এক অদ্ভুত সময়।
Edited by Canva |
---|
এক অদ্ভুত সময় কাটাচ্ছি আমরা।একদিকে চলছে গুজব সৃস্টিকারীদের নিত্য নতুন সব গুজব।যেগুলোর মাঝ থেকে আসল খবর বের করে আানা যায় না এমন না কিন্তু খানিকটা সময় লাগে।একেক জন একেক ধরনের মতামত জাহির করছেন।
সত্যি বলতে আমি লিখতে পারছি না কয়েকদিন থেকেই। মনোযোগই দিতে পারি না।সারাদিন লিখতে পারি নাই। রাত ১২ টার পরে লেখা শুরু করতে না করতেই কই থেকে যেন একটা গুলির শব্দ পেলাম।কে করলো কে জানে। কারাগার থেকে প্রায় ৫০০এর মতো আসামি বের হয়ে গেছে এই তান্ডবের সুযোগে।
থানাগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার কারনে এদের হাতে অস্ত্রও আছে। এই অপরাধীরা মিশে গেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। যদিও আজকে দেখলাম পুলিশরা কাজে যোগদান করা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছে সরকার কাজে যোগাদান করার জন্য।
গতকাল বাসা থেকে বের হয়েছিলাম একটা কাজে।বাসায় ফেরার পথে দেখলাম ছাত্র-ছাএীরা একটা ওষুধ সরবরাহকারী গাড়িকে থামিয়ে চেক করতেছে। দেখে খানিকটা বিরক্ত হয়েছিলাম ওদের বাড়াবাড়ি দেখে।
কিন্তু বাসায় আসার পরে নিউজ দেখে উল্টো ওদের ধন্যবাদ দিতে মন চাইলো।ওদের সন্দেহ হওয়ায় এক গাড়ি চেক করে বিপুল পরিমানে টাকা উদ্ধার করেছে আবার এক ওষুধ সরবরাহকারী গাড়ি থামিয়ে গাড়ি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেসাবাদ করায় সে একেকবার একেক কথা বলায় ওদের সন্দেহ বেড়ে যায়। গাড়ি ভর্তি বাংলাদেশ সরকার এর গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছে। আবার এক গাড়ি থেকে বিপুল পরিমানে টাকা উদ্ধার করেছে।বুঝতে পারছি পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক হতে আরো খানিকটা সময় লাগবে।
তবে এত কিছুর মাঝে গতকাল বাড়ি ফিরে আসার সময় ছোট ছোট স্কুলের ছেলে-মেয়েগুলোর দিকে আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিলাম। কি প্রানবন্তভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ এর অভাবে যে ভয়াবহ রকমের জ্যাম লাগতো সেটা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করেছে। যদিও আজকে আর স্কুলের ছেলেমেয়ে ছিলো না কারন ওদের স্কুল খুলে গেছে। আজকে থেকে আইডি কার্ড ছাড়া কেউ রাস্তায় থাকতে পারবে না।
ওদের আঁকা গ্রাফিতিগুলো নজর কেড়ে নিচ্ছিলো আমার। সবই যে খুব সুন্দর হচ্ছে এমন না কারন ওরা পেশাদার কোন শিল্পী না।কিছু ছবি নিয়ে মানুষ দেখলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসাহাসিও করতেছে। কিন্তু ওদের এই ছবি আকার চেষ্টার মাঝে যে আন্তরিকতা আর ভালোবাসা সেটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। নিজেদেরকে উজাড় করে দিয়ে ওরা এই কাজগুলোকে করছে দেশকে ভালোবেসে।১৩/১৪ বছর বয়সী বাচ্চাগুলোর মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম এখনো কোন ধরনের কুটিলতা স্পর্শ করে নাই ওদেরকে। দেবশিশু হয়তো ওদেরকেই বলা যায়।
এক অদ্ভুত নিয়মে দেশ চালাচ্ছে ওরা। হয়তো কারো কাছে লাইসেন্স পেলো না তাহলে তাকে শাস্তি হিসেবে ১০ মিনিট ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কাউকে ছাড় দিচ্ছে না ওরা। ধানমন্ডির এক রাস্তার ছবিতে দেখলাম বরকে দিয়ে পর্যন্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করাচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া (চোরকে খাওয়ানো হচ্ছে ) |
---|
একজায়গায় দেখলাম ওরা চোর ধরে তাকে কোন মারধরও করে নাই আবার পুলিশের কাছেও দেয় নাই। বরং তাকে দিয়ে নাচিয়েছে মার মাঝে মাঝে কানে ধরিয়ে উঠ বস করিয়েছে। সাথে মাঝে মাঝে নিজেরাও নাচে যোগদান করেছে। চোরের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে যে আর কোনদিন সে চুরি করবে না।এরপর চোরকে মোরগ পোলাও খাইয়ে বিদায় করে দিয়েছে। ওদের কথা হলো মানুষকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া |
---|
আবার হয়তো কোথাও চাঁদাবাজকে পেলো তাকে বেধে রেখে মাথার উপর চাঁদাবাজ লিখে রেখেছে কিংবা তাদেরকে দিয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়াচ্ছে।এক কথায় মানুষ যা কোনদিন চিন্তা করে নাই সেটাই করতেছে ওরা। কিন্তু মানুষ ওদের ওপর খুশি।
নজরুল ইসলাম এর কবিতা মনে যাচ্ছিলো ওদের দেখে,
ঊষার দুয়ারে হানি’ আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল।
নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশ্মশান,
আমরা দানিব নতুন প্রাণ
বাহুতে নবীন বল!
আমার ছেলের স্কুলের দেয়ালে ওদের আঁকা |
---|