ও তার জামাকাপড় টেনে খোলার চেষ্টা করে। তার এই সমস্যার কথা সাথে থাকা লোকজনের জানা থাকায় তারা আশেপাশের লোকজনকে একটু সরে যেতে বলে যাতে তার পাশে একটু খোলামেলা পরিবেশ তৈরী হয়। এরপর সে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠে।
শুধু তাই না ,তার নিজের বাসায় লিফট আছে প্রথম থেকেই কিন্তু সে ইদানিং এক লিফটে একা উঠতে ভয় পান। কিছুদিন আগে এক হসপিটালে তার সাথে গিয়েছিলাম। লিফটের দরজা কোনো কারণে খুলতে কিছুটা সময় লেগেছিলো। এতে করে সে লিফটের কান্না করতেছিলো আর সাথে কাঁপতেছিলো। অথচ লিফটের ভেতরে আমরা সবাই স্বাভাবিক ছিলাম।
আমার ছেলের মতো তার এই ভয়ও তার অবচেতন মনের কাজ। তবে এই অবচেতন মন যে শুধু ভয়েরই জন্ম দেয় এমনও না সে প্রতিনিয়ত অনেক কাজই করে থাকে। বিজ্ঞানীরা আজও যার পুরোপুরি রহস্যভেদ করতে পারেন নাই ,যার কারণে তারা প্রতিনিয়ত গবেষণা চালিয়েই যাচ্ছেন।
মানুষের মন নিয়ে আমার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। মনের মতো রহস্যময় জিনিস আর কিছু হয় না। তাই আজকে মানুষের মন নিয়ে আবারো ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করলাম কিছুটা সময় । এতে করে আমি যেটুকু জানতে পেরেছি সেটার সারমর্ম আজকে সবার সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।
Roger Sperry নামক একজন গবেষক আবিস্কার করেন যে মস্তিষ্কের ডান এবং বাম অংশ উভয়েরই নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে। তিনি গবেষণা করে বের করেন যে মস্তিষ্কের বাম অংশ শৃঙ্খলা এবং যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক চিন্তায় ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে ডান অংশ মুক্ত এবং সৃষ্টিশীল চিন্তায় সহায়তা করে।
আমাদের ব্রেইনের এই ডানপাশের অংশটি হলো আমাদের সচেতন মন আর বাম দিকের অংশটিই হলো আমাদের অবচেতন মন। যেখান থেকে এই ধরণের অমুলূক ভাবে উৎপত্তি ঘটে থাকে।
আমরা যদিও অনুভব করতে পারি না যে ,আমাদের মাঝে এই রকম কোনো অবচেতন মনের অস্তিত্ব আছে কিন্তু আমাদের মনের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই এই অবচতন মন এর চিন্তা কিংবা কাজ-কারবার যাই-ই বলি না কেন।
তবে আজকে এটা জেনে কিছুটা কিছুটা অবাকই হলাম যে ,আমাদের মনের ৯৫% হলো আমাদের অবচেতন মন আর বাকি ৫% হলো সচেতন মন।
আমরা আমাদের মনের মাত্র ৫ ভাগ কে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারি বাকি অংশটাকে আমরা সচেতন ভাবে কাজে লাগাতে পারি না বললেই চলে। অথচ তার বিশাল ক্ষমতা। আমরা যদি মনের এই অংশকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারতাম তাহলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যেত আমাদের কাছে।
আমাদের এই অবচেতন মন এক অদ্ভুত জিনিস। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন কথা শুনি বা বলি। এসব কথার মাঝে সত্যি মিথ্যার প্রভেদ করতে পারি কিন্তু আমাদের অবচেতন মনের কাছে সব কিছুই সত্যি।
প্রতিদিনের শোনা কথা আমরা ভুলে যাই কিন্তু আমাদের অবচেতন মন কিছুই ভুলে না ,সে সব কিছু মনে রাখে। কিংবা আমাদের মনে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের জন্ম হয় কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। আবার একটা সময় এসব প্রশ্ন ভুলেও যাই কিন্তু আমাদের অবচেতন মন কিছুই ভুলে না। সে এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াতেই থাকে।