গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। -2
Edited by Canva |
---|
গ্রামের বাড়িতে ইদানীং গেলে কেমন জানি কিছুটা অচেনা লাগে। একপাশে ডুপ্লেক্স করতেছে এক দেবর। আবার আমার ছোট দেবর টিনের দোতলা ভাঙার প্ল্যান করতেছে। তাই কেমন জানি একটা খারাপ লাগাও এসে ঘিরে ধরে।
মাঝে মাঝেই আমার গ্রামে আসা হয় কিন্তু বাড়ির পেছন দিকটা যাওয়া হয় না অনেকদিন ধরেই। তাই এবার বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পেছনে গেলাম। আমাদের বাড়ির একদম পেছন দিয়ে পদ্মা যদি থেকে আসা একটা খাল বয়ে গেছে ,খাল হলেও বেশ চওড়া। বর্ষার সময় বেশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে । মানুষের বাড়ি ঘরও ভেঙে নিয়ে গেছে অনেক সময়।
তবে আমার শশুর বাড়ির পেছনে একটা পুরোনো গাবগাছ আছে। এই গাছের কারণেই এখনো কোনো ধরণের ক্ষতি হয় নাই।
এই গাছের শেকড় অনেকটা ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের শেকড়ের মতো মাটির উপর দিয়ে উঠে রয়েছে। এই গাছের অনেক বয়স। আমার শাশুড়ির বিয়ে হয়েছিল আট বছর বয়সে। সে নাকি বিয়ের পর থেকে এমনি দেখেছে এই গাছকে।
Edited by Canva |
---|
চীরসবুজ এই গাছকে ঘিরে নানা ধরণের ভুতের গল্প প্রচলিত রয়েছে সারা গ্রাম জুড়েই যার কারণে এই গাছকে সবাই চিনে। এই গাছে নাকি ২টা ভুত থাকেন। তবে ইদানিং তারা আছেন কিনা এটা নিয়ে অনেকেই যথেষ্ট সন্দিহান। কারো মতে তারা আছেন আবার কারও মতে তারা নাও থাকে পারেন। কিন্তু ভয় সবাই পায়।
এখনো কেউ এই গাছের নিচে একা একা কেউ ভোরবেলা ,ভরদুপুর ও সন্ধাবেলাতে আসে না। শুনেছি আমাদের জেনারেশনের আগে এই বাড়িতে আসা সব বৌদেরকেই তারা যথেষ্ট বিরক্ত করেছেন। এছাড়া আমার শশুরের ১২ বছর বয়সী এক ভাইয়ের মৃত্যুর জন্যও তাদেরকেই দোষারোপ করা হয়।
সে এক দুপুরবেলাতে গোসল করতে গিয়েছিলো এই গাছের নিচে। এরপর একদিন পরে তার লাশ পাওয়া যায় খানিকটা দূরে। অথচ সে এমনিতে নাকি ভালো সাঁতার জানতেন। সত্যি মিথ্যা যাই হোক ভয় সবাই পায় এমনকি আমার হাসবেন্ডও । যদিও মুখে স্বীকার করে না। কিন্তু তার আচরণে টের পেয়েছি। এতো গল্প শুনে শুনে আমার নিজেরও কেমন জানি গা ছমছমে একটা অনুভূতি হয় এই গাছের দিকে তাকালে।
Edited by Canva |
---|
একবার দোতলার উপরে রাতেরবেলা ঘুমাতে গিয়েছি। জানালা দিয়ে তাকালেই গাছটাকে দেখা যায়। আমি এমনিই আমার ছেলেদেরকে বলতেছিলাম যে ,এই বাড়ির সব বৌকেই ভুত ধরেছে। আমার হাবি চুপিচুপি শুয়ে ছিল আগে থেকেই। তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে বড়োবড়ো চোখ করে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর আমার ছেলেকে বললো যে ,জানালাটা বন্ধ করে দে।
যায় হোক আজকে ছেলেকে নিয়ে দুপুবেলাতেই সেই বিখ্যাত গাছের নিচে গিয়েছিলাম। তবে আমাদের আশেপাশে লোকজন না থাকলেও খালের ঐপারে লোকজন ছিল। এখন অবশ্য খাল শুকিয়ে গেছে। তারপর ও কেউ কেউ গোছল করতেছিলো আবার কেউবা কাপড় ধুচ্ছিলো।
আমি আর আমার ছেলে বেশ কিছুটা সময় খাল পারে কাটিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকলাম।
এর কিছুটা সময় পরে আমরা সবাই দুপুরের খাবার খেলাম। এরই মাঝে আমার মেঝো ভাসুরও এসে হাজির। উনি যে আসবেন এটা কারোরই জানা ছিল না। এরপর শুরু হলো সবার আড্ডা দেয়া।
ঐদিকে বাসা থেকে বের হবার আগে আমার হাবি আমাদেরকে বলে এনেছে যে ,আজকে খাওয়া শেষ করে সে আমাদেরকে নিয়ে পদ্মাপারে বেড়াতে যাবে । তখনই আমার ছেলে বলেছে যে ,দেখো তুমি বাবা জয় পাড়াতে যেয়ে পুরোপুরি ভুলে যাবে এই কথা। আমিও এটা জানতাম তারপরও মনের কোথাও একটু আশা ছিল যে হয়তো যাওয়া হবে। সেই আশায় গুড়ে বালি। অবশ্য সবার সাথে সময় কাটাতেও ভালোই লেগেছে।
বাড়ি থেকে বের হতে হতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আড়িয়াল বিলের উপর দিয়ে আসার সময় অদ্ভুত সুন্দর লাগতেছিলো চারপাশটা। পথে একজায়গাতে নেমে আমি আর আমার ছেলে ফুচকা খেলাম।
ধানমন্ডিতে ঢোকার পরে রাতের খাবারের জন্য ষ্টার কাবাব থেকে শিক কাবাব আর পরোটা নিয়ে বাসায় ঢুকলাম।
Camera | iPhone 14 |
---|---|
Photographer | @sayeedasultana |
Location | Dhaka,Bangladesh |
একটা সময় গ্রাম মানেই মাটির বাড়ি, সবুজে ঘেরা চারপাশ, মাঠে বাচ্চাদের খেলার দৃশ্য দেখা যেত। স্ময়ের বিবর্তনে কাচা বাড়ি গুলো পাকা হচ্ছে, আপনার ওখানে আরো এক ধাপ এগিয়ে ডুপ্লেক্স ও হচ্ছে।
শহরে জীবনে ভূতের গল্প তেমন শোনা যায় না, যতটা গ্রামে প্রচলিত। সবার গ্রামেই এমন দুই একটা গাছ রয়েছে।
ধন্যবাদ আপনার গ্রামে কাটানো মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য।