ভালোবাসা।
বেশ কয়েকদিন আগে আমাদের দেশের একজন প্রসিদ্ধ নারী উদ্যোক্তা রুবায়েত ফাতিমা তনির একটা লেখা পরে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। উনার স্বামীর সাথে উনার বয়সের পার্থক্য অনেক। যার কারণে সোশ্যাল মিডিয়াতে কটাক্ষের সম্মুখীন হতেন সবসময়ই। কিন্তু এতে তাদের মাঝে ভালোবাসার কোনো পরিবর্তন হয় নাই।তার স্বামী গত ৮ই অক্টোবর থেকে লাইফ সাপোর্টে আছেন ব্যাংককের একটি হসপিটালে। মাত্র ৫% বাঁচার সম্ভবনা আছে জানার পরও তিনি তাকে সুস্থ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছেন ।
তার লেখায় পড়লাম যে ,তনি প্রায়ই ইউরিন ইনফেকশনের শিকার হন রাতের বেলাতে। তার সময় দেশে থাকা অবস্থায় শেষবার যখন এই সমস্যার সম্মুখীন হন তখন তিনি ব্যাথায় চিৎকার করছিলেন আর উনার স্বামী তখনা নিজেই ড্রাইভ করে তার জন্য ওষুধ কিনতে যান। কিন্তু রাতের বেলাতে যদিও সব ফার্মেসীই খোলা থাকার কথা কিন্তু অনেক সময়ই বন্ধ থাকে। যার কারণে বেশ খানিকটা লেট্ করেই তিনি ওষুধ নিয়ে বাসায় পৌঁছেন।
এরপরে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে লাইফ সাপোর্টে আছেন। এরই মাঝে দিনকয়েক আগে তনি আবারো ইউরিন ইনফেকশনের শিকার হন রাতের বেলা। পরিচিত কাউকে ওষুধ আনতে দিয়ে কি মনে করে তার ওষুধ রাখার ড্রয়ারে হাত দিয়ে দেখেন সেখানে তার জন্য তার স্বামীর কেনা অনেকগুলি ওষুধ রয়ে গেছে।তনির জন্য তার স্বামী তার ভালোবাসার উপহার রেখে গেছেন।
সত্যি বলতে আমি যখন এই এই লেখাটা পড়তেছিলাম তখন আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতেছিলো আর আমি ভাবতেছিলাম ভালোবাসা জিনিসটা আসলে কি।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া |
---|
মাঝে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেছে। এরই মাঝে গতকাল কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুর খবর চোখে পরলো। তার কবিতা অনেকবারই মুগ্ধ হয়ে পড়েছি কিন্তু তার ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। মাঝে মাঝে দেখেছি নিঃসঙ্গতার কবি হেলাল হাফিজ। কিন্তু কিভাবে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই নাই কখনোই।
আজকে তার সম্পর্কে পরে জানতে পারলাম যে তিনি স্কুল জীবনে হেলেন নামে এক মেয়ের প্রেমে পরেছিলেন। কিন্তু হেলেনের পিতা কোনো দরিদ্র স্কুল শিক্ষকের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না তাই অন্য জায়গাতে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন।
কিন্তু হেলেন এতে সুখী হতে পারেন নাই। কবির লেখা কবিতার সব জায়গাতে নিজেকেই দেখতে পান। পরবতীতে হেলেন ধীরে ধীরে বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হন। আর কবিও কোনোদিন বিয়ে করেন নাই।
তার পরিবার বিয়ের কথা বললে তিনি বলতেন ওই মেয়ের মাঝে তিনি তার মাকে দেখতে পান। শেষ জীবনে কবি এক হোস্টেলের রুমে এক থাকতেন। গতকাল তিনি নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান এবং তাকে দরজা ভেঙে বের করা হয়।
গতকাল রাত থেকে আবারো সেই পুরোনো প্রশ্নটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে ,ভালোবাসা আসলে কি ?
সত্যি বলতে ভালোবাসার তেমন কোনো সংজ্ঞা নেই। যার জন্ম মূলত আমাদের মস্তিষ্কে।একে দেখা কিংবা ছোয়াও যাই না শুধুমাত্র অনুভব করা যায়। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ, মমতা ও টান থেকেই মূলত জন্ম। এটা দেশ ,কাল ,স্থান ও পাত্রভেদে সবজায়গাতেই হতে পারে।তবে শুধুমাত্র যে মানুষের প্রতিই এই ভালোবাসা জন্মাবে তেমনও না। গাছ ,আকাশ ,সমুদ্র সব কিছুর প্রতিই ভালোবাসা জন্মাতে পারে।
বেশ কিছুদিন আগে ভালোবাসার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতে পড়েছিলাম যে ,মানুষের মাঝে থাকা স্বার্থপর জীনই মূলত এই ভালোবাসার জন্ম দেয়। বিশেষ করে নিজ সন্তান কিংবা নিজের বংশধরের প্রতি। মানুষের জীন জানে যে , এই মানুষগুলোর মাঝেই আমাদের জীন বেঁচে থাকবে। তাই নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এত ভালোবাসার উৎপত্তি।
কিন্তু সবজায়গাতে তো আর এই জিনের খেলা চলে না। যেমন , আজকেই কবি হেলাল হাফিজের প্রসঙ্গে পড়তেছিলাম যে ,তার মৃত্যুর খবর জানাতে গিয়ে একজন সাংবাদিক ওপর একজন সাংবাদিককে লিখেছেন যে ,মানুষের মৃত্যুর পরে কান্নার জন্যও তো একটা পরিবারের প্রয়োজন হয়। এটা পড়তেছিলাম আর ভাবতেছিলাম যে আসলেই কি কান্নার জন্য সবসময় পরিবারের প্রয়োজন হয়। কবির জন্য আজকে তার সব পাঠকরা কান্না করছে। এই কান্নার পানি হয়তো চোখে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু মন কাদঁতেছে তার প্রতি ভালোবাসা থেকে ।